মওলানা ভাসানী আমাদের জাতীয় নেতাদের অন্যতম। শতাব্দীর সমান বয়সী এই মানুষটির জীবন যেমন ছিল ঘটনাবহুল, তেমনি বৈচিত্র্যময়। সাধারণ গ্রামীণ কৃষিজীবী পরিবার থেকে উঠে এসে তিনি আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন গণমানুষের নেতা। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পরিচিতি লাভ করেছিলেন। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষা, সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাতÄতাবোধ ও সাদামাটা জীবনপ্রণালি তাঁকে ‘মজলুম জননেতা’র পরিচয়ে পরিচিত করে তোলে। সৈয়দ আবুল মকসুদ রচিত ভাসানীচরিত বইটিতে মওলানার বাল্যজীবন থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের বিবরণ, মানুষের অধিকারের জন্য তাঁর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অবিভক্ত ভারতের আসাম পর্বের মতো ভাসানী জীবনের তুলনামূলক কম আলোচিত অধ্যায় সম্পর্কে এ বইটিতেই প্রথমবারের মতো আবুল মকসুদ বিশদ আলোচনা করেছেন। তেমনি পরবর্তী পাকিস্তান আন্দোলন, আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা, স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংগ্রাম, বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক, ন্যাপ প্রতিষ্ঠা, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি—এই পর্বগুলোও তথ্যনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মওলানার ব্যক্তিজীবন ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে গিয়ে লেখক তাঁর দৃষ্টিতে যাকে মওলানার সীমাবদ্ধতা বা স্ববিরোধ বলে মনে হয়েছে, তার উল্লেখ করতেও দ্বিধা করেননি।
ড. কামাল হোসেন আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কালপর্বের প্রত্যক্ষদর্শী। কখনো নেপথ্যে আবার কখনো প্রকাশ্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষের অন্যতম আইনজীবী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সাংবিধানিক পরামর্শদাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের তরফে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায়ও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইতিহাসের সেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—জানা-অজানা নানা তথ্য ও ঘটনা গ্রন্থভুক্ত কামাল হোসেনের দীর্ঘ দুটি সাক্ষাৎকারে সবিস্তার উঠে এসেছে। এ ছাড়া গ্রন্থের অন্য লেখকেরাও তাঁদের রচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের জন্ম ও বিকাশে ড. কামাল হোসেনের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পাঠককে সহায়তা করবে এ বই।