জেমস জয়েসের কালজয়ী উপন্যাস 'ইউলিসিস' নিয়ে এই ধরনের বই লেখা হয় নি, এর আগে, দেশে কিংবা বিদেশে। নদীপথে লেখকের ঢাকা থেকে খুলনা যাত্রা দিয়ে এই বই শুরু ও শেষ, মাঝখানে রয়েছে জয়েসের কালজয়ী উপন্যাস ‘ইউলিসিস’ পাঠের মাধ্যমে লিওপোল্ড ব্লুম এবং অন্যান্য চরিত্রের ডাবলিন শহরে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পরিভ্রমণের বর্ণনা। বর্তমান কালের এই সব ভ্রমণকে ধারণ করে আছে হোমারের এপিক, ওডিসির নায়ক ওডিসিউস (ইউলিসিস)-এর ঘরে ফেরার রোমাঞ্চকর দশ বছরের কাহিনি, আকারে এবং ইঙ্গিতে। জয়েসের ‘ইউলিসিস’ পাঠ যেমন সুদূর অতীতের এপিকের জগতে ভ্রমণ এবং আধুনিক কালের একটি সাধারণ দিনের পরিক্রমায় অংশগ্রহণ, এই বইও নদীপথে কালজয়ী উপন্যাসটি সঙ্গী করে যাত্রার এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা, যে বর্ণনায় আছে আকস্মিকতার বিস্ময়, জটিলতার জন্য হতবুদ্ধি হয়ে যাওয়া, ভাষার দুর্বোধ্যতার জন্য বিরক্ত হয়ে ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলা এবং শেষ পর্যন্ত সম্পূর্ণ না বুঝেও এক যাযাবর লেখকের অনড় অধ্যবসায় এবং গভীর পাণ্ডিত্যের সামনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যাওয়ার মতো বিচিত্র ঘটনা। 'নদীপথে, সঙ্গে ইউলিসিস' পড়ার পর জয়েসের 'ইউলিসিস' উপন্যাস জটিল মনে হবে না, কঠিনতা সত্বেও।
পৃথিবীতে যত ইতিহাসে যত ক্ষয় মানবের সাথে মানবের প্রাণবিনিময়ে অবিনয় যত গ্লানি ব্যথা ধূসরতা ভুল ভয় সকল সরায়ে ঘুমানো নগরী ঘুমনগরীর রাজকুমারী কি জাগে। নিখিলের শাদা চাতকের মতো প্রাণ তোমার আমার হৃদয়ের করে কি গান(করে আহ্বান, করে করে আহ্বান) মহাপৃথিবীর অনুরাগে। --জীবনানন্দ দাশ
"চলে যায় বসন্তের দিন!" কি অদ্ভূত কথা! বসন্তের দিন কেন চলে যাবে? কোনো কিছুই তো চলে যায় না। এক বসন্ত যায়, আরেক বসন্ত আসে। স্বপ্ন চলে যায়, আবারো ফিরে আসে। আমি হিমু। আমি কেন বলব - 'চলে যায় বসন্তের দিন'।আমার মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে? কী সে্ই সমস্যা?
ছয়-সাত বছরের একটি বালক জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছে। সে বৃষ্টি দেখছে। সিলেটের বিখ্যাত বৃষ্টি। ফিনফিনে ইলসেগুঁড়ি না, ঝুম বৃষ্টি। এই বৃষ্টি এক নাগাড়ে সাতদিন পর্যন্ত চলতে পারে। ছেলেটি বৃষ্টি দেখছে তবে তার দৃষ্টিতে মুগ্ধতা নেই, বিস্ময়বোধ নেই, আছে দুঃখবোধ এবং হতাশা। তাকে সারাদিনের জন্যে আটকে রাখা হয়েছে। আজ সে ঘর থেকে বের হতে পারবে না। সে একটি গুরুতর অপরাধ করেছে।...... উপন্যাস লিখছি না। নিজের শৈশবের কথাই লিখছি। পঞ্চাশ বছর আগেকার কথা। সবকিছু হুবহু মনে নেই। যে সব জায়গা মনে নেই সেসব জায়গায় Fill up the blank করেছি। লেখকের স্বাধীনতাও ব্যবহার করেছি, তবে যেটুকু না করলেই নয় শুধু ততটুকুই। -হুমায়ূন আহমেদ ভূমিকাঃ মানুষ যখন মৃত্যুর দিকে এগোতে থাকে তখন সে ব্যাকুল হয়ে পেছনে তাকায়। আমার মনে হয় তাই হয়েছে। সারাক্ষণই শৈশবের কথা মনে পড়ে। কী অপূর্ব সময়ই না কাটিয়েছি! শৈশবের খণ্ডচিত্র প্রথমে ছাপা হয়েছিল সিলেট বাজার পত্রিকায়। গ্রন্থকারে প্রকাশের সময় কিছু কাটাকুটি খেলা খেলেছি। -হুমায়ূন আহমেদ
দুই বাংলার পাঠকদের কাছে সাদাত হোসাইনের অবস্থান অনেকটা 'এলেন, লিখলেন, জয় করলেন'-এর মতো। তার একটি উপন্যাস পড়েছিলাম, এক সাহিত্য পুরস্কারের হ্রস্ব তালিকায় সেটি স্থান করে নেওয়ার পর। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। বইটি পুরস্কার পায় নি। এজন্য নিশ্চয় তার মন খারাপ হয়েছে, কিন্তু সেই ভাবটা চেপে রেখে বিনয়ের সঙ্গে আমাকে বলেছে, তার দুর্বলতার জায়গাগুলি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। কিছু কথা তাকে বলেছিলাম, সে মন দিয়ে শুনেছে। আমি নিশ্চিত, নিজেকে উত্তরণের চেষ্টায় নতুন করে সে নেমেছিল। সফলও যে হয়েছিল, প্রমাণ তার সাম্প্রতিক উপন্যাসগুলো। তার লেখার হাত এখন অনেক শক্তিশালী, ভাষাটা তার স্বাক্ষরযুক্ত, চিন্তাগুলি অনেক পরিণত। তরুণ পাঠকদের সে আকৃষ্ট করে। এবারের কলকাতা বইমেলায় তার সই নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো পাঠকদের ছবি প্রথম পাতায় ছেপেছে কলকাতার বাংলা কাগজ। এক পাঠক বলেছে, সাদাতের লেখায় সম্মোহনী শক্তি আছে
মুক্তিযুদ্ধের সাংবাদিকতা নিয়ে গ্রহণযোগ্য ও প্রামাণ্যগ্রন্থের অভাব বহুকালের, যদিও ভিনদেশি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭১-এর প্রতিবেদনগুচ্ছ আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টিগোচর হয়েছে ইতোমধ্যে। মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন সংবাদদাতা, লেখক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হারুন হাবীব সেই অভাব পূরণের চেষ্টা নিয়েছেন। এই গ্রন্থে দেশীয় ও মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন সাংবাদিকতা নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে-যা জাতীয় জীবনের ঐতিহাসিক অধ্যায়। এ ছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জোগাতে ভারতীয় পত্রপত্রিকার যে ঐতিহাসিক ভূমিকা, তা নিয়েও বিশদ আলোকপাত করা হয়েছে- যা আগে হয় নি। আমাদের বিশ্বাস বইটি আগ্রহী পাঠকদের দৃষ্টি কাড়বে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাংবাদিকতার ওপর প্রামাণ্যগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে।