বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে। থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর । পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে । বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি। বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে।উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা। ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের। শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তার। একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
নানা কারণে একাত্তরের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। একদিকে ছিল একটি জনগোষ্ঠীর কোটি কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষা। অন্যদিকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর বহুমাত্রিক দ্বন্দ্ব ও সমীকরণ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এর গন্তব্যে পৌঁছেছে। একাত্তরের এই গতিধারা ও ইতিহাসের খুব অল্পই এখন পর্যন্ত জানা গেছে। একাত্তরের যুদ্ধ শুধু ঢাকা আর ইসলামাবাদের মধ্যে আটকে ছিল না। বাংলাদেশকে নিয়ে বিবদমান পরাশক্তিগুলোর মধ্যে হয়েছিল ছায়াযুদ্ধ। অনেক দৌড়ঝাঁপ হয়েছে কলকাতা, দিল্লি, ওয়াশিংটন, মস্কো আর বেইজিংয়ে। কূটনৈতিক লড়াই হয়েছে জাতিসংঘে। এর একটি বড় অনুষঙ্গ ছিল প্রচারযুদ্ধ। সব ছাপিয়ে উঠে এসেছে ভারতের ভূমিকা। অনেক ঐতিহাসিক দলিলের সূত্র ধরে লেখা এ বই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বাকমুক্তির প্রক্রিয়ায় এক অনন্য সংযোজন, যা পাঠকের কৌতূহল বাড়িয়ে তুলবে।
পাকিস্তানের রাজনীতির মঞ্চে তখন তিনটি প্রধান পক্ষ—আওয়ামী লীগ, পিপলস পার্টি এবং সেনাবাহিনী। আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা প্রবেশ করেছিলাম একটা রক্তাক্ত অধ্যায়ে। এই বইয়ে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ-পর্বের একটা ছবি এঁকেছেন গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম স্বাভাবিকভাবে হয়নি। একটি রাষ্ট্র ভেঙে আরেকটি রাষ্ট্র, তা-ও আবার আপসে নয়, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন উদাহরণ বিরল। বাংলাদেশের ঠিকুজি খুঁজতে গেলে আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গ এসে পড়ে। এই বইয়ে আছে দলটির ওই সময়ের পথচলার বিবরণ, যখন দেশ একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এই যুদ্ধ ছিল বাঙালির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ের অনিবার্য গন্তব্য। আলোচনার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের সম্ভাবনা নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা একটা রক্তাক্ত অধ্যায়ে প্রবেশ করেছিলাম। আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছিল বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ওই পর্বের একটা ছবি আঁকা হয়েছে এই বইয়ে।
পুলিশ ভেঙে ফেলল ১৯৫২ সালের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেন ফরিদপুর কারাগার থেকে অনশন ধর্মঘট করার পর। তাঁর আব্বা তাঁকে নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই মুজিব জানতে পারলেন তাঁর নেতা সোহরাওয়ার্দীর মনোভাব—বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এবার কী করবেন মুজিব? তাজউদ্দীনরা ভাবছেন, একটা আলাদা দল করতে হবে। গণতন্ত্রী দল গঠনের তৎপরতার সঙ্গে খানিকটা যুক্ত থাকলেন তিনি। মওলানা ভাসানী কারাগারে। সেখান থেকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া, তাজউদ্দীনের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আর শেখ মুজিবের মন্ত্রিত্ব লাভ এবং মন্ত্রীর বাড়ি থেকে সোজা জেলযাত্রা। তিনটি শিশুসন্তান নিয়ে রেনুর অকূলপাথারে পড়ে যাওয়া। রাজনীতির ডামাডোল ওলটপালট করে দেয় ব্যক্তিমানুষেরও জীবন। এই রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কেবল একটি দেশের নেতা বা জনগণ নির্ধারণ করে না, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকেও। ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমি তো তা-ই বলতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের ইচ্ছাই কি জয়ী হয় না?
একদিকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার শাসন, অন্যদিকে একটি জনগোষ্ঠীর জেগে ওঠা। স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন, ঊনসত্তরে গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। শিকল ছিঁড়ে জন্ম নিল নতুন জাতিরাষ্ট্র, বাংলাদেশ। কিন্তু জন্মলগ্নেই দেশটি পড়ে গেল রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্তে। তারুণ্যের স্বপ্ন, আকাশছোঁয়া আকাঙ্ক্ষা এবং সনাতন ধ্যানধারণার সঙ্গে বিরোধ জন্ম দিল সংঘাতময় রাজনীতির। এটি ওই সময়ের একটি বয়ান। কৈশোর-তারুণ্যের সন্ধিক্ষণে লেখক ওই সময়টিকে দেখেছেন, উজানসেÊাতে ভাসিয়ে দিয়েছেন নিজেকে। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর দেখা, শোনা ও জানা ঘটনা ও মানুষের কথা। কালো অক্ষরে এঁকেছেন জীবনের গল্প।
দেশের ভেতরে ও বিশ্বজুড়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটেছিল অসংখ্য ঘটনা। পক্ষে-বিপক্ষে ভূমিকা রেখেছিল অগণিত মানুষ। প্রতিটি তারিখ ধরে ধরে সেসব ঘটনা এ বইয়ে সংকলনবদ্ধ করা হয়েছে। বইটি মুক্তিযুদ্ধের প্রতিদিনের ঘটনা-অভিধান। গবেষক ও কৌতূহলী পাঠকের হাতের নাগালে রাখার বই।
রাত্রি ১২টা। ক্রিং ক্রিং। হাজি মোরশেদ ফোন ধরলেন, ‘হ্যালো।’ ‘হ্যালো, বলধা গার্ডেন থেকে বলছি।’ ‘আমি শেখ মুজিবের বাড়ি থেকে বলছি।’ ‘মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে। মেশিন কী করব?’ ‘আপনি একটু ধরেন। মুজিব ভাইকে জিজ্ঞেস করে আসছি।’ হাজি মোরশেদ দৌড়ে গেলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। ‘মেসেজ পাঠানো হয়ে গেছে, মেশিন কী করবে জানতে চায়।’ মুজিব বললেন, ‘মেশিন ভেঙে ফেলে পালিয়ে যেতে বলো।’ হাজি সাহেব বুঝলেন, বলধা গার্ডেন একটা কোড। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মেসেজ পাঠানো হয়ে গেল।শেখ মুজিব টুঙ্গিপাড়া চলেছেন বড় একটা লঞ্চ নিয়ে। নদীর দুধারে বিপুল জনতা টের পেয়ে গেছে এই লঞ্চে আছেন তাদের প্রিয়তম বঙ্গবন্ধু। তারা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে আসছে নেতাকে একনজর দেখবে বলে। এই ভালোবাসার জবাব কেমন করে দেবেন মুজিব? আইয়ুব খান বিদায় নিলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। চীন দাবার ঘুঁটি চালছে, আমেরিকা তৎপর। নির্বাচন এল। মুজিবের নির্দেশে তাজউদ্দীন সক্রিয় দেশের সেরা অর্থনীতিবিদ আর আইনবিদদের নিয়ে, ৬ দফার ভিত্তিতে নির্বাচনী ম্যানিফেস্টো রচনায়। ভাসানীর মতিগতি বোঝা যাচ্ছে না; তিনি স্লোগান দিচ্ছেন, ভোটের আগে ভাত চাই। নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়লাভ করল আওয়ামী লীগ। ভুট্টোর সঙ্গে লারকানায় পাখি শিকার করার নামে লাখো বাঙালি হত্যার নীলনকশা প্রস্ত্তত করলেন ইয়াহিয়া। এল একাত্তরের মার্চ। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। আলোচনা ভেস্তে গেল। বাঙালি পুলিশ, ইপিআর, সৈনিকদের বঙ্গবন্ধু আদেশ দিলেন, অস্ত্র গোলাবারুদ হাতে নাও, প্রতিরোধ গড়ো। সবাই অনুরোধ করছে, মুজিব ভাই, ওরা আপনাকে মেরে ফেলবে। আপনি পালান। মুজিব হাসছেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে। আমি পালাব না। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশকালের ছবি আঁকা রইল এই উপন্যাসে।
