কাল সারারাত ঘুম হয় নি। ঘুম না হবার কোনো কারণ ছিল না। কারণ ছাড়াই এই পৃথিবীতে অনেক কিছু ঘটে। দিনের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঘুমোতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে চোখভর্তি ঘুম। কতক্ষণ ঘুমিয়েছি জানি না। ঘুম ভাঙল স্বপ্ন দেখে। আমার বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম। তিনি আমার গা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলছেন, এই হিমু, হিমু, ওঠ। তাড়াতাড়ি ওঠ। ভুমিকম্প হচ্ছে। ধরণী কাঁপছে। আমি ঘুমের মধ্যেই বললাম, আহ, কেন বিরক্ত করছ? বাবা ভরাট গলায় বললেন, পাকৃতিক দুর্যোগের মতো মজার ব্যাপার আর হয় না। ভেরি ইন্টারেষ্টিং। এই সময় চোখকান খোলা রাখতে হয়। তুই বেকুবের মতো শুয়ে আছিস। ঘুমোতে দাও বাবা। তোর ঘুমোলে চলবে না। মহাপুরুষদের সবকিছু জয় করতে হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম। ঘুম হচ্ছে দ্বিতীয় মৃত্যু। সাধারণ মানুষ ঘুমায়-অসাধারণরা জেগে থাকে।......
"যুদ্ধ" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ 'যুদ্ধ' ১৯৭১ সালে সংঘটিত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত উপন্যাস। লেখক এ উপন্যাসে যুদ্ধের বিভিন্ন মাত্রা অনুসন্ধানে তীক্ষ পর্যবেক্ষণ, মনন এবং কল্পনাশক্তির ব্যবহার করছেন। তিনি যুদ্ধের প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেছেন ব্যক্তির বেঁচে থাকার সঙ্কট, মূল্যবোধের রূপান্তর, ধর্মীয় বিশ্বাসের অনুষঙ্গে আঘাত, মৃত্যু, স্বজন হারানোর বেদনার ভেতর দিয়ে। পৃথিবীর যে-কোনো দেশের যে-কোনো কালের যুদ্ধের উদ্ভূত পরিস্থিতির এ এক মৌল সত্য। যে সত্য পৃথিবীর সব মানুষের অভিন্ন অনুভব। যিনি যুদ্ধের দেশীয় প্রেক্ষাপট নির্মাণ করেছেন একটি সেক্টরের সরাসরি যুদ্ধকে চিত্রিত করে এবং অগণিত মানুষের যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও যুদ্ধ সম্পর্কিত দেশজ-ঐতিহ্য সংলগ্ন ভাবনার ভেতর দিয়ে। এ উপন্যাসে একটি চরিত্র আছে। যার কোনো নাম নেই। 'লোকটি' অভিধায় যে দেশের সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। অস্ত্রচালনার ট্রেনিং নেয়- যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধাদের পাশে পাশে থাকে। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। পুরো উপন্যাস জুড়ে সে একটি প্রতীকী চরিত্র। যাকে বলা যেতে পারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-প্রেরণা-সাহস এবং স্বাধীনতার স্বপ্ন। এই উপন্যাসে স্বাধীনতার স্বপ্ন, নারী ও পুরুষকে সমানভাবে আন্দোলিত করে। উপন্যাসের মাখন যুদ্ধে তার পা হারায়- আর উপন্যাসের বেণু শত্রু কর্তৃক ধর্ষিত হলে মনে করে তার জরায়ু যখম হয়েছে। যে অর্থে মাখন মুক্তিযোদ্ধা, সে অর্থে বেণুও মুক্তিযোদ্ধা। এটি যে-কোনো যুদ্ধের সত্য। তাই এ দেশের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ এ উপন্যাসের হিরো।
একটি পুরুষের মধ্যস্থলে একটি জলপদ্ম ফুটিয়াছে। জলপদ্মটি পানির পৃষ্ঠদেশ হইতে এক ফুট উপরে।এমন সময় দমকা বাতাস আসিল, ফুলটি তিনফুট দূরে সরিয়া জল স্পর্শ করিল। পুকুরের গভীরতা নির্ণয় করো। -লীলাবতী এই ধরনের প্রচুর অংক আমি আমার শৈশবে পাটিগণিতের বইয়ে দেখেছি। অংকের শেষে লীলাবতী নামটি লেখা। ব্যাপারটা কী? লীলাবতী মেয়েটি কে? তার সঙ্গে জটিল এসব অংকের সম্পর্ক কী? যা জানলাম তা হচ্ছে- সপ্তম শতকের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ভাস্করাচার্যের একমাত্র কন্যার নাম ‘লীলাবতী’। মেযেটির কপালে বৈধব্যযোগ -এই অজুহাতে কন্যাসম্প্রদানের আগে আগে বরপক্ষ মেয়েটির বিয়ে ভেঙে দেয়। লীলাবতী যখন গভীর দুঃখে কাঁদছিল তখন ভাস্করাচার্য বললেন, ‘মা গো , তোমার জন্য কিছু করার সামর্থ্য আমার নেই, তবে পৃথিবীর মানুষ যেন বহু যুগ তোমাকে মনে রাখে আমি সেই ব্যবস্থা করছি। ‘তিনি তাঁর বিখ্যাত গণিতের বইটির নাম দেন ‘লীলাবতী’। গল্পটি আমাকে এতই অভিভূত করে যে ,একরাতে লীলাবতীকে স্বপ্নেও দেখি।এই নামটা মাথার ভেতর ঢুকে যায় । অনেক দিন ইচ্ছা ছিল স্বপ্নে দেখা মেয়েটিকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখব। নাম দেব ‘লীলাবতী’ । ভালো কথা, আমার লীলাবতী গল্প কিন্তু ভিন্ন। আমর উপন্যাসের লীলাবতীর বাবা নাম ভাস্করাচার্য না ,সিদ্দিকুর রহমান। তিনি সাধারণ একজন মানুষ। অংকবিদ না।
"১৯৭১ পেছনে ফিরে দেখা" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ '১৯৭১ পেছনে ফিরে দেখা' বইটির নামে একাত্তর থাকলেও এখানে উঠে এসেছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটনাবলি। রয়েছে পাকিস্তান সরকারের এদেশ এবং এদেশের মানুষের প্রতি শাসন, শোষণ, বিভিন্ন কূটকৌশলের বর্ণনা। এ প্রজন্ম যেভাবে বেড়ে উঠছে, এতে লেখক আশঙ্কা করছেন হয়তো কয়েক শ বছর পর তাদের মাঝে দেশপ্রেমের বিষয়টাই থাকবে না। এমনই কয়েক শ বছর পরে এক কঙ্কালের সন্ধান মেলে, মাংস লেগে থাকায় কঙ্কাল না বলে একে ফসিল বলা হয়েছে। এমনি সময়ের এক কিশোর, যে না-কি দেশকে নিয়ে ভাবে, কাগজে ছাপা বই পড়ে। তখনকার সময়ের অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সে জানতে পারে, কেন এদেশের মানুষ পাকিস্তানের শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে '৭১ সালে যুদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল; নির্যাতিত হয়েছিল নিজ ভাষার জন্যে, সেই ভাষা নিয়েও এখন টানাপোড়েন চলছে। সে আরও জেনেছে, হাজার হাজার বছরের পেছনের ইতিহাস-গৌড়, পুন্ড্র ও বরেন্দ্রর কথা। পারিবারিক সংরক্ষণে রাখা কাগজে ছাপা বই নিয়ে সে পড়তে বসে যায় তা জানবার জন্য। সেখানে দুই কিশোরী সামিরা ও বকুল। জেনে নেয় এদেশের মানুষ কেন মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। তারা জানে প্রীতিলতা নামের ইংরেজ আমলের এক বিপ্লবী নারীর জীবনকথা, তখনকার বিপ্লবীদের অনেকের নাম। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী নজরুলের কথা, যিনি জন্মেই দেখেছেন পরাধীন ভারত। সেই ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি বাকরুদ্ধ ও অসুস্থ। এরই ধারাবাহিকতায় স্বাধীন বাংলাদেশ। এসব চিত্র আমরা পাব এ বইয়ে। বইটি আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, সবারই মনের ক্ষুধা মিটাবে।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়।সাবলীল ঘটনার বর্ননা আর সহজ ভাষায় লেখার কারণে হুমায়ুন আহমেদের বই এর তুলনা নেই। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। হুমায়ুন আহমেদের বইসমূহ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে।তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। নবীজি (২০১২) হুমায়ুন আহমেদের অপ্রকাশিত ও অসমাপ্ত বই।