জোছনা নিয়ে উচ্ছ্বাস আমার পুরনাে অসুখ। সুযােগ পেলেই কিছুক্ষণ জোছনা বন্দনা। এই অবস্থায় যখন কোনাে প্রকাশক বলেন— আপনার জোছনা বিষয়ক লেখাগুলি একত্র করে বই বের করলে কেমন হয় ? তখন আঁৎকে উঠতে হয়, কারণ আমার এমন কোনাে বই নেই যেখানে জোছনা বিলাস নেই। তারপরেও তিনটি উপন্যাস নিয়ে বের হল— জোছনাত্রয়ী। এদের আলাদা করা গিয়েছে, কারণ উপন্যাস তিনটির নামের মধ্যেই জোছনা আছে। ----হুমায়ূন আহমেদ
রেবেকা খুবই সাধারন পরিবারের সাদাসিদা মেয়ে। একটি চাকুরি করে, অবিবাহিতা। হঠাৎ করেই আমেরিকায় তিন মাসের একটি শর্ট কোর্সের সুযোগ পেয়ে যায়। ট্রেনিং এর জন্য আমেরিকায় যাবার দিন সাতেক আগে হঠাৎ করেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তার স্বামীটিও খুবই সাদাসিদে। আমেরিকায় পা দিয়েই বিপদে পরে রেবেকা। তাকে কেউ রিসিভ করতে আসেনি এ্যায়ারপোর্টে, সেই সাথে সে তার লাগেজও হারিয়ে ফেলেছে। এ্যারপোর্ট থেকে বাংলাদেশী নাগরিক পাশা চৌধুরীকে ফোন দিয়ে রেবেকার কথা বলা হলে সম্পূর্ণ অপরিচিত মহিলাকে সাহায্য করতে পাশা গভীর শীতের রাতে ছুটে যায়। পাশা রেকেবাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়, সকালে রেবেকাকে তার ইউনির্ভাসিটিতে পৌঁছেদেয়। রেবেকা আর পাশার মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়। এদিকে ট্রেনিং এ রেবকা খুব ভালো রেজাল্ট করতে শুরু করে। প্রফেসাররা রেবেকাকে খুব পছন্দ করে। তারাই রেবেকাকে প্রস্তাব করে পিএইচডি করে যেতে, রেবেকাকে ফ্রীতে পড়ার সুযোগ করে দেয়। অন্যদিকে পাশার খুব খারাপ অবস্থা। সে ইলিগেলি আছে আমেরিকাতে। তার কোন চাকরি নেই। সে মূলত কম্পিউটারে খেলার জন্য গেইম তৈরি করে কোম্পানীগুলির কাছে বিক্রি করে। অনেকদিন কোন গেইম বিক্রি হয়নি বলে তার কাছে কোন টাকা নাই বললেই চলে। তাই পাশা ঠিক করে। দেশের সাবার কাছ থেকে সে ডুব দিবে, কারণ দেশে বড় ভাইয়ের সংসারে টাকা পাঠানো আর তার পক্ষে সম্ভব নয়। পাশা তার সাথে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে পরে পথে। রেবেকা তার পিএইচডি কথা জানালে পরিবারের সবাই বিরধীতা করে। তিন মাসের জন্য গিয়ে ৫/৬ বছরের জন্য থেকে যাওয়াটা কেউই পছন্দ করছে না। শুধু তার স্বামী তাকে তার এই সুযোগ ব্যবহারের জন্য অনুমোতি দেয়।
শুভ্র হঠাৎ একটু নড়েচড়ে বসল। তার বেঞ্চের এক কোনায় অল্পবয়েসী একটা মেয়ে এসে বসেছে। বাচ্চা মেয়ে।পনেরো-ষোল বছরের বেশি বয়স হবে না। মেয়েটা এত রাতে পার্কে কী করছে কে জানে! তবে মেয়েটা বেশ সহজ-স্বাভাবিক। তার সঙ্গে লাল রঙের ভ্যানিটিব্যাগ। সে ব্যাগ খুলে একটা লিপস্টিক বের করল। আয়না বের করল। এখন সে আয়োজন করে ঠোঁটে লিপস্টিক দিচ্ছে। এত রাতে মেয়েটা সাজগোজ শুরু করেছে কেন কে জানে! শুভ্র আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে।এখন সে কপালে একটা লাল রঙের টিপ দিয়ে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল, ভাইজান দেখেন তো টিপটা মাঝখানে পড়ছে ?