যে সীমাহীন ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছিল,তা মানুষের মনে কী স্বপ্ন জন্ম দিয়েছিল, বাস্তবে তাঁরা কী পেলেন, এবং কোন আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত কোন পথে গেল সেই বাংলাদেশ- সে সম্পর্কে নিরপেক্ষ ইতিহাস দুর্লভ। এ বইতে লেখক মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপরের বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল ইতিহাসের এক অনিবার্যতা। ইয়াহিয়াসহ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও ভুট্টোর একগুঁয়েমি, অপরিণামদর্শিতা ও উচ্চাভিলাষ আসলে সেই অনিবার্যতাকেই ত্বরান্বিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধ কেন অনিবার্য ছিল বইটিতে আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের পটভূমি, বিশেষ করে যুদ্ধ শুরুর পূর্ববর্তী দিনগুলোর ঘটনাপ্রবাহের একটি অন্তরঙ্গ ও বস্ত্তনিষ্ঠ বিবরণ পাওয়া যাবে। বইটির লেখক ড. কামাল হোসেন ছিলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আহূত গোলটেবিল বৈঠকেও আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদলের একজন আইনি পরামর্শদাতা হিসেবে তিনি যোগ দেন। ১৯৭১-এর মার্চে ঢাকায় ইয়াহিয়া, ভুট্টো ও তাঁদের সহযোগীদের সঙ্গে আলোচনায়ও বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন অনেক নীতি ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নের সঙ্গেও তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। মোটকথা আমাদের ইতিহাসের ওই কালপর্বের অনেক ঘটনারই তিনি ছিলেন একাধারে প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী ও সক্রিয় অংশীদার। সেদিক থেকে ড. কামালের এই বইটির একটি ঐতিহাসিক মূল্য বা তাৎপর্য আছে। তৎকালে সংবাদপত্রে এসেছে এবং যা একান্তই ভেতরের ঘটনা—উভয়ই লেখক বিশ্বস্ততার সঙ্গে এ বইয়ে তুলে ধরেছেন।
নয় মাসের স্বাধীনতাযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টর এবং 'কে' ফোর্স ছিল বেশ তৎপর। সেক্টর এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে চলত বিরামবিহীন অভিযান। এ গ্রন্থে এসব অভিযানের ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন সেক্টর এবং ফোর্স কমান্ডার মেজর (পরে লে. কর্নেল) খালেদ মোশাররফ। গ্রন্থটি ২ নম্বর সেক্টর এবং ফোর্সের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস। কমান্ডারের বর্ণনার পাশাপাশি রয়েছে যুদ্ধসংশ্লিষ্ট দলিল, ছবি, মানচিত্র এবং আরও কিছু অতিরিক্ত তথ্য। সেক্টর ও ফোর্স কমান্ডারের কেউ কেউ তাঁদের এলাকার আংশিক বা খণ্ডিত ইতিহাস লিখেছিলেন, কিন্তু মেজর খালেদ রেখে গেছেন ২ নম্বর সেক্টর এবং কে ফোর্সের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ের খতিয়ান।
