১৯৭৪। স্নায়ুযুদ্ধের কাল। হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসার জন্য তৎকালীন পূর্ব জার্মানির বার্লিনে গেলেন কবি আবুল হাসান। উঠলেন তুষারাচ্ছন্ন বার্লিনের শারিটে হাসপাতালে—শীতে কাঁপতে কাঁপতে। গায়ে নেই গরম কাপড়। জার্মান ভাষা অজানা। অসহায় সেই মুহূর্তে দেবদূতের মতো হাজির হলেন তরুণ জার্মান শিল্পী রাইনহার্ট হেভিকে। সেই যে হাত বাড়িয়ে দিলেন বন্ধুত্বের, গুটিয়ে নেননি আর কখনোই। বার্লিন থেকে হাসান ফিরে এলেন দেশে, ১৯৭৫ সালে তাঁর মৃত্যু হলো, পার হয়ে গেল দশকের পর দশক। কিন্তু রাইনহার্টের বুকের মধ্যে জীবিত থেকে গেলেন হাসান। দূরদেশে আমৃত্যু কবি-বন্ধুর স্মৃতি আগলে রইলেন এই শিল্পী। তাঁর কাছে অমূল্য হয়ে থেকে গেল তাঁদের বার্লিন-জীবনের স্মৃতি, ছবি, তাঁর আঁকা আবুল হাসানের প্রতিকৃতি, তাঁকে লেখা হাসানের চিঠি। এ বই ভিনদেশি দুই কবি আর শিল্পীর অবিশ্বাস্য এক বন্ধুত্বের গল্প।
মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ থেকে আসা মণিপুরি তরুণী অনিমা সিংহ। ঢাকা শহরে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এসে সাথি হিসেবে পায় আরেক উন্মূল তরুণী শীলাকে। এই আলোকিত জনমুখর চকচকে শহরে দুটি মেয়ের টিকে থাকার নিত্যদিনের সংগ্রামে নাটকীয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে অনেকেই। এদের মধ্যে আছে পড়তি নায়িকা মোহিনী চৌধুরী, থিয়েটারকর্মী চিশতী আর সেলিব্রিটি অভিনেতা আনিস জুবের। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পেছনে এক এঁদো গলি থেকে বেরিয়ে ক্রমে এক রঙিন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটতে থাকে তাদের। কিন্তু সেই দুনিয়া কি সত্যি রঙিন? সেই একই কমলগঞ্জের আরেক মণিপুরি তরুণী তারাল্লেই শৈশব থেকে মনের মাঝে ঠাঁই দিয়েছে এলাকার বীরপুরুষ গিরীন্দ্রকে। বড় হয়ে স্বপ্নের মানুষটিকে যখন নিজের করে পেল, তখন সে-ও কি আসলে সুখী হতে পেরেছিল? গল্পকার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত তানজিনা হোসেন তাঁর এই প্রথম উপন্যাসে এসব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। লেখকের মায়াবী গদ্যের সঙ্গে মণিপুরি সংস্কৃতির অনাস্বাদিত জগতেও পাঠক আপনাকে স্বাগত!
গ্রাসিয়াস আ লা ভিদা’ বা ‘জীবনকে ধন্যবাদ’ বলতে পারাটা বোধ হয় এ সময় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। জীবনের সব অনিশ্চয়তাকে অভিবাদন জানিয়ে রাত্রিশেষের গান এমন এক সমকালীন অভিজ্ঞতার গল্প বলে যেখানে সপ্তাহের দিনরাত একেবারে নিশ্চল, গতিহীন। অচল এক জোড়া পায়ের কাছে তারপরও সমুদ্র-নীল অশান্ত কিছু ঢেউ ছুটে আসে। একজন অভিজাত ‘পঙ্গু’ অসহায় নারীর চোখ দিয়ে আমরা নাগরিক বাংলাদেশ আর বদলে যাওয়া দুনিয়াকে দেখি। বৃষ্টির তোড়ে ডুবে যাওয়া নতুন কবর, গাঙচিল, চন্দ্রমল্লিকা, খালার ছোট নাকফুল, অন্য ভাষার ভাঙা ভাঙা শব্দ-বাক্য, গিটার হাতে আন্তোনিও বান্দারাস, প্রথম চুমু খাওয়ার ইচ্ছে, পরাবাস্তব আলো—কাহিনির এই অনন্য ইমেজগুলো একটার পর একটা ভিজে ক্ষয়ে যাওয়ার ছবি যেমন এঁকেছে, তেমনি শুকনো আকাশে উড়িয়েছে স্মরণের গাঙচিল।
সুখ ও প্রাপ্তি ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে মানুষের জীবন নিরন্তর সংগ্রামের। এই বইয়ের গল্পগুলো যেন অতল সমুদ্রের মাঝখানে বিকল হওয়া একেকটা নৌকা। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসেই চলেছে—উদ্দেশ্যহীন, কূলকিনারাহীন। এখানে প্রেম নেই, আশা নেই। আছে এক ঘোরলাগা গোলকধাঁধার ক্ষয়ে যাওয়া ধূসর জগত্। যে জগতে জীবন হোঁচট খায় পদে পদে। ভেঙে পড়ে চেতনার সব প্রাচীর। মানসিক টানাপোড়েন, অসহায়ত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, নৈতিক স্খলন, অবক্ষয়, সংশয় ও মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো আনিসুর রহমানের গল্পে উঠে এসেছে। এসব গল্পে সময় অলস, স্থবির। সিসিফাসের নিয়তি নিয়ে সবকিছু যেন ফিরে আসে একই জায়গায় বারবার।
সাহিত্যের ভুবনে নিবেদিতপ্রাণ দম্পতি সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক। সৈয়দ হককে আনোয়ারা হক একান্তে সম্ভাষণ করতেন হেমিংওয়ে নামে। এই যুগলের যাপিত জীবনের অপরূপ গাথা আর সমসময়ের সাহিত্য-শিল্পের ইতিহাস এ আখ্যানের উপজীব্য। বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে এক ব্যতিক্রমী উপন্যাস।
"সুন্দরবনে বাঘের সন্ধানে" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘের চোখের দিকে তাকিয়েছেন কখনো? কল্পনা করুন, ওই বাঘ আর আপনার মাঝখানে কোনো লোহার বেড়া নেই। শুধু একজোড়া জ্বলজ্বলে সোনালি চোখ তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। সে চাউনির যে কী মহিমা-একমাত্র বাঘের নিজের রাজ্যে দাড়িয়ে দেখলে তা বুঝতে পারবেন। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে লেখক মনিরুল খান অনেকবার গিয়েছেন সে রাজ্যে। মুখোমুখি হয়েছেন সুন্দরবনের রাজাধিরাজের। শৈশবে বাবা সাদত আলী খানের মুখে বুনো বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছেন বারবার। এখন মানুষ তার কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনতে চায়। গল্পের মতো অভূতপূর্ব সব স্মৃতিচারণা মূলত সেই বাঘেরই মহিমাকীর্তন।