"১৯৭১ পেছনে ফিরে দেখা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ '১৯৭১ পেছনে ফিরে দেখা' বইটির নামে একাত্তর থাকলেও এখানে উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটনাবলি। রয়েছে পাকিস্তান সরকারের এদেশ এবং এদেশের মানুষের প্রতি শাসন, শোষণ, বিভিন্ন কূটকৌশলের বর্ণনা। এ প্রজন্ম যেভাবে বেড়ে উঠছে, এতে লেখক আশঙ্কা করছেন হয়তো কয়েক শ বছর পর তাদের মাঝে দেশপ্রেমের বিষয়টাই থাকবে না। এমনই কয়েক শ বছর পরে এক কঙ্কালের সন্ধান মেলে, মাংস লেগে থাকায় কঙ্কাল না বলে একে ফসিল বলা হয়েছে। এমনি সময়ের এক কিশোর, যে না-কি দেশকে নিয়ে ভাবে, কাগজে ছাপা বই পড়ে। তখনকার সময়ের অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সে জানতে পারে, কেন এদেশের মানুষ পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে '৭১ সালে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল; নির্যাতিত হয়েছিল নিজ ভাষার জন্যে, সেই ভাষা নিয়েও এখন টানাপোড়েন চলছে। সে আরও জেনেছে, হাজার হাজার বছরের পেছনের ইতিহাস-গৌড়, পুন্ড্র ও বরেন্দ্রর কথা। পারিবারিক সংরক্ষণে রাখা কাগজে ছাপা বই নিয়ে সে পড়তে বসে যায় তা জানবার জন্য। সেখানে দুই কিশোরী সামিরা ও বকুল। জেনে নেয় এদেশের মানুষ কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। তারা জানে প্রীতিলতা নামের ইংরেজ আমলের এক বিপ্লবী নারীর জীবনকথা, তখনকার বিপ্লবীদের অনেকের নাম। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী নজরুলের কথা, যিনি জন্মেই দেখেছেন পরাধীন ভারত। সেই ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি বাকরুদ্ধ ও অসুস্থ। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশ। এসব চিত্র আমরা পাব এ বইয়ে। বইটি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, সবারই মনের ক্ষুধা মিটাবে।
পাকিস্তানি সৈন্যরা বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে শেখ মুজিবকে। নিয়ে যাচ্ছে অজানার উদ্দেশে। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে দেয়াল টপকে বেগম মুজিব আশ্রয় নিয়েছেন পাশের বাড়িতে। হত্যাকাণ্ড চলেছে বাংলাজুড়ে। প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বাঙালি সৈন্য, পুলিশ, ইপিআর, আনসার আর ছাত্রজনতা। শেখ মুজিবকে নেওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে, গোপন সামরিক আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার আয়োজন চলছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হলো প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিল ভারতের মাটিতে। মুক্তিবাহিনী গঠিত হলো। মুজিবনগর সরকারের বিরুদ্ধে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সারা দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছে। পারমাণবিক অস্ত্রবাহী মার্কিন সপ্তম নৌবহর রওনা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনী এগিয়ে চলেছে ঢাকা অভিমুখে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও যুদ্ধ এক অনিঃশেষ মহাকাব্য। আনিসুল হকের উপন্যাসধারা যারা ভোর এনেছিল-এর ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব রক্তে আঁকা ভোর সেই মহাকাব্যিক বিশালতা ধরার প্রয়াস।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনীর বিশ্বস্ত অনুলিপি। রচয়িতা নিজেই এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী - ১ নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে তিনি তাঁর সেক্টরে দীর্ঘ ন'মাস সেই রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। 'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' লেখকের মূল গ্রন্থ এ টেল অব মিলিয়নস" এর অনুবাদ,এ টেল অব মিলিয়নস প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালে। পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ এবং এর বাংলায় অনুদিত 'লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে' একই সাথে প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। মুক্তিযুদ্ধের এই মূল্যবান গ্রন্থটিতে রয়েছে সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধের উদ্ভব, বিকাশ, হতাশা, বেদনা, আনন্দ আর বিজয়ের সত্যনিষ্ঠ অবিস্মরণীয় ধারা বিবরণী। এ গ্রন্থে বর্ণিত আছে কিভাবে একটি শান্তিপ্রিয় জাতি যুগ যুগ ধরে নিষ্পেষিত, শোষিত ও বঞ্চিত হয়ে শেষ পর্যন্ত এক ও অভিন্ন রূপে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৃশংস ও বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ইস্পাত-কঠিন বন্ধন থেকে ছিনিয়ে এনেছিল প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। গ্রন্থাকার মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা অস্পষ্ট দিকগুলো ভাস্বর করে তুলেছেন।, নির্ভয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। তিনি বর্ণনার সাথে ঘটনার যথার্থতা ও সত্যতা সম্পর্কেও অতি সচেতন বলে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভুলতার মূল্যায়নে উত্তীর্ণ এই গ্রন্থ। তাই ১৯৮১ সালের সংসদেও মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসাবে বহুল আলোচিত হয়। সংকীর্ণ স্বার্থ ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রয়াসে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস বিকৃত, অস্পষ্ট ও ঝাপসা হয়ে যাবার পূর্বেই মুক্তিযুদ্ধের এক অগ্রণী সৈনিকের সচেতন প্রয়াসে রচিত এই গ্রন্থ আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রামের এক বিশ্বস্ত দলিল।'
মুহূর্তের ভেতর ব্যস্ত হয়ে পড়ে দুজন। নিঃশব্দে একের পর এক লাশগুলো টেনে এন তারা জড়ো করতে থাকে। সময় অতিক্রান্ত হতে থাকে। চাঁদ আরো সরে আসে। আকাশে আজ মেঘ নেই। চত্বরের ওপর বীভৎস শ্বেতীর মতো ছেঁড়া আলো পড়ে থাকে।
১৯৭১ সালে বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সঙ্গে জাহানারা ইমাম একাত্মতা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মৃত্যু, দুঃস্বপ্নভরা বিভীষিকার মধ্যে তার ত্যাগ ও সতর্ক সক্রিয়তা দেশপ্রেমের সর্বোচ্চ উদাহরণ হয়ে আছে। শহীদ রুমীর মা পরিণত হন শহীদ জননীতে। মুক্তিযুদ্ধে সন্তান বিয়োগের বেদনাবিধুর মাতৃহৃদয় এবং যাতনা মূর্ত হয়েছে তাঁকে কেন্দ্র করে। গত শতকের নব্বই দশকে মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তির উত্থানে জনমনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় তার পটভূমিতে ১৯ জানুয়ারি ১৯৯২ সালে 'একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠিত হলে তিনি আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী ব্যাপক গণআন্দোলন পরিচালনা করেন। তারই নেতৃত্বে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় গণআদালত। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্য দিয়ে মানুষের মনোজগতে পৌঁছে দিয়েছেন তার অধীত জ্ঞান সম্ভার।