প্রাচীনকাল থেকে মানুষের মনে মীমাংসাহীন এক প্রশ্ন, মহাকাশের পর আর কী আছে? মহাকাশের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য কোনো জগৎ তো থাকতেও পারে। আশার আলো জ্বেলে এগিয়ে যাচ্ছে বিজ্ঞান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে এবং অন্য গ্রহ-গ্রহান্তরেও তা থাকার সম্ভাবনা আছে। নাসার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০১৮ সাল নাগাদ মঙ্গলে মানব-মিশনের কাজের অগ্রগতি হবে। আমরাও ক্রমে নিশ্চিত হতে থাকব, মহাবিশ্বে আমরা একা নই, রয়েছে আমাদের আরও দোসর, সহোদর। এসব বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক পর্যালোচনাই এ বইয়ের মূল প্রতিপাদ্য।
গভীর সমুদ্রের নিচে নিকম কালো অন্ধকার। সূর্যের আলো সেখানে পৌছায় না। সেই ঘন অন্ধকারে দেখা যায় আলােজুল মাছদের। এদের বলে দীপক মাছ। সমুদ্রের ২০০ থেকে ৭০০ মিটার গভীরতায় এই ধরনের মাছ দেখতে পাওয়া যায়। সমুদ্রের নিচের নিকক্ষ অন্ধকারের মাঝে বিচিত্র আকৃতির প্রাণীরা ঘুরে বেড়ায়। তাদের একটি। হলাে আলােড়লা মাছ। এদের দেখলে মনে হয় আলাের বাতি জ্বালিয়ে ঘুরছে মাছগুলাে। আলাের মালা যেন ভাসছে। এসব মাছদের চোখের নিচে, পেটের নিচে এবং লেজের কাছে আলাে জ্বলতে দেখা যায়। ঘন অন্ধকারে খাদ্য শিকারের জৈবিক প্রয়ােজনেই তাদের দেহে এমন করে আলাে জ্বলে।
বনফুল রয়েছে আমাদের চোখের সামনে, কিন্তু কাছের এই ফুলগুলো খুব ভালোভাবে দেখা বিশেষ হয়ে ওঠে না। পথের ধারে, মাঠে-প্রান্তরে, বাড়ির আঙিনায় কতোরকম গাছে কতো ধরনের বনফুলই না ফোটে। যত্ন করে কেউ এসবের পরিচর্যা করে না, নিজের শক্তিতেই তাদের জন্ম আর বিকাশ। অথচ আমাদের জীবনে নানা উপকারে আসে এইসব বনফুল। বিশেষ করে বিভিন্ন রোগ উপশমে বনফুলের রয়েছে বহু ধরনের কার্যকারিতা। তাই বনফুল মোটেই অবহেলা করার নয়। বাংলার অজস্র বনফুল থেকে মাত্র চব্বিশটিকে বাছাই করে এখানে একটা স্তবক তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এমনি আরো কতক স্তবক ক্রমে ক্রমে কিশোর-কিশোরীদের হাতে তুলে দেয়া হবে। এই পরিচিতি যদি তাদের মনোযোগী করতে পারে বনফুলের প্রতি, যত্ন নিতে শেখায় বনফুলের এবং সর্বোপরি প্রকৃতির প্রতি দরদ ও ভালোবাসায় মন ভরিয়ে তুলতে পারে তবেই সার্থক হবে লেখকের পরিশ্রম। তাই আমরা আশা করবো আরো গভীরভাবে কিশোর- কিশোরীরা তাকাবে বনফুলের দিকে, জানতে চাইবে এর পরিচয় আর বৈশিষ্ট্য, দেখবে এর গড়ন আর বাহার। তাহলেই তো বুঝতে পারবে প্রকৃতি আমাদের কতো পরম বন্ধু, আর কতোই-না আনন্দ ও শিক্ষা মেলে ধরেছে আমাদের সবার জন্য। বনফুল বিষয়ে বাংলায় অনন্য এই বইয়ের ছবি ও লেখা সাজিয়েছেন নওয়াজেশ আহমদ, নিজে যিনি প্রকৃতি-বিজ্ঞানী ও নিসর্গপ্রেমী এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রগ্রাহক। এমন বইয়ের তুলনা আর কোথায় মিলবে।"