পাকিস্তানি সৈন্যরা বন্দী করে নিয়ে যাচ্ছে শেখ মুজিবকে। নিয়ে যাচ্ছে অজানার উদ্দেশে। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে দেয়াল টপকে বেগম মুজিব আশ্রয় নিয়েছেন পাশের বাড়িতে। হত্যাকাণ্ড চলেছে বাংলাজুড়ে। প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বাঙালি সৈন্য, পুলিশ, ইপিআর, আনসার আর ছাত্রজনতা। শেখ মুজিবকে নেওয়া হলো পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে, গোপন সামরিক আদালতে তাঁর মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার আয়োজন চলছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত হলো প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার। লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিল ভারতের মাটিতে। মুক্তিবাহিনী গঠিত হলো। মুজিবনগর সরকারের বিরুদ্ধে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এরই মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা সারা দেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নাভিশ্বাস তুলে ফেলেছে। পারমাণবিক অস্ত্রবাহী মার্কিন সপ্তম নৌবহর রওনা হয়েছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনী এগিয়ে চলেছে ঢাকা অভিমুখে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও যুদ্ধ এক অনিঃশেষ মহাকাব্য। আনিসুল হকের উপন্যাসধারা যারা ভোর এনেছিল-এর ষষ্ঠ ও শেষ পর্ব রক্তে আঁকা ভোর সেই মহাকাব্যিক বিশালতা ধরার প্রয়াস।
এ উপন্যাস গণিত নিয়ে। এর প্রধান দুই চরিত্র গণিতবিদ মেজোকাকু এবং ‘গণিতের রানি’ বলে খ্যাত নাম্বার থিওরি। বইটি হাতে নিলে পাঠক হারিয়ে যাবেন গণিতের আনন্দময় এক রাজ্যে।
"‘খালি কলস বাজে বেশি’—তাই না? কিন্তু কেন বলুন তো? জোয়ার-ভাটার সঙ্গে চাঁদের সম্পর্ক কী? মাধ্যাকর্ষণ বল মোমবাতির শিখা টেনে নামায় না কেন? মঙ্গলে কি মানববসতি তৈরি করা সম্ভব? মহাবিশ্বের সব গ্রহ গোল কেন? নক্ষত্রগুলোকে তারকা আকৃতিতে দেখা যায় কেন? টিয়া পাখি এত মরিচ খায়, তাদের ঝাল লাগে না কেন? কফির সঙ্গে দুধ মেশালে অনেক সময় তেতো লাগে কেন? মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন কীভাবে সম্ভব হয়? ভিডিও গেম কি মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায়? এসব কী ও কেন-এর উত্তর কী? পড়ুন বিজ্ঞানের এই ব্যতিক্রমী বইটি। আমাদের পরিচিত বন্ধুদের অনেকের ডান হাত বা ডান পা বেশি চলে কেন? আবার কারও বাঁ পাশের হাত-পা বেশি দক্ষ কেন? আসল ঘটনাটি ঘটে মস্তিষ্কে। শরীরের ডান পাশের হাত-পা-চোখ প্রভৃতি কাজ করে মূলত তার মস্তিষ্কের বাঁ অংশের সক্রিয়তার কারণে। আবার অনেকের বাঁ হাতও সমান দক্ষতাসম্পন্ন। তাঁদের মস্তিষ্কের ডান পাশ হাতের সক্রিয়তার ব্যাপারে বেশি সক্রিয়। ব্যাপারটা ব্যক্তিবিশেষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়, মস্তিষ্কের সক্রিয়তার ব্যাপার। এ রকম অনেক প্রশ্নের উত্তর জানার আগ্রহ রয়েছে তরুণদের। যেমন কম্পাসের কাঁটা কেন উত্তর-দক্ষিণমুখী হয়ে থাকে? পিরামিড তৈরির কৌশলটি কী ছিল? এগুলোর উত্তর হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত। সচেতন থাকতে হবে, যেন আমরা কেউ ভুল উত্তরের চক্করে না পড়ি। তরুণ প্রজন্মের শত শত প্রশ্নের বিজ্ঞানসম্মত উত্তর জানার জন্য এ বই বিশেষ অবদান রাখবে। আজকের তরুণই হবে আগামী দিনের বিজ্ঞানী। ওরাই হবে আধুনিক বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের উজ্জ্বল তারকা। "
