একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিকথা প্রচুর লেখা হয়েছে। কিন্তু দেশ হানাদারমুক্ত হওয়ার পর বাহাত্তরের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বিবরণ বিশেষ পাওয়া যায় না। একটি বড় যুদ্ধ ও রক্তপাতের পর এ দেশের সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠভাবে জানা যাবে শওকত ওসমানের এই স্মৃতিলিপি থেকে। তাঁর ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের কথাও লিখেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের পুরাে সময়টাই তিনি ছিলেন ভারতে, কলকাতায়। সেখানে প্রবাসী বাঙালিদের জীবনযাপন কাছে থেকে দেখেছেন তাদের অনেকের আচার-আচরণ সম্পর্কে কৌতুহলােদ্দীপক বিবরণ রয়েছে এ বইয়ে।
আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্পগুলোতে উঠে এসেছে মানবজীবনের বিচিত্র দিক। মানুষের জীবনে প্রেম আসে। আসে দুঃখ, নানা সমস্যা-সংকট। আর এসব বয়ে ও সয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষকে। গ্রন্থভুক্ত কোনো কোনো গল্পের আত্মজৈবনিক অনুষঙ্গ পাঠককে নিয়ে যাবে গল্পকারের নিজের অভিজ্ঞতার গভীরে। পাশাপাশি সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান ও সংগ্রামের অন্তর্জগৎও উঠে এসেছে কোনো কোনো গল্পে। করোনা অতিমারির কালে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। এ সময় আমরা হারিয়েছি আমাদের নিকট ও ঘনিষ্ঠ অনেককে। এক ভীতিকর পরিবেশের মুখোমুখি হয় সবাই। প্রিয়জনকেও তখন ছঁুয়ে দেখতে পারে না। অংশ নিতে পারে না তার অন্তিম যাত্রায়। সাংসারিক টানাপোড়েন, মৃত্যুশোক, না পাওয়ার বেদনা—এগুলো কি মানুষ কখনো কাটিয়ে উঠতে পারে? সব সংকট উতরে কি শেষ পর্যন্ত গাওয়া যায় জীবনের জয়গান? এককথায় বলা যায়, জীবনসংশ্লিষ্ট এসব বিষয় নিয়েই এই বইয়ের গল্পগুলো।
১৯৭৫ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অস্থির সময়। বাকশাল গঠন, সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর সপরিবার নির্মমভাবে নিহত হওয়া, নভেম্বরে আবার সামরিক অভ্যুত্থান, জাতীয় চার নেতার হত্যা, পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান—সব মিলিয়ে বছরটি ছিল বাংলাদেশের একটি গভীর সংকটের কাল। এত অল্প সময়ে এত সব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর ঘটেনি। ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক। কিন্তু কোথাও এই সময়ের একটি পুরো চিত্র পাওয়া যায় না। এ বইয়ে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও মতামত তুলে ধরা হয়েছে। সঙ্গে আছে দেশি ও বিদেশি নানা দলিল। সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি, সাক্ষাৎকার ও কাছ থেকে দেখা ব্যক্তিদের স্মৃতিকথা হিসেবে লেখাগুলো বহু সময় ধরে বহু চেষ্টায় সংগ্রহ করা হয়েছে। পঁচাত্তরের অস্থির সময়ের পুরো চিত্র তুলে ধরেছে এ বই।
সুদূর অতীত থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত হজযাত্রার অভিজ্ঞতা, যাত্রাপথের বর্ণনা এবং পবিত্র স্থানগুলো সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণ, বিভিন্ন যুগের হজযাত্রীদের স্মৃতিকথা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। হাজার বছর ধরে মানুষ পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে, পরে জাহাজ, রেল আর এখন বিমানযোগে হজব্রত পালন করে আসছে। একসময় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একরকম চিরবিদায় নিয়ে হজে যাওয়া হতো। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দীর্ঘ, দুর্গম ও বিপত্সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ছিল এই যাত্রা। পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে একেক পথে এই যাত্রায় কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না সঞ্চিত হয়েছে মানুষের, যুগে যুগে। প্রাচীনকাল থেকে সাম্প্র্রতিক সময় পর্যন্ত সেই যাত্রাপথের বিবরণ এবং পুণ্যপথের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আরব দেশে যাতায়াতের স্মৃতি এবং সেখানকার পবিত্র স্থানগুলোর ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা নিয়ে লিখিত বইটি পাঠকের অন্তর্লোককে আলোকিত করবে।
"এ অঞ্চলের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয় পনেরো শতকের শেষ দিকে, যখন ইউরোপীয়রা ভারতবর্ষে আসতে শুরু করে। তারা নিজেদের মধ্যে বাজার ও ভূখণ্ড দখলের প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের পক্ষে-বিপক্ষে থাকে এদেশীয় সামন্ত শাসকেরা। একপর্যায়ে অঞ্চলটি হয় ব্রিটিশ উপনিবেশ। পরস্পর-বিচ্ছিন্ন রাজ্যগুলোকে একসঙ্গে জুড়ে তারা আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করে। প্রায় দু’শ বছর রাজত্ব করে তারা চলে যায়। আমাদের ইতিহাসের এ পর্ব নানান উত্থান-পতনের সাক্ষী—ষড়যন্ত্র, যুদ্ধ, বিদ্রোহ আর বিয়োগান্ত ঘটনায় ভরা। সেটা ছিল মধ্যযুগের শেষ আর আধ্ুনিক যুগের শুরু। এ সময়ের তিনটি ঘটনা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়—১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ, ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ এবং ১৯৪৭ সালে ভারতভাগ, যার পরম্পরায় জন্ম হয় পাকিস্তান নামে নতুন এক রাষ্ট্রের। এ ঘটনাক্রমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানান সামাজিক শক্তির ক্ষয় ও বিকাশ। নানান সূত্র ঘেঁটে এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে সেসব ইতিহাস। "
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ইতিহাসের শোকাবহ রক্তরঞ্জিত দিন। দেশের পরবর্তী ইতিহাসের ওপর এর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। সে সম্পর্কে বিশদ তথ্যাদি আজও পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। ১৫ আগস্টের ঘটনার পূর্বাভাস দেশি-বিদেশি কোনো সূত্রে পাওয়া গিয়েছিল কি না, বঙ্গবন্ধু নিজে সে সম্পর্কে কতটা অবহিত ছিলেন কিংবা তিনি বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছিলেন—সাংবাদিক, কূটনীতিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রচনা ও সাক্ষাৎকার থেকে তা আজ ক্রমপ্রকাশমান। বইটিতে সংকলিত স্মৃতিকথা, দলিল ও গবেষণাধর্মী রচনার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও পূর্বাপর ঘটনাসম্পর্কিত তথ্য এবং সত্যের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটবে। আগস্ট ট্র্যাজেডি সম্পর্কে মতামত ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা এ বইকে অমূল্য করেছে।