যারা আমার, অর্থাৎ অ্যালান কোয়াটারমেইনের নাম শুনেছেন, তাঁরা হয়তো ভাবতে পারেন, ফুলের সঙ্গে এই লোকের কী সম্পর্ক। বিশেষ করে তা যদি হয় আবার অর্কিড। কিন্তু অতীতে একবার এমন চমকপ্রদ এক অর্কিড অভিযানে আমি অংশ নিয়েছিলাম যে, আমার মনে হয় তার বিস্তারিত বর্ণনা না লিখে রাখাটা অন্যায় হবে। পাঠক, যাবেন নাকি আমার সঙ্গে লিমপোপো নদীর উত্তরে সেই দুর্গম অঞ্চলে হাজারো বিপদের মুখোমুখি হতে? নেবেন সেই বিস্ময়কর অভিযানে অংশ? চলুন তা হলে। কথা দিতে পারি, নরখাদক রহস্যময় পঙ্গো জাতির হাতে বেঘোরে খুন হয়ে যাবেন না।
বাস্তুহারা হয়ে লন্ডনে এসে কপালগুণে ধনী ব্যবসায়ী হয়ে গেল হুবার্ট অভ হেস্টিংস, কিন্তু অভিজাত বংশের সুন্দরী অথচ রহস্যময়ী ব্লাশকে ভালোবেসে সব হারাতে হলো। পালিয়ে চলে গেল সে তাভানতিনসুয়ু-তে (পেরু), হয়ে গেল “সমুদ্র-দেবতা”। পরিচয় হলো কুইলার সঙ্গে, প্রেম আবার এল জীবনে, কিন্তু বিদ্রোহের আগুন আলাদা করে দিল দুজনকে। বাধল চ্যাকা-য়ুক্কা বনাম ক্যাছুয়া যুদ্ধ, ঝলসে উঠল হুবার্টের তরবারি “শিখা-তরঙ্গ”, ক্যাছুয়াদের সিংহাসনে বসার সুযোগ পেল কারি। একদিন এই লোকের জীবন বাঁচিয়েছে হুবার্ট, কিন্তু আজ রাজা হয়ে সেই কারিই বলছে দরকার হলে কুইলাকে পুড়িয়ে মারবে তারপরও কোনোদিন তুলে দেবে না হুবার্টের হাতে। পাতা হলো নিশ্ছিদ্র ফাদ, অপহৃত হলো মেয়েটা, ওকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠল হুবার্ট। কিন্তু শেষ রক্ষা বোধহয় হলো না, মৃত্যু-উপত্যকায় সদলবলে হাজির হলো প্রতিশোধপরায়ণ কারি। সুতরাং আরও একবার শিখা-তরঙ্গ হাতে নিতে হলো হুবার্টকে। হ্যাগার্ড এর আরেকটি চমকপ্রদ উপন্যাস। নিয়তির কাছে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণের আরেকটি অনন্যসাধারণ কাহিনি।
দুহাজার বছর ধরে অপেক্ষা করছে সে, তার ক্যালিক্রেটিস আসবে। যে দয়িতকে নিজহাতে হত্যা করেছিল, পুনর্জন্ম নিয়ে আসবে সে তার প্রেম গ্রহণ করতে। এল ক্যালিক্রেটিস তাকে অনন্ত যৌবন দেয়ার জন্যে রহস্যময় আগুনের কাছে নিয়ে গেল… তারপর? মৃত্যুর আগ-মুহূর্তে বলে গেছে আয়শা, আবার সে আসবে।অন্তত একবারের জন্যে হলেও সে সুন্দর হবে। কিন্তু কী করে? জানে না লিও ভিনসি, জানে না হোরেস হলি। অবশেষে সত্যিই একদিন দৈব-সংকেত পেল ওরা, আয়শা ডাকছে। দুর্গম পর্বতমালা, দুস্তর মরুভূমি পেরিয়ে রওনা হলো লিও ও হলি। আয়শার খোঁজ কি ওরা পাবে?