প্রফেসর তিবুতি লামা। অংশ না নেওয়ার পরও কোনো একটি আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত প্রতিটি খেলায় আন-অফিশিয়ালি চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল তাকে। সত্যি কি ঘটেছিল ঘটনাটি? নইলে অদ্ভুতদর্শন এই মানুষটিকে ‘থিঙ্কিং মেশিন’ কেন বলা হবে? ঘটনাচক্রে থিঙ্কিং মেশিন প্রফেসর তিবুতি লামাকে এমন এক জেলখানায় আটক করা হয়েছে, যেখানে আসামিরা সবাই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত। সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তিনি। এখন? এতগুলো সতর্ক চোখ এড়িয়ে ‘কুখ্যাত’ ১৩ নম্বর সেল থেকে কীভাবে পালাবেন প্রফেসর? ...দেশের খবরের কাগজগুলো মেতে উঠল এক ভুতুড়ে গাড়ি নিয়ে। গাড়িটাকে ‘ফাঁদ’-এর এ প্রান্ত থেকে শুধু ঢুকতেইদেখা যায়, ও প্রান্ত থেকে আর বেরোতে দেখা যায় না। সমস্যা কোথায়—রাস্তায়, না গাড়িতে? রহস্যভেদের দায়িত্ব নিলেন প্রফেসর।পাঠক, এক মলাটে দুটি আশ্চর্য কাহিনি। যাত্রা শুরু করুন প্রফেসর তিবুতিলামার সঙ্গে।
নাম দেখে মনে হবে, এ বুঝি এক প্রেমের উপন্যাস। আসলে এটি এক অপ্রেমের বৃত্তান্ত। বাদামি-জীবন আমাদের। এক খোসার ভেতর দুটো আলাদা ঘরে দুটো বাদাম। আমাদের দাম্পত্যজীবনও ঠিক বাদামের মতন। এক ঘরে এক বিছানায় শুয়েও আলাদা জীবন আমাদের। কাকে যেন পাওয়ার ছিল, কে যেন অধরা থেকে গেল! তিশা সিরাজের সঙ্গে ঘর বাঁধতে চেয়েছিল, পারেনি। লম্বা বেঢপ চেহারার নিখিল ভৌমিকের সঙ্গে রূপসী তিশাকে সংসার করতে হলো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল জয়দীপ। দাম্পত্যজীবনটা সুখকর ছিল না। এই উপন্যাসের শরীরজুড়ে না পাওয়ার ক্ষতচিহ্ন। স্নিগ্ধমধুর এক স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকে ‘১৬/১৭ লাভ লেনে’।
"১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ঘটনা। বলা যায়, বাংলাদেশের জন্ম একঝাঁকুনিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে দেয়। কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা, ভারত ও পাকিস্তানের পারমাণবিকীকরণ, সিয়াচেন হিমবাহ ও কারগিলের সংঘাত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পথচলা—সবকিছুরই পেছনে ভূমিকা রাখে ১৯৭১ সালের ওই উত্তাল ৯ মাস। প্রচলিত বয়ানের বিপরীতে শ্রীনাথ রাঘবন দাবি করেছেন যে বাংলাদেশের সৃষ্টি কোনো পূর্বনির্ধারিত ঘটনা নয়। এই ঘটনাকে বিচার করতে হবে সেই সময়ের বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে উপনিবেশগুলোর স্বাধীনতা, স্নায়ুযুদ্ধ এবং জায়মান বিশ্বায়নের পটভূমিতে রেখে। উপরন্তু এ ঘটনাজুড়ে আছেন শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, রিচার্ড নিক্সন, হেনরি কিসিঞ্জার, চৌ এন লাই, জুলফিকার আলী ভুট্টো, তারিক আলী, জর্জ হ্যারিসন, রবি শঙ্কর ও বব ডিলানের মতো ব্যক্তিত্বরা। রাঘবনের লেখা এই মৌলিক ইতিহাসগ্রন্থটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মানবিক সংকট এবং ঘটনার ফলাফল বা প্রভাব-প্রতিক্রিয়া বুঝতে পাঠককে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।"
