কাজী আনোয়ার হোসেন সম্পাদিত রহস্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। গল্পের কাঠামো এ. জে. কুইন্যালের ম্যান অন ফায়ার থেকে নেয়া। কাঠামোগত সামান্য মিল ছাড়া ম্যান অন ফায়ারের সাথে এ বইয়ের কোন সম্পর্ক নেই। - হুমায়ূন আহমেদ
মিসির আলি ভালো ঝামেলায় পড়েছেন। ঝামেলা সায়রা বানুকে নিয়ে। মেয়েটি যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসে তিনি কেমন যেন গুটিয়ে যান। সায়রা বানুর সমস্যাটা জটিল। সে না-কি ইবলিশ শয়তানের সঙ্গে কথা বলেছে। তাকে দেখেছে। সায়রা বানুর বক্তব্য মিসির আলি না পারছেন গ্রহণ করতে, না পারছেন বাতিল করতে। মিসির আলি সারা জীবন যুক্তির সিঁড়ি ব্যবহার করেছেন। আজ তাঁকে যুক্তির বাইরে পা দিতে হচ্ছে। তাঁর মনে ভয় ঢুকে গেছে। রাতে ঘুম ভাঙলে তিনি আতংকিত বোধ করেন। তাঁর মনে হয় ইবলিশ শয়তানের সঙ্গে সম্ভবত তাঁরও দেখা হবে।
ফ্ল্যাপে লিখা কথা হিমুর বাবা মানুষটা কিরকম? বেঁটে, মোটা, কুৎসিত? কি পোষাক পরতেন? লুঙ্গি-গামছা, হাফপেন্ট, টি-শার্ট? নাকি, হিমুর মতো হলুদ পাঞ্জারী? তাঁর নাম কি? বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র হিমু'র বাবাকে নিয়ে এই বই হিমুর বাবার কথামালা * যারা হিমু নয় এই বইটি তাদের জন্য নিষিদ্ধ ভূমিকা বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বিচি গ্রহণ করা যায়। বিচিটা না-কি আড়াআড়ি থাকে। পনেরো হাত বিচি গ্রহণ করার কোনোই কারণ নেই। হিমুর বাবার কথামালা চল্লিশ পৃষ্ঠার একটি বই। এখানে দুই পৃষ্ঠার ভূমিকার অর্থ বারো হাত কাঁকুড়ের পনেরো হাত বিচি। এ ধরনের বইয়ের ধারণা আমার মাথায় আসে নি। কবি বাপ্পির মাথায় এসেছে। সে প্রায় জবরদস্তি করেই হিমুর বাবাকে নিয়ে আমাকে লিখিয়েছে। হিমুর বাবার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থেকে কাজটা করিয়েছে আমার তা মনে হয় না। তার মধ্যে 'বাণিজ্য' বিষয়টা কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। কবি সাহেব কিন্তু আবার একজন প্রকাশকও। আমি নিশ্চিত বাপ্পি কল্পনায় দেখছে- বইমেলা শুরু হয়েছে। পাঠকরা লাইন বেঁধে কিনেছে "হিমুর বাবার কথামেলা"। স্বপ্ন দেকতে সবাই ভালবাসে। কবিরা একটু বেশি ভালবাসেন। এটাই স্বাবাবিক। মানব সম্প্রদায়ে স্বপ্ন দেখে না হিমুরা। তারা অন্যদের স্বপ্ন দেখায়। 'হিমুর বাবার কথামালা' বইটি শুধুমাত্র হিমুরা পড়লেই ভাল হয়। অন্যরা (বিশেষ করে কিশোর কিশোরীরা) যেন না পড়ে। তাদের মাথায় 'ভ্রান্তি' ঢুকে যেতে পারে। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। ভ্রান্তি একবার ঢুকে গেলে তাকে বের করা বেশ কঠিন। আমি ভ্রান্তির চাষ করতে চাই না। এখন কথা হচ্ছে হিমু কে? আমি নিজে কি পরিষ্কার জানি? মনে তো হয় না। প্রায়ই যে সব চিঠি পাই তার একটা বড় অংশ এই জাতীয় লেকা থাকে- "স্যার, হিমু হইবার নিয়মাবলি দয়া করিয়া জানাইবেন। আমি সিল্কের পাঞ্জাবী খরিদ করিয়াছি। আমার এক বন্ধু বলিয়াছে হিমুদের পাঞ্জারী সুতি হইতে হইবে। এই বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত জানাইয়া বাধিত করিবেন।" "আংকেল, আমার নাম নাসিমা। আমি নবম শ্রেণীর ছাত্রী। আমার খুব ইচ্ছা আমি হিমু হব। মেয়েদের হিমু পোশাক কি? হলুদ পাঞ্জাবীর সঙ্গে কি ওড়না পরব? না-কি হলুদ শাড়ি পরব? হলুদ শাড়ি পরলে মনে হবে গায়ে হলুদে যাচ্ছি।" "হুমায়ূন সাহেব! আমার বড় ছেলে সম্প্রতি হিমু হয়েছে। সে হলুদ পাঞ্জাবী পরে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটাহাটি শুরু করেছে। গতকাল পা কেটে বাসায় ফিরেছে। তাতে টিটেনাস ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। আমার বক্তব্য আপনি লেখার মাধ্যমে কোমলমতিদের বিভ্রান্ত করে আনন্দ পান। একজন পিতা হিসেবে আপনার প্রতি অনুরোধ এই কাজটি করবেন না।" আমার অবস্থা হচ্ছে ভিক্ষা চাই না হলুদ চিতাবাঘ সামলাও।
ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা মধ্যদুপুর বড়ই আশ্চর্য সময়। তখন 'ভূতে মারে চিল্।' এবং অদ্ভুত কোনো কারণে কিছু সময়ের জন্য আকাশটা আয়না হয়ে যায়। হিমু হাঁটতে বের হয়েছে মধ্যদুপুরে। তার হাতে ছোট্ট একটা দুপুরমনি গাছের চারা। সেখানে চার পাঁচটা ফুল। এখনো ফোটেনি। মধ্যদুপুরে ফুটবে। হিমু ফুল ফোটার সঙ্গেসঙ্গে আকাশের দিকে তাকাবে। নিজেকে দেখার চেষ্টা করবে আকাশ আয়নায়।