কাজী আনোয়ার হোসেন সহযোগীঃ কাজী মায়মুর হোসেন অসুস্থ রানা ভাবতেও পারেনি, আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবে এই জটিল ষড়যন্ত্রের জালে। যে হারিয়ে গেছে দশ হাজার বছর আগে, নতুন করে আবারও কি ফিরল সেই দানব? নির্মমভাবে খুন করছে সৈনিক, বিজ্ঞানী ও তাদের সহকারীদের। ইউ.এস. আর্মির অনুরোধে ভয়ঙ্কর বেপরোয়া ওই নৃশংস জানোয়ারের পিছু নিল রানা, সঙ্গে দক্ষ ক’জন সশস্ত্র যোদ্ধা। কিন্তু হাড়ে হাড়ে বুঝল ওরা, বৃথা ওসব আধুনিক অস্ত্র! অনায়াসেই আলাস্কার তুষারাচ্ছন্ন অরণ্য-পর্বতে ওদেরকে হত্যা করছে। ওটা! ধাওয়া খেয়ে পালাতে লাগল ওরা। তারপর আঁধার গিরিখাদে আহত রানার মুখোমুখি হলো ওই নিষ্ঠুর পশু অন্তরের গভীরে রানা বুঝে নিল, আর কোনও উপায় নেই!
সোহানাকে কথা দিয়েছিল রানা, পেনাং দ্বীপের ‘পেস্তা পুলাউ’ উৎসবে দেখা হবে দু’জনের। দিনে ডুব দেবে ওরা বাটু ফারেঙ্গী সৈকতের সমুদ্র গভীরে-ড্রাগনস্পটে, রাতে ডুব দেবে একে অপরের মনের গহীন গভীরে; তুলে আনবে মণি-মুক্তো যে যা পায়। ড্রাগনস্পটে ডুব দিয়ে সোহানা তুলে আনল ছুরি, কাঁটা চামচ-ঘর-সংসারের সামগ্রী। আর রানা? রানা তুলে আনল ছোট্ট একটি অ্যাম্পুল। কীসের অ্যাম্পুল ওটা? ভয় দেখাতে চাইছে কেন ওদের দুর্ধর্ষ বুকিত নাসেরী?
ডিউককে যদি কেউ বলে অমুক লোকটাকে খুন করতে হবে—পারবে? প্রথমে সে জানতে চাইবে বিনিময়ে কত টাকা দেয়া হবে তাকে। দরে বনলে অর্ধেক টাকা অগ্রিম চাইবে সে। এবং টাকা নিয়ে কাজটা করবে না। কারও কিচ্ছুটি করবার উপায় নেই এ নিয়ে তো আর থানা-পুলিস চলে না। বেশ চলছিল এরকম। কিন্তু ভুলটা করল তখনই যখন আশি হাজার টাকা নিল সে কেয়া চৌধুরীর কাছ থেকে—যে জানে, টাকা নিয়ে কাজ করবার অভ্যেস নেই ওর।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে প্রচণ্ড নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে। মনাদিল দাউদের অ্যাকশন পার্টি। মনে হচ্ছে এরা সাচ্চা মুক্তিযোদ্ধাই বটে! কিন্তু রানা লক্ষ করছে। এদের অ্যাকশনের ফলে ইসরায়েলিদের কারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না, মারা পড়ছে নিরীহ আরব শিশু, নারী,বৃদ্ধ। এই মনাদিল দাউদই কেড়ে নিতে যায় ফ্রিডম পার্টির জন্যে আনা অস্ত্র। চায় বশির জামায়োলের লুট করা। বাংলাদেশের সম্পত্তি এক টন সোনার সন্ধান, তার ভাইঝির প্রেম!
নিউ অর্লিন্স এয়ারপোর্টে পৌঁছে রানা জানল, কাছেই ছোট্ট এক শহরে বাঁশি বাজাবেন দুনিয়া-সেরা বংশীবাদক পন্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়া। তখনই স্থির করে ফেলল ও, থেকে যাবে আর দুটো দিন, কিংবদন্তি মানুষটির বাঁশি শুনে তারপর ফিরবে দেশে। জানত না, সিদ্ধান্তটা ছিল কতবড় ভুল। জড়িয়ে পড়ল ও ভয়ঙ্কর এক বিপদে! গেস্টহাউসে উঠে যে হাসিখুশি কৃষ্ণাঙ্গিনী মহিলাকে বড়বোনের মত লেগেছিল, তারই খুনের দায়ে ফেঁসে গিয়ে পালাচ্ছে এখন রানা। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়? শুরু হয়েছে লুইযিয়ানার সবচেয়ে বড় ম্যান-হাণ্ট! একদিকে রক্তলিপ্সু কিছু লোক ও শত শত পুলিশ, অন্যদিকে রানা একা! যারা চরম অন্যায় করল লিযের ওপর, তাদেরকে ছেড়ে দেবে রানা? শুরু হয়েছে ওর প্রাণান্ত সংগ্রাম! শপথ নিয়েছে: প্রাণ থাকতে ছাড়বে না ওই বর্ণবাদী খুনি জানোয়ারগুলোকে!
কে ওই অপরূপা? চোখ সরাতে পারল না রানা। জানল, মেয়েটা ওর মৃত সহযোগী মাইকের বোন। অনুরোধ করল জুডি, খুঁজে দিতে হবে ওর বড় বোনকে। বিসিআই চিফও বললেন, মেয়েটাকে সাহায্য করা তোমার দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে। কিন্তু দুর্গম, নিষ্ঠুর পশ্চিমের লিটল ফোর্কে পা দিয়েই জড়িয়ে গেল রানা মস্ত ঝামেলায়। কেবলই বাড়ল লাশের ভিড়। শত্রু ভয়ঙ্কর। জোর করে তুলে নিয়ে গেল অসহায় জুডিকে। ওকে উদ্ধার করতে সুদূর এক র্যাঞ্চে হাজির হলো রানা। জানে, ওর জন্যে অপেক্ষা করছে একদল রক্তলোলুপ খুনি! সত্যি বলতে, সব বুঝেও মৃত্যুর মুখে ঝাঁপ দিল রানা। কে জানে বাঁচে কি না!