"এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে তুমি কীভাবে করো স্বাধীনতাবিরোধীদের সংগঠন?’ ‘স্যার, আমি করি না। কেউ প্রমাণ দিতে পারলে যে শাস্তি দেন মাথা পেতে নেব।’ প্রক্টর স্যার হুংকার দিয়ে ওঠেন। ‘কী প্রমাণ চাও তুমি? তোমার ফোন পরীক্ষা করেছে ছেলেরা। অবশ্যই তুমি স্বাধীনতাবিরোধীদের লোক।’ আমি চিৎকার করে উঠি, ‘এসব সত্যি না, স্যার।’ ‘তুমি আমাকে চ্যালেঞ্জ করো! আবার তোমার এত বড় সাহস, তুমি ফোন করো আমাকে!’ ‘স্যার!’ আমি কেঁদে ফেলি এবার। ‘তাহলে কার কাছে যাব, স্যার?’ তিনি তিক্ত কণ্ঠে পাকিস্তানের নাম বলেন, সেখানে চলে যেতে বলেন। পাকিস্তানের সাথে আমার কী সম্পর্ক, কেন সেখানে যাব, কিছুই বুঝতে পারি না। বিস্মিত হয়ে বলি, ‘কই যাব, স্যার!’ ‘পাকিস্তান! পেয়ারা পাকিস্তান!’ নাটুকে ভঙ্গিতে এটা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। আমি আবু বকর এই সময়ের বিব্রতকর কাহিনি। "
"রালফ, জ্যাক ও পিটারকিন আবিষ্কার করে এক লোকের কঙ্কাল। পাশে পড়ে আছে একটি কুড়াল। এই অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে যায় তারা। এই প্রবাল দ্বীপে তাদেরও কি লোকটার মতো অবস্থা হবে? রালফের বংশের প্রায় সবাই নাবিক। রালফও জাহাজে যেতে চায়। শেষ পর্যন্ত রাজি হয় বাবা-মা। জাহাজে পরিচয় হয় জ্যাক ও পিটারকিনের সঙ্গে। দুজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় তার। প্রবাল দ্বীপের কাছাকাছি গিয়ে তাদের জাহাজ প্রচণ্ড ঝড়ের সম্মুখীন হয়। তছনছ হয়ে যায় নিমেষেই। ক্যাপ্টেন ও অন্যান্য লোকজনের কোনো চিহ্ন পায় না রালফরা। তিনজন আশ্রয় নেয় প্রবাল দ্বীপে। শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। তারা কি প্রবাল দ্বীপে টিকে থাকতে পারবে? নাকি মারা পড়বে না খেয়ে বা মানুষখেকোদের কবলে পড়ে? জানতে হলে পড়তে হবে বিখ্যাত এই উপন্যাস। "
আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্পগুলোতে উঠে এসেছে মানবজীবনের বিচিত্র দিক। মানুষের জীবনে প্রেম আসে। আসে দুঃখ, নানা সমস্যা-সংকট। আর এসব বয়ে ও সয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষকে। গ্রন্থভুক্ত কোনো কোনো গল্পের আত্মজৈবনিক অনুষঙ্গ পাঠককে নিয়ে যাবে গল্পকারের নিজের অভিজ্ঞতার গভীরে। পাশাপাশি সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান ও সংগ্রামের অন্তর্জগৎও উঠে এসেছে কোনো কোনো গল্পে। করোনা অতিমারির কালে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। এ সময় আমরা হারিয়েছি আমাদের নিকট ও ঘনিষ্ঠ অনেককে। এক ভীতিকর পরিবেশের মুখোমুখি হয় সবাই। প্রিয়জনকেও তখন ছঁুয়ে দেখতে পারে না। অংশ নিতে পারে না তার অন্তিম যাত্রায়। সাংসারিক টানাপোড়েন, মৃত্যুশোক, না পাওয়ার বেদনা—এগুলো কি মানুষ কখনো কাটিয়ে উঠতে পারে? সব সংকট উতরে কি শেষ পর্যন্ত গাওয়া যায় জীবনের জয়গান? এককথায় বলা যায়, জীবনসংশ্লিষ্ট এসব বিষয় নিয়েই এই বইয়ের গল্পগুলো।