রফিক,সালাম,বরকত,জব্বার,সফিউর এই পাঁচজন ভাষা শহিদের জীবন ও আত্নত্যাগের ওপর নির্মিত পাঁচটি গল্প নিয়ে রচিত ভাষা শহিদের গল্প । প্রচলিত গল্পের চেয়ে এই গল্পগুলোর কলেবর বড়,কারণ লেখক ভাষা শহিদদের পুরো জীবনকে ধারণ করতে চেয়েছেন প্রতিটি গল্পে। যারা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে পুরোপুরি জানতে চান এই গ্রন্থ তাঁদের জন্য । লেখক গল্প বলতে বলতে আমাদের জানিয়ে দিচ্ছেন ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রের উথানপর্বের গল্প ।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের বিভাস রচিত হয়েছে ৫৬টি কবিতা দিয়ে। কবিতাগুলোতে বিধৃত হয়েছে বাংলাদেশের প্রকৃতি, ঋতুচক্র, এই জনপদের মানুষের জীবন-যুদ্ধ, ভাষা ও স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম, স্বাধীনতা-উত্তর সময়কালের আর্থ-সামজিক অবস্থা, স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ। কবি কাজী জহিরুল ইসলামের এ-যাবৎ প্রকাশিত গ্রন্থগুলো থেকে ৫৬টি বাংলাদেশ বিষয়ক কবিতা বেছে নেবার ঘটনাটি কাকতালীয় বা দৈব নয়, এটি প্রায় পরিকল্পিতই। ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারিতে যখন পালিত হচ্ছে কবির ৫৬ তম জন্মদিন তখন তারই রচিত ৫৬টি দেশপ্রেমের কবিতা-সংকলনের চেয়ে বড়ো উপহার আর কী হতে পারে? এনআরবি-স্কলারস পাবলিশার্স প্রতিনিধিত্ব করে দেশের বাইরে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের। তাদের পক্ষ থেকে কবির জন্য এই উপহার। সততা, মানবতা, দেশপ্রেম এবং নান্দনিকতা এই চার স্তম্ভের ওপর নির্মিত কাজী জহিরুল ইসলামের কবিতার উজ্জ্বল প্রাসাদ। “ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল” সেই প্রাসাদেরই একটি সার্থক রেপ্লিকা।
‘ভোরের হাওