অনেকদিন আগের কথা, তখন সেটা ছিল উনিশ শ একাত্তর সাল। এই দেশে তখন পাকিস্তানী মিলিটারি কিলবিল কিলবিল করতো, তাদের পিছনে পিছনে থাকতো রাজাকার বাহিনী। এই দুই দল মিলে দেশের মানুষ মেরে, অত্যাচার করে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সবকিছু শেষ করে দিচ্ছিল। তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে এই দেশের চাষী, মজুর, জেলে আর ছাত্ররা মিলে তৈরি করেছিল মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানী মিলিটারির ছিল ভয়ংকর ভয়ংকর সব অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশি কিছু ছিল না, কিন্তু তাদের বুকের ভিতর ছিল সাহস আর ছিল দেশের জন্যে ভালবাসা।।
বঙ্গবন্ধুর জীবনের ক্যানভাস বহু রঙে রঙিন। জীবন ও জগতের সব ছবি সেখানে প্রতিফলিত। এই সুপরিসর মোজাইকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের নাগপাশ থেকে মুক্ত হওয়ার আন্দোলন আছে, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত হয়েছে, পাকিস্তানের শোষণ-শাসন যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে-ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নে স্বাধীনতার ঘোষণা আছে এবং সবশেষে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশে সুখী ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় রয়েছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বিষাদ, উদারতা ও সংকীর্ণতা, লোভ ও স্বার্থত্যাগ, বন্ধুত্ব ও বৈরিতা, আনুগত্য ও বিশ্বাসঘাতকতা, নৈরাজ্য ও আশাবাদ, এক কথায় মানুষের জীবনের সব দিক তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন। একজীবনে এমন বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জনের দৃষ্টান্ত খুব বেশি নেই। এই অতুলনীয় অভিজ্ঞতা তাঁর জীবনকে দিয়েছে এপিকের বিশালতা। আধুনিক কালের এই এপিকে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সগর্বে উজ্জীন জয়ের পতাকা। বিজয়ের স্থপতি হিসেবে তিনি জীবদ্দশাতেই হয়ে গিয়েছেন কিংবদন্তির নায়ক। মৃত্যুর পর তাঁর জীবন ইতিহাসের ঊর্ধ্বে উঠে রূপান্তরিত হয়েছে রূপকথার কাহিনিতে। সেই অবিস্মরণীয় কাহিনি নিয়ে লেখার শেষ নেই, কখনো হবে না। খ্যাতিমান কথাশিল্পী হাসনাত আবদুল হাইয়ের বারোটি গল্পের এই অনবদ্য সংকলনে প্রতিফলিত হয়েছে ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর জীবন, তাঁর সময় ও সমকালীন সমাজের নানা ছবি।
একদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শাসন, অন্যদিকে একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠা। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন, ঊনসত্তরে গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। শিকল ছিঁড়ে জন্ম নিল নতুন জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ। কিন্তু জন্মলগ্নেই দেশটি পড়ে গেল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে। তারুণ্যের স্বপ্ন, আকাশছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা এবং সনাতন ধ্যানধারণার সঙ্গে বিরোধ জন্ম দিল সংঘাতময় রাজনীতির। এটি ওই সময়ের একটি বয়ান। কৈশোর-তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে লেখক ওই সময়টিকে দেখেছেন, উজানসেÊাতে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর দেখা, শোনা ও জানা ঘটনা ও মানুষের কথা। কালো অক্ষরে এঁকেছেন জীবনের গল্প।
দেশের ভেতরে ও বিশ্বজুড়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটেছিল অসংখ্য ঘটনা। পক্ষে-বিপক্ষে ভূমিকা রেখেছিল অগণিত মানুষ। প্রতিটি তারিখ ধরে ধরে সেসব ঘটনা এ বইয়ে সংকলনবদ্ধ করা হয়েছে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদিনের ঘটনা-অভিধান। গবেষক ও কৌতূহলী পাঠকের হাতের নাগালে রাখার বই।
বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদিবাসীরাও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার, নারী মুক্তিযোদ্ধার বিপুল সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এর ইতিহাস অনেকটাই উপেক্ষিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে দেশবাসী তেমন করে জানেনই না। এই অনালোকিত অন্ধকার জগতে আলো ফেলে ইতিহাসের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছেন গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাসমনস্ক করতে এবং আমাদের ইতিহাসের দায় থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হবে পরিশ্রমী গবেষণায় লেখা বাংলাদেশের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা' গ্রন্থটি।