এরিক ব্রাইটিজ সলোমনের গুপ্তধন, শী, রিটার্ন অভ শী, অ্যালান কোয়াটারমেইন ইত্যাদি অতুলনীয় কাহিনি যাঁর হাত দিয়ে বেরিয়েছে, সেই হেনরী রাইডার হ্যাগার্ডের আর একটি চমৎকার শ্বাসরুদ্ধকর কাহিনি এরিক ব্রাইটিজ। দ্য প্লেগ ফরাসী বন্দর ওরাওঁ। ১৯৪- সাল। ১৬ এপ্রিল। ডাক্তার রিও বাসা থেকে বেরোতে গিয়ে সিঁড়িতে একটা মরা ইঁদুর দেখতে পেল। এই হলো শুরু। একজন-দুজন করে মরতে শুরু করল মানুষ। আতঙ্কে কুঁকড়ে গেল শহরবাসী। কর্তৃপক্ষ একে প্লেগ বলে স্বীকার করল না। বাড়তে লাগল সংক্রমণ, দলে দলে মরতে লাগল মানুষ। এমনি সময়ে বন্ধ হয়ে গেল শহরের সবগুলো ফটক। তারপর? আমি গুপ্তচর উনিশশো চোদ্দ সালের দোসরা আগস্ট। বেলজিয়াম আক্রমণ করল জার্মানরা, দখল করে নিল পুরো দেশটা। মিষ্টি মেয়ে মার্থা নোকার্ট। ঘরছাড়া হলো পরিবারের সবার সাথে । কাজ নিল সে হাসপাতালে, নার্সের। একদিন চুপিচুপি এল পারিবারিক বন্ধু লাসেল। বুকের মধ্যে কাঁপন ধরিয়ে দিল ওর কথাগুলো: ‘মার্থা, তুমি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে। দেশের জন্যে কিছুই কি করার নেই তোমার?’ বদলে গেল মার্থা নোকার্ট । শুরু হলো ওর স্পাই-জীবন। গল্পের চেয়েও শ্বাসরুদ্ধকর সত্য ঘটনা।
দ্য লেডি অভ ব্লসহোম: জমিদার স্যর জন ফোটরেলের কিছু জমি দখল করতে চান ব্লসহোম অ্যাবির অধ্যক্ষ ক্রেমেন্ট মন্ডন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে নৃশংসভাবে খুন হয়ে গেলেন স্যর জন। তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে সিসিলি জানে না কী করতে হবে। শুধু জানে, এবার ওর পালা—হয় মারা পড়তে হবে বাবার মতোই, নয়তো আজীবন বন্দি থাকতে হবে সেম অ্যাবি-সংলগ্ন আশ্রমে। আপন বলতে মাত্র দু’জন আছে মেয়েটার পালক-মা এমিলিন স্টোয়ার আর প্রেমিক স্যর ক্রিস্টোফার হার্ট|শুরু হলো প্রচণ্ড ক্ষমতাবান ক্লেমেন্ট মন্ডনের বিরুদ্ধে ওদের তিনজনের সংগ্রাম। পদে পদে বাধা, বিপদ আর মৃত্যুর হাতছানি। কী হলো শেষপর্যন্ত? মেরি: প্রিয় পাঠক, কিংবদন্তির নায়ক অ্যালান কোয়াটারমেইনের স্মৃতিকথায় আপনাকে আরও একবার স্বাগতম। তিনি এবার শোনাচ্ছেন তাঁর কৈশোরের গল্প, প্রথম প্রেমের কাহিনী-‘রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে হাজার তারার ভিড়ে আজও ওকে খুঁজি আমি তখন ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি একটা ছায়াকেমেরি ম্যারাইস, আমি ছাড়া যে-ছায়ার কথা ভুলে গেছে। সবাই কে এই মেরি? কী তার কাহিনী? ওর কথা বলতে এত বছর পর কেন মুখ খুলেছেন অ্যালান কোয়াটারমেইন?
ইংল্যান্ডের নরফোক কাউন্টির ডিচিংহাম ডিস্ট্রিক্ট শান্তিতেই কাটছিল আমাদের জীবন, এমনি সময়ে স্পেন থেকে এক লোক এসে খুন করল আমার মাকে। আমি তখন সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ, ডাক্তারি শিখছি। | আমাকেই ছুটতে হলো হত্যাকারীর পিছনে। তারপর? তারপর ঘটনার পর ঘটনা, বিপদের পর বিপদ। কেউ বিশ্বাস করবে, দুই-দুইবার নরবলির পাথর থেকে বেঁচে ফিরে এসেছি আমি? বিশ্বাস করবে, এই আমি পুরো একটি বছর দেবতা ছিলাম আযটেকদের? বিয়ে হয়েছিল আমার সম্রাট মন্টেজুমার মেয়ের সঙ্গে? বিশ্বাস করবে, একমাত্র আমারই জানা আছে কোথায় লুকানো রয়েছে মন্টেজুমার বিপুল ধন-সম্পদ, সোনা? নির্মম নির্যাতন করেও স্প্যানিয়ার্ডরা আমার মুখ থেকে বের করতে পারেনি সেই গুপ্তধনের খবর । আপনি শুধু জানবেন কোথায় কীভাবে পুতি আমরা ওগুলো। হ্যা।