বাংলাদেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আদিবাসীরাও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কোম্পানি কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার, নারী মুক্তিযোদ্ধার বিপুল সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এর ইতিহাস অনেকটাই উপেক্ষিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আদিবাসীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে দেশবাসী তেমন করে জানেনই না। এই অনালোকিত অন্ধকার জগতে আলো ফেলে ইতিহাসের রুদ্ধ দুয়ার খুলে দিয়েছেন গবেষক শফিউদ্দিন তালুকদার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ইতিহাসমনস্ক করতে এবং আমাদের ইতিহাসের দায় থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক হবে পরিশ্রমী গবেষণায় লেখা বাংলাদেশের আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা' গ্রন্থটি।
অনেকদিন আগের কথা, তখন সেটা ছিল উনিশ শ একাত্তর সাল। এই দেশে তখন পাকিস্তানী মিলিটারি কিলবিল কিলবিল করতো, তাদের পিছনে পিছনে থাকতো রাজাকার বাহিনী। এই দুই দল মিলে দেশের মানুষ মেরে, অত্যাচার করে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে সবকিছু শেষ করে দিচ্ছিল। তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে এই দেশের চাষী, মজুর, জেলে আর ছাত্ররা মিলে তৈরি করেছিল মুক্তিবাহিনী। পাকিস্তানী মিলিটারির ছিল ভয়ংকর ভয়ংকর সব অস্ত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের বেশি কিছু ছিল না, কিন্তু তাদের বুকের ভিতর ছিল সাহস আর ছিল দেশের জন্যে ভালবাসা।।
ড. কামাল হোসেন আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কালপর্বের প্রত্যক্ষদর্শী। কখনো নেপথ্যে আবার কখনো প্রকাশ্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষের অন্যতম আইনজীবী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সাংবিধানিক পরামর্শদাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের তরফে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায়ও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইতিহাসের সেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—জানা-অজানা নানা তথ্য ও ঘটনা গ্রন্থভুক্ত কামাল হোসেনের দীর্ঘ দুটি সাক্ষাৎকারে সবিস্তার উঠে এসেছে। এ ছাড়া গ্রন্থের অন্য লেখকেরাও তাঁদের রচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের জন্ম ও বিকাশে ড. কামাল হোসেনের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পাঠককে সহায়তা করবে এ বই।
সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা আর কিশোরগঞ্জ-এই চার জেলায় ভাটি এলাকার বিস্তার। দুর্গম এই ভাটি এলাকা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন। সেক্টরের আওতাধীন থাকলেও এই অঞ্চলে টেকেরঘাট সাত-সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা দিরাইশাল্লাকে কেন্দ্র করে সফল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন হানাদারদের বিরুদ্ধে। ভাটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ তাই এই এলাকার প্রতিটি মানুষের অস্তিত্বের অহংকার। ভাটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতি-নির্ভর আলেখ্য সকল মুক্তিযোদ্ধার অমেয় ত্যাগে সৃষ্ট ইতিবৃত্তের রূপরেখা। ব্যক্তির নয়, সমষ্টিগত অর্জনের গৌরবই এই অহংকার। এই অহংকার। নিজেকে উপলব্ধিরই নামান্তর। প্রায় চার যুগ পেছনে ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণে অসম্পূর্ণতা থাকতে পারে, কিন্তু অপলাপ কিছু নেই। একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার জবানীতে হানাদারদের সরবরাহ পথ বন্ধ করার মতো অসাধারণ সব সাফল্যের কথা এই বই।
১৯৭১: অসহযোগ আন্দোলন ও প্রতিরোধ গ্রন্থটি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম প্রক্রিয়ার প্রথম প্রহরের ওপরে নির্মিত। বহুকাল আগে ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রগঠনের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার চরমপর্বের ঘটনাবলি বিন্যস্ত করে এই গ্রন্থটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র জন্মের একাধিক পর্ব রয়েছে। যার মধ্যে চরমপর্ব হলো ১৯৭০ সালের নির্বাচন। এই নির্বাচনের ফলে সামরিক শক্তি দিয়ে নির্মিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের কেন্দ্রভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার মৌলিক দুর্বলতা উন্মোচিত হয়। এ প্রকারের রাষ্ট্র যে আর টিকতে পারবে না সেটাও পরিষ্কার হয়ে যায়। পাক আর্মির অস্তিত্বের জন্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় এমন একটি সংকট তৈরি করে, যা সমাধানযোগ্য ছিল না। এটাকে সামলাতে গিয়ে পাকিস্তান আর্মি সংসদ মুলতবি ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠী রুখে দাঁড়ায় অর্থাৎ এ পর্যায় থেকেই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চরমপর্ব শুরু হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান আর্মি আক্রমণ করলে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। প্রতিরোধের প্রথম পর্যায় শেষ হয় এপ্রিল মাসের শেষের দিকে। পরবর্তীতে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে জাতীয় যুদ্ধে লিপ্ত হন। যার উদ্দেশ্য ছিল দেশকে শত্রুমুক্ত করা। এই গ্রন্থে পহেলা মার্চ থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত যে অসহযোগ ও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, সেটাকে তথ্য ও দলিলের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রন্থটি দুটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। নিরস্ত্র পর্ব অর্থাৎ পহেলা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এবং সশস্ত্র পর্বটি ২৫ মার্চ রাতের পর থেকে এপ্রিল মাসের শেষ পর্যন্ত। এরমধ্যে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। তারপর পাকিস্তানিদের হাত থেকে বাংলাদেশ মুক্ত করার জাতীয় যুদ্ধ শুরু হয়।
একদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শাসন, অন্যদিকে একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠা। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন, ঊনসত্তরে গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। শিকল ছিঁড়ে জন্ম নিল নতুন জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ। কিন্তু জন্মলগ্নেই দেশটি পড়ে গেল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে। তারুণ্যের স্বপ্ন, আকাশছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা এবং সনাতন ধ্যানধারণার সঙ্গে বিরোধ জন্ম দিল সংঘাতময় রাজনীতির। এটি ওই সময়ের একটি বয়ান। কৈশোর-তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে লেখক ওই সময়টিকে দেখেছেন, উজানসেÊাতে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর দেখা, শোনা ও জানা ঘটনা ও মানুষের কথা। কালো অক্ষরে এঁকেছেন জীবনের গল্প।