"১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ঘটনা। বলা যায়, বাংলাদেশের জন্ম একঝাঁকুনিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেয়। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা, ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিকীকরণ, সিয়াচেন হিমবাহ ও কারগিলের সংঘাত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা—সবকিছুরই পেছনে ভূমিকা রাখে ১৯৭১ সালের ওই উত্তাল ৯ মাস। প্রচলিত বয়ানের বিপরীতে শ্রীনাথ রাঘবন দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের সৃষ্টি কোনো পূর্বনির্ধারিত ঘটনা নয়। এই ঘটনাকে বিচার করতে হবে সেই সময়ের বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা, স্নায়ুযুদ্ধ এবং জায়মান বিশ্বায়নের পটভূমিতে রেখে। উপরন্তু এ ঘটনাজুড়ে আছেন শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, রিচার্ড নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার, চৌ এন লাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারিক আলী, জর্জ হ্যারিসন, রবি শঙ্কর ও বব ডিলানের মতো ব্যক্তিত্বরা। রাঘবনের লেখা এই মৌলিক ইতিহাসগ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট এবং ঘটনার ফলাফল বা প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বুঝতে পাঠককে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।"
"স্রেফ ভালোবাসার অন্য রকম আর অন্য ধারার একটা উপন্যাস লিখতে চেয়েছেন সুমন্ত আসলাম। সম্ভবত তিনি তা লিখেছেনও। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক কিছু অনেকভাবে এনে ফেলেছেন তিনি এই উপন্যাসে—কিছুটা ভয়ে, কিছুটা সাহসে। এর জন্য কেউ যদি কিছু মনে করেন, তাতে লেখক মোটেও দায়ী নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। যদি এটা পড়ে আপনি নিজেও কিছু বোঝার চেষ্টা করেন, অন্য কিছু ভাবেন, এর জন্যও লেখক দায়ী হবেন না। তবে আপনাকে আশ্বস্ত করছি আমরা—এই উপন্যাসটি একবার পড়া শুরু করলে সম্মোহিত হবেন আপনি, থামতে পারবেন না কোনোভাবেই। তারপর আপনি নিজেই অবাক হবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন—এটা কি স্রেফ একটা ভালোবাসার উপন্যাস, না অন্য কিছু? আর সবকিছুর জন্য দায়ী আসলে কে? প্রিয় বন্ধু, সুমন্ত আসলামের অন্যতম সেরা উপন্যাসে আপনাকে আমন্ত্রণ। "
আকবর আলি খানের বিপুল বিচিত্র রচনা ও চিন্তাজগতের সামগ্রিক খতিয়ান এক মলাটে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর লেখায়। আকবর আলি খান বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস আর সমাজ বিষয়ে নিবিড়তম অনুসন্ধানকারীদের অন্যতম। স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সদ্যস্বাধীন দেশের প্রশাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নকৌশলের ভিত্তি রচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। কেন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা একটা বৃত্তের মধ্যেই ক্রমাগত ঘুরপাক খায়, দেশের উন্নয়নকৌশলগুলো কেন সাফল্যের সম্ভাবনা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়—এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তিনি এই ভূখণ্ডের মানুষের মানস গঠন ও ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। তাঁর আগ্রহের ব্যাপ্তি প্রসারিত ছিল জীবনানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও বিষয়ের অনুসন্ধান ও মূল্যায়নে। সারা জীবনের এই অনুসন্ধান লিপিবদ্ধ করেছেন একাধিক শ্রমসাধ্য গবেষণাকর্মে, সুলিখিত জনপ্রিয় বই আর প্রবন্ধে। এই বইয়ের লেখক আমিনুল ইসলাম ভুইয়া ছিলেন আকবর আলি খানের সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজন। তাঁর অন্তরঙ্গ উপস্থাপনায় পাঠক আকবর আলি খানের জীবনব্যাপী সাধনার একটা পরিচয় পাবেন বলে আমরা আশা করি।
সরদার ফজলুল করিম সারা জীবন মানুষের সঙ্গে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ, সমকাল, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ও লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তা, অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ের রচনায়। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো তে প্রকাশিত এমন ২১টি নির্বাচিত অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে এ বই। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা দিক। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকটের কথা। বাদ পড়েনি ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিসহ নানা প্রসঙ্গ। লেখকের মনীষার পরিচয়বহ রচনাগুলো বর্তমান সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি ভবিষ্যত্কালের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন ইতিহাসকে বোঝার পাশাপাশি বইটি দেশের একজন সেরা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব্বকে চিনতেও পাঠককে সহায়তা করবে।
জীবদ্দশায় মুনীর চৌধুরীর কোনো গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তিনি ছোটগল্প লিখেছেনও কম। সাহিত্যজীবনের প্রথম দিকে তরুণ বয়সে লেখা এসব গল্প। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮ সাল—মোটামুটি এই কয়েক বছর তাঁর ছোটগল্প লেখার সময়। গল্পগুলো ওই সময় প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন পত্রিকায়। সংখ্যার বিচারে অধিক না হলেও সেখানে তাঁর প্রতিভার পরিচয় প্রবলভাবে উপস্থিত। মুনীর চৌধুরীর লেখা ৯টি গল্প নিয়ে এই বই। সমাজের শোষণ-পীড়ন ও বঞ্চনা, কুসংস্কার ও ধর্মের অপব্যবহার, সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান, দুর্ভিক্ষকালে নিরন্ন মানুষের অসহায়ত্ব এবং নর-নারীর হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক—গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য। প্রগতিশীল সমাজচেতনার পাশাপাশি লেখকের কৌতুকবোধ আমাদের সমসাময়িক কথাসাহিত্যের ধারায় মুনীর চৌধুরীর গল্পগুলোকে অনন্যতা দিয়েছে। নাট্যকার ও সাহিত্যসমালোচক পরিচয়ের বাইরে পাঠক গল্পকার মুনীর চৌধুরীকে আবিষ্কার করবেন এই বইয়ে।
ড. কামাল হোসেন আমাদের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক কালপর্বের প্রত্যক্ষদর্শী। কখনো নেপথ্যে আবার কখনো প্রকাশ্যে তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষের অন্যতম আইনজীবী। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের ডাকা গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সাংবিধানিক পরামর্শদাতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের তরফে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন এবং তার ভিত্তিতে পাকিস্তানিদের সঙ্গে আলোচনায়ও ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহযোগী। তাঁরই নেতৃত্বে প্রণীত হয় বাংলাদেশের বাহাত্তরের সংবিধান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপনে বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তিনি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইতিহাসের সেসব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়—জানা-অজানা নানা তথ্য ও ঘটনা গ্রন্থভুক্ত কামাল হোসেনের দীর্ঘ দুটি সাক্ষাৎকারে সবিস্তার উঠে এসেছে। এ ছাড়া গ্রন্থের অন্য লেখকেরাও তাঁদের রচনায় নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ও বস্ত্তনিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের জন্ম ও বিকাশে ড. কামাল হোসেনের অবদানের কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পূর্বাপর ইতিহাস জানতে ও বুঝতে পাঠককে সহায়তা করবে এ বই।