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সম্পূর্ণরূপে অনালোচিত অধ্যায় ১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত শিলিগুড়ি সম্মেলন। এই সম্মেলন অনেক বিভ্রান্তি দূর করে যুদ্ধের সময় অনুসরিীত নীতি প্রণয়নে সহায়তা করে। এই সম্মেলন নিয়ে আসে সংহতি, ত্বরান্বিত করে পরিকল্পিত যুদ্ধ এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যায় দ্রুত বিজয়ের দিকে। কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনের বিস্তারিত বিবরণ ও দাপ্তরিক কার্যপ্রণালি কোথাও সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রথমা প্রকাশিত 1971: The Siliguri Conference বইটিতে প্রথমবারের মতো সম্মেলনের সময় অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কার্যপ্রণালি এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয়। সঙ্গে ছিল বিশদ ভূমিকা। এই বই সেই ঐতিহাসিক দলিলের নির্ভরযোগ্য সুসম্পাদিত বাংলা অনুবাদ।
Since its inception in 1971, the account of Bangladesh as a country has been nothing short of a miracle. Within a mere 50 years, the country's journey has turned its previous label as a "bottomless basket" around, giving way to an emerging "Asian Tiger" as it currently marches towards its goal of becoming developed by 2041. The present book is a scholarly endeavor to depict this astonishing tale of a dream come true, hoping that readers will find the book absorbing and thought-provoking.
সমগ্র বাংলা কথাসাহিত্যের বিচারে হাসান আজিজুল হক এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং বিরলদৃষ্ট প্রতিভা। তাঁর ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো ছোটগল্প আর আগুনপাখির মতো উপন্যাস তাঁকে বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় করে রাখবে। তরুণ গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মাসউদ আহমাদ ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে কিছু নিবিড় সময় কাটিয়েছেন। সে সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও স্মৃতিধর্মী রচনা। এই প্রথম এগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন কালপর্বের সৃষ্টিসম্ভারের মূল্যায়ন যেমন বইটিতে আছে, তেমনি আছে সমকালীন সাহিত্যের সমস্যা নিয়ে পর্যবেক্ষণও। আছে লেখকের জীবনস্মৃতি ও নিজের লেখা নিয়ে অন্তরঙ্গ আলাপ। বাদ যায়নি সমাজ সমস্যার আলোচনাও। এসব বিষয়ে হাসান আজিজুল হকের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির অকুণ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে এই বইয়ের অন্তভুর্ক্ত নানা স্বাদের রচনাগুলোর মধ্য দিয়ে।
"অবরুদ্ধ বাংলাদেশ ১৯৭১। আজ ৪০ বছর পর এই তিনটি শব্দ দু-তিন জেনারেশনের কাছে অর্থহীন। কিন্তু আমরা যারা এখন পৌঢ় বা বৃদ্ধ, তখন ছিলাম যুবক বা মধ্য বয়সী, তাদের কাছে এই তিনটি শব্দের অর্থ ভয়, হত্যা, লুট, গ্রেপ্তার, ধর্ষণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রথম অবরুদ্ধ হয় ঢাকা শহর। প্রথম এক সপ্তাহ, প্রতিদিন রাতে দেখা যেত লেলিহান আগুনের শিখা আর শোনা যেত গুলির শব্দ। সকালে দেখা যেত ভস্মীভূত ঘরবাড়ি, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাশ। কারফিউ তো বলবত্ ছিলই, কিন্তু যখনই একটু শিথিল হতো, তখনই দেখা যেত রাজপথ ভরে উঠছে মানুষে। হাজার হাজার মানুষ ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। খোঁজ করছে আত্মীয়স্বজনের। আবার কারফিউ, আগুন, গুলি।"