রাত্রি ১২টা। ক্রিং ক্রিং। হাজি মোরশেদ ফোন ধরলেন, ‘হ্যালো।’ ‘হ্যালো, বলধা গার্ডেন থেকে বলছি।’ ‘আমি শেখ মুজিবের বাড়ি থেকে বলছি।’ ‘মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন কী করব?’ ‘আপনি একটু ধরেন। মুজিব ভাইকে জিজ্ঞেস করে আসছি।’ হাজি মোরশেদ দৌড়ে গেলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। ‘মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে, মেশিন কী করবে জানতে চায়।’ মুজিব বললেন, ‘মেশিন ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বলো।’ হাজি সাহেব বুঝলেন, বলধা গার্ডেন একটা কোড। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মেসেজ পাঠানো হয়ে গেল।শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়া চলেছেন বড় একটা লঞ্চ নিয়ে। নদীর দুধারে বিপুল জনতা টের পেয়ে গেছে এই লঞ্চে আছেন তাদের প্রিয়তম বঙ্গবন্ধু। তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে আসছে নেতাকে একনজর দেখবে বলে। এই ভালোবাসার জবাব কেমন করে দেবেন মুজিব? আইয়ুব খান বিদায় নিলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। চীন দাবার ঘুঁটি চালছে, আমেরিকা তৎপর। নির্বাচন এল। মুজিবের নির্দেশে তাজউদ্দীন সক্রিয় দেশের সেরা অর্থনীতিবিদ আর আইনবিদদের নিয়ে, ৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো রচনায়। ভাসানীর মতিগতি বোঝা যাচ্ছে না; তিনি স্লোগান দিচ্ছেন, ভোটের আগে ভাত চাই। নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করল আওয়ামী লীগ। ভুট্টোর সঙ্গে লারকানায় পাখি শিকার করার নামে লাখো বাঙালি হত্যার নীলনকশা প্রস্ত্তত করলেন ইয়াহিয়া। এল একাত্তরের মার্চ। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আলোচনা ভেস্তে গেল। বাঙালি পুলিশ, ইপিআর, সৈনিকদের বঙ্গবন্ধু আদেশ দিলেন, অস্ত্র গোলাবারুদ হাতে নাও, প্রতিরোধ গড়ো। সবাই অনুরোধ করছে, মুজিব ভাই, ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে। আপনি পালান। মুজিব হাসছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আমি পালাব না। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশকালের ছবি আঁকা রইল এই উপন্যাসে।
"১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ঘটনা। বলা যায়, বাংলাদেশের জন্ম একঝাঁকুনিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেয়। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা, ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিকীকরণ, সিয়াচেন হিমবাহ ও কারগিলের সংঘাত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা—সবকিছুরই পেছনে ভূমিকা রাখে ১৯৭১ সালের ওই উত্তাল ৯ মাস। প্রচলিত বয়ানের বিপরীতে শ্রীনাথ রাঘবন দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের সৃষ্টি কোনো পূর্বনির্ধারিত ঘটনা নয়। এই ঘটনাকে বিচার করতে হবে সেই সময়ের বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা, স্নায়ুযুদ্ধ এবং জায়মান বিশ্বায়নের পটভূমিতে রেখে। উপরন্তু এ ঘটনাজুড়ে আছেন শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, রিচার্ড নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার, চৌ এন লাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারিক আলী, জর্জ হ্যারিসন, রবি শঙ্কর ও বব ডিলানের মতো ব্যক্তিত্বরা। রাঘবনের লেখা এই মৌলিক ইতিহাসগ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট এবং ঘটনার ফলাফল বা প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বুঝতে পাঠককে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।"
একদা মাছেরও মাংস হতো। খামখেয়ালির মধ্যে একটা আরবি, আরেকটা ফারসি শব্দ। জাঁদরেল কি আসলে জেনারেল? দীর্ঘদিন ব্যবহারে চারপাশের আরও সব শব্দের ধাক্কায় শব্দের আদি অর্থ পাল্টে যায়। কোনো কোনো শব্দের অর্থ পাল্টে হয়ে যায় একেবারে উল্টো। কিছু শব্দ আমাদের ভাষায় কোথা থেকে এল, তার হদিস খুঁজে পাওয়া যায় না। এ রকম কত গল্প আর ইতিহাস শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে! শব্দের অর্থ কখনো জটিল, কখনো রোমাঞ্চকর। শব্দের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাস। আমাদের খুব চেনা, প্রতিদিন আমাদের মুখে মুখে ফেরে এ রকম কিছু শব্দের মজার গল্প নিয়ে এ বই।
সাহিত্যের ভুবনে নিবেদিতপ্রাণ দম্পতি সৈয়দ শামসুল হক ও আনোয়ারা সৈয়দ হক। সৈয়দ হককে আনোয়ারা হক একান্তে সম্ভাষণ করতেন হেমিংওয়ে নামে। এই যুগলের যাপিত জীবনের অপরূপ গাথা আর সমসময়ের সাহিত্য-শিল্পের ইতিহাস এ আখ্যানের উপজীব্য। বাস্তব আর কল্পনার মিশেলে এক ব্যতিক্রমী উপন্যাস।
"সুন্দরবনে বাঘের সন্ধানে" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ চিড়িয়াখানায় গিয়ে বাঘের চোখের দিকে তাকিয়েছেন কখনো? কল্পনা করুন, ওই বাঘ আর আপনার মাঝখানে কোনো লোহার বেড়া নেই। শুধু একজোড়া জ্বলজ্বলে সোনালি চোখ তাকিয়ে আছে আপনার দিকে। সে চাউনির যে কী মহিমা-একমাত্র বাঘের নিজের রাজ্যে দাড়িয়ে দেখলে তা বুঝতে পারবেন। সুন্দরবনের বাঘ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে লেখক মনিরুল খান অনেকবার গিয়েছেন সে রাজ্যে। মুখোমুখি হয়েছেন সুন্দরবনের রাজাধিরাজের। শৈশবে বাবা সাদত আলী খানের মুখে বুনো বাঘ দেখার অভিজ্ঞতা শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছেন বারবার। এখন মানুষ তার কাছে বাঘ দেখার গল্প শুনতে চায়। গল্পের মতো অভূতপূর্ব সব স্মৃতিচারণা মূলত সেই বাঘেরই মহিমাকীর্তন।
সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর জীবন। ফলে দিনপঞ্জিতে লেখা নিত্যদিনের খুব সাধারণ ঘটনার মধ্যেও জীবন-জগৎ আর ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর গভীর বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সরদার ফজলুল করিমের দার্শনিক মন সারাক্ষণ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা জটিল জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে ফিরেছে। আপন জীবন এবং সমকালীন ইতিহাসকে পরিপ্রেক্ষিতে রেখে তিনি দেশ ও সমাজকে উপলব্ধির প্রয়াস করেছেন। সমস্যা আর সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছেন। আবার জীবন বলতেও জীবনের বহুমাত্রিক দিক উঠে এসেছে তাঁর এসব ভাবনালিপিতে। আমার পৃথিবী বইয়ে তাঁর লেখাগুলো ডায়েরি-আশ্রিত। সেগুলোকে দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন, সাহিত্য—এভাবে পর্ববিন্যস্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্য অংশে স্থান পেয়েছে বই ও লেখক নিয়ে তাঁর পাঠানুভূতি। সরদার ফজলুল করিমের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।