"তোমার নামে সন্ধ্যা নামে" বইয়ের ভূমিকার থেকে নেয়া: উপন্যাসটি লেখার পেছনের ঘটনা মজার। পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার ঈদসংখ্যার জন্য গত ক বছর ধরে প্রতিবারই একটি উপন্যাস লিখি আমি। সেই উপন্যাসই পরবর্তীসময়ে অন্যপ্রকাশ থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এবারও লিখছিলাম। কিন্তু উপন্যাসটি শেষ করা হয় নি। শেষ না করার কারণ মহামারি করোনা। করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এবার অন্যদিন ঈদসংখ্যা বের হলো না। কিন্তু এই খবর যতদিনে জেনেছি, ততদিনে উপন্যাসের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লেখা শেষ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেখা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকায় লিখতে হচ্ছিল একটান। দমবন্ধ পরিস্থিতি। ঠিক সেই মুহুর্তে পত্রিকা বের হচ্ছে না শুনে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। ল্যাপটপ বন্ধ করে মনের আনন্দে অবসর কাটাতে লাগালাম। তারপর দীর্ঘসময় কেটে গেল। মাথা থেকে হারিয়ে গেল এই উপন্যাসও। কিন্তু হঠাৎই একদিন অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম বললেন, 'উপন্যাসের কী খবর? আমি চমকে উঠে বললাম, কোন উপন্যাস?' তিনি আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন। আমি ল্যাপটপে খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, সেই ফাইল আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কী নামে সেভ করেছিলাম তা-ও মনে নেই। বহু তত্ত্ব-তালাশের পর অবশ্য সেই ফাইল খুঁজে পাওয়া গেল। কিন্তু ততদিনে উপন্যাসের অসমাপ্ত অংশের কী গল্প আমি ভেবে রেখেছিলাম, চরিত্রগুলোর পরিণতি কী হবে, সমাপ্তি কী, এসবই আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছি। ফলে লেখাটা আবারও পড়তে হলো। একবার, দুবার, বহুবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বহুবার পড়তে গিয়েই নতুন গল্প মাথায় চলে এল। তবে তা আগের লেখা বাদ দিয়ে নয়। বরং সেই আগের লেখার সঙ্গেই যুক্ত হলো নতুন ঘটনা-প্রবাহ, নতুন সূচনা-সমাপ্তি, সঙ্গে দারুণ কিছু চরিত্রও। কিন্তু এতে কি গল্পের শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পাঠক দিতে পারবেন না। কারণ, তারা সেই প্রথম অংশ পড়ার সুযোগ পান নি। তবে আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, 'তোমার নামে সন্ধ্যা নামে'র শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। -সাদাত হোসাইন
হাবীব বললেন, আমাদের এই বাড়ি একটা প্রাচীন বাড়ি। প্রাচীন বাড়ির প্রাচীন নিয়ম কানুন। অনাত্মীয় পুরুষ মানুষদের অন্দরমহলে প্রবেশ নিষেধ। নাদিয়ার শরীরের এখনো অবস্থা না যেঁ সে বাইরে এসে আপনার সাথে দেখা করবে। আপনার স্কলারশিপের কি যেন সমস্যার কথা নাদিয়া বলেছিল। কাগজপত্রগুলি যদি রেখে যান, তাহলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারি। বিদ্যুৎ কান্তি দে বললেন, স্কলারশিপের সমস্যার চেয়ে নাদিয়ার সাথে দেখা করা এখন অনেক জরুরি। হাবীবের চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ হলো। তিনি তাঁর সামনে বসা যুবকের দিকে তাকিয়ে রইলেন। যুবকের কথাবার্তার মাঝে উদ্ধত ভঙ্গি আছে। তবে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছেলে। আত্মবিশ্বাস চোখের তারায় ঝলমল করছে। হাবীব বললেন, আমার মেয়ের সাথে দেখা হওয়া জরুরি কেন?