জানা-অজানা প্রাণবৈচিত্রে্যর এক সমৃদ্ধ ভান্ডার পার্বত্য চট্টগ্রাম। এর কোনো বিস্তারিত জরিপ আজও হয়নি। লেখক সেই প্রাণবৈচিত্রে্যর সন্ধানে চষে বেড়িয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়শ্রেণি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করেছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণ, তুলেছেন বহু ছবি। পেয়েছেন বাংলাদেশের জন্য নতুন অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর সন্ধান। আবার চোখের সামনেই প্রাণবৈচিত্রে্যসমৃদ্ধ অনেক প্রাকৃতিক বন ধ্বংস হতেও দেখেছেন তিনি। দেখেছেন কীভাবে সেখানকার বন্য প্রাণীরা ক্রমে তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে। লেখকের সে অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ বই। প্রকৃতি আর তার মাঝে বাস করা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জন্য মমতায় সিক্ত রচনাগুলো পাঠককে শখের ভ্রমণের গণ্ডি পেরিয়ে অভিজ্ঞতার এক নতুন জগতে নিয়ে যাবে। সে আগ্রহ ও সচেতনতা দেশের প্রাণবৈচিত্রে্যকে ধ্বংস থেকে রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশের জন্য নতুন বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেই দুর্গম অরণ্য-পাহাড়ে লেখকের দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনি নিয়ে এ বই।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন শিল্পী মুর্তজা বশীর। ভাষাশহীদ বরকত মারা যান তাঁর চোখের সামনে। হাসপাতালে দেখেছিলেন রফিকের খুলি উড়ে যাওয়া লাশ। তিনি তখন আর্ট কলেজের ছাত্র। মার্ক্সবাদী রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন। মনে শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন। ভাষা আন্দোলন হয়ে উঠল তাঁর আজীবনের প্রেরণা। পরের বছর হাসান হাফিজুর রহমানের একুশে ফেব্রুয়ারী সংকলনে প্রধান দুই রেখাচিত্রশিল্পীর একজন। সেই থেকে শুরু। এ বই ভাষা আন্দোলন নিয়ে মুর্তজা বশীরের স্মৃতি ও স্বপ্নভরা লেখা এবং শিল্পকলার সমারোহ।
পুলিশ ভেঙে ফেলল ১৯৫২ সালের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেন ফরিদপুর কারাগার থেকে অনশন ধর্মঘট করার পর। তাঁর আব্বা তাঁকে নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই মুজিব জানতে পারলেন তাঁর নেতা সোহরাওয়ার্দীর মনোভাব—বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এবার কী করবেন মুজিব? তাজউদ্দীনরা ভাবছেন, একটা আলাদা দল করতে হবে। গণতন্ত্রী দল গঠনের তৎপরতার সঙ্গে খানিকটা যুক্ত থাকলেন তিনি। মওলানা ভাসানী কারাগারে। সেখান থেকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া, তাজউদ্দীনের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আর শেখ মুজিবের মন্ত্রিত্ব লাভ এবং মন্ত্রীর বাড়ি থেকে সোজা জেলযাত্রা। তিনটি শিশুসন্তান নিয়ে রেনুর অকূলপাথারে পড়ে যাওয়া। রাজনীতির ডামাডোল ওলটপালট করে দেয় ব্যক্তিমানুষেরও জীবন। এই রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কেবল একটি দেশের নেতা বা জনগণ নির্ধারণ করে না, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকেও। ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমি তো তা-ই বলতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের ইচ্ছাই কি জয়ী হয় না?
ওদের মা কখনো গান করেননি কেন? মাকে ওদের মনে পড়ে না। শুধু চরাচর ভেঙে যখন জ্যোৎস্না নামে, তখন মায়ের শাড়ির আঁচলের গন্ধ পায় ওরা। টিনে ছাওয়া বাংলো ধরনের বাড়ি, বাড়ির সামনে বাগান, কাঁটামেহেদির বেড়া, কামিনী ফুলের পাগল-করা গন্ধ—এ-ই ছিল সত্তরের দশকের মফস্সল শহরগুলো। তেমনই এক শহরে দুই মায়ের সংসারে বড় হচ্ছিল চার ভাইবোন। চোরকাঁটাভরা মাঠে খেলা, বৃষ্টিতে তুমুল ভেজা শৈশব। টিউবওয়েলের নিচে গোসল, কয়লা দিয়ে দাঁত-মাজার শৈশব। কিন্তু ওদের মুক্তিযোদ্ধা বাবা সরকারি চাকরি হারান অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করার অপরাধে। কারাগারে যেতে হয় বাবাকে। বড় ভাই বাবুল সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নিজের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে। কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ সংবাদ দেন ছোটমা, হাসপাতালে শেষ শয্যায়। জানিয়ে যান, কেন মা কখনো গান করেননি। কে তাঁর কণ্ঠ থেকে গান নিংড়ে বের করে নিয়েছিল!
ড. কামাল হোসেন আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কালপর্বের প্রত্যক্ষদর্শী। কখনো নেপথ্যে আবার কখনো প্রকাশ্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষের অন্যতম আইনজীবী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সাংবিধানিক পরামর্শদাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের তরফে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায়ও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইতিহাসের সেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—জানা-অজানা নানা তথ্য ও ঘটনা গ্রন্থভুক্ত কামাল হোসেনের দীর্ঘ দুটি সাক্ষাৎকারে সবিস্তার উঠে এসেছে। এ ছাড়া গ্রন্থের অন্য লেখকেরাও তাঁদের রচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের জন্ম ও বিকাশে ড. কামাল হোসেনের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পাঠককে সহায়তা করবে এ বই।
তিমি ও ডলফিন প্রাণিজগতের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক তথ্যের মিশেলে রহস্যভরা তিমি ও ডলফিনের গল্প-কাহিনি নিয়ে এমন বই বাংলাদেশে এটিই প্রথম। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মনে নির্মল আনন্দ জোগানোর পাশাপাশি তাদের জানার পরিধিকেও বাড়িয়ে তুলবে এই বই। প্রাণিজগতে তিমি ও ডলফিন অনন্য বৈচিত্র্যের অধিকারী। এরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী কিন্তু বাস করে পানির গহিন অন্ধকারে। ফলে অধিকাংশ সময় এরা থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এদের সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা যেমন অল্প তেমনি বিজ্ঞানীরাও এদের সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি। এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার নদ-নদীতে বাস করে আকর্ষণীয় কয়েক প্রজাতির ডলফিন। আচার-আচরণ ও জেলেদের সঙ্গে এদের বিশেষ সম্পর্ক রূপকথা, পুরাকাহিনি ও লৌকিক গল্পগাথায় স্থান করে নিয়েছে। অন্যদিকে মেরুদেশের গভীর হিমশীতল জলরাশিতে বাস করে দৈত্যাকার রহস্যময় নানা জাতের তিমি ও ডলফিন। মেরুবাসী এস্কিমো ও ইনুয়িত উপজাতির সঙ্গে এদের রয়েছে জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। অতীতে মুনাফালোভী শিকারিরা এদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। রহস্যময় এই সামুদ্রিক প্রাণী দুটি সম্পর্কে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্যসহ অনেক জটিল কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় গল্পাকারে লেখক এ বইয়ে তুলে ধরেছেন। কিশোর-তারুণসহ সব বয়সী পাঠকের মধ্যে তিমি-ডলফিন সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করবে বইটি।