"বিস্ময়কর ব্যাকটেরিয়া বইটি ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া স্যার কর্তৃক রচিত অনুজীব বিষয়ক বই। বইটিতে অতি ক্ষুদ্র এক একটি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কোথায় নেই ব্যাকটেরিয়া সেটিই বড়ো প্রশ্ন। কারণ পৃথিবীর সর্বত্রই এদের দেখা মেলে। মাটি বলি, পাথর বালি, নদনদী কিংবা সমুদ্র বালি এবং এমনকি মেরু অঞ্চলের বরফেও এদের উপস্থিতি দেখা যায়। মরুভূমির তপ্ত বালু কিংবা উষ্ণ ঝরনাধারায় এদের কোনো কোনোটার বাস, কোনো কোনোটা বাস করে অন্য জীবের দেহের উপর কিংবা দেহের ভেতরও। গাছপালা, প্রাণী কিংবা মানুষের দেহের মধ্যেও এদের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। কেবল উপস্থিতি নয় রীতিমতো সেখানে বাস করে ব্যাকটেরিয়া। মানুষের দেহে যত কোষ আছে তারও দশ গুণ বেশি আছে ব্যাকটেরিয়ার কোষ। প্রচুর সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া বাস করে মানুষের পরিপাক নালিতে। থাকে এরা এমনকি জাবর কাটা পশুর অন্ত্রেও। পৃথিবী পৃষ্ঠের নিচে বেশ গভীরে বাস করে কোনো কোনো ব্যাকটেরিয়া। কিছু ব্যাকটেরিয়া বাস করে মাটিতে কিংবা মৃত জীব বা গাছপালার মধ্যে। এক গ্রাম মাটিতে থাকতে পারে ৪০ মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়ার কোষ। আর বিশুদ্ধ পানযোগ্য এক মিলিলিটার পানিতে থাকতে পারে এক মিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া।"
"১৯৯৪ সালে যখন দ্বিজেন শর্মার 'গহন কোন বনের ধারে' বই আকারে বেরিয়েছিলো তখন ক্লাস ফোরের ছাত্র আমি। তখনও তিন গোয়েন্দার সন্ধানই পাই নি, দ্বিজেন শর্মার এই বইয়ের সন্ধান পাওয়া তো বাতুলতা। পড়ার গন্ডি তখন কেবল ইত্তেফাকের 'টারজান' কার্টুনে এসে পৌঁছেছে। আরো দুই বছর পরে ক্লাস সিক্সে উঠে সর্বপ্রথম মহস্বল শহরের একমাত্র পাবলিক লাইব্রেরীতে যাই; 'আউট বই' পড়ার বদঅভ্যাসের গোড়াপত্তন এখান থেকেই। 'গহন কোন বনের ধারে'-এর প্রথম প্রকাশের প্রায় দুই দশক পরে দিন কয়েক আগে যখন বইটি পড়ি, তখন লেখার ঢং দেখে বুঝতে কষ্ট হয় নি এই বই মূলত আরো বছর তেরো আগেই হাতে পাওয়া উচিত ছিলো। কিশোর-তরুণদের প্রকৃতি ও পরিবেশ সম্পর্কে আগ্রহী করার নৈতিক তাড়না থেকেই বইটি প্রকাশ করেছিলেন লেখক। বিজ্ঞানের খটখটে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত লেখক এমন মমত্ব মিশিয়ে স্বকীয় স্টাইলে উপস্থাপন করেছেন যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। ফলে ঠিক যে বয়েসের উপযোগী করে বইয়ের লেখনী- সে বয়স বহু আগে পেছনে ফেলে বহুদুর পথ চলার পরও বইটি শেষ না করা পর্যন্ত শান্তি পাই নি, যেন এক নিমিষে ফিরে গিয়েছিলাম ফেলে আসা কৈশোরে। মোট তিনটি আলাদা স্বাদের লেখা নিয়ে এ বই। প্রথম লেখা 'সুদূর কোন নদীর পারে'-তে ছোটখাটো একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মোড়কে পৃথিবীতে প্রাণসৃষ্টির আদিপর্ব, বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধি, ওজনস্তরের বিপর্যয়, বিগত শতাব্দীগুলোতে পরিবেশদূষণের তুনলনামূলক মাত্রা, ফুকুয়োকার চাষপদ্ধপদ্ধতি ইত্যাদি চমকপ্রদ বিষয়সমূহ আলোকপাত করা হয়েছে। বইয়ের মূল চরিত্র 'তজব তরফদার' প্রত্যন্ত গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক, যিনি প্রকৃতি- পরিবেশ সম্পর্কে বেশ সচেতন। তবে এ গল্পকে 'নির্ভেজাল বিজ্ঞান কল্পকাহিনী' বলতে লেখক নিজেই অনেকটা সন্দিহান; কেননা গল্পে যে 'সুদূর কোন নদীর পারে'র কথা বলা হয়েছে লেখন সেখানে বিচরণ করেছিলেন ১৯৬৫ এর শীতকালে। আর গল্পে এখানে বিচরণ করতে গিয়েই লেখকের সাথে পরিচয় ঘটে অদ্ভুত চরিত্র 'তজব তরফদার'-এর। ... গল্পচ্ছলে কত-শত অদ্ভুত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-তথ্যের সন্ধান পায় আমাদের কিশোর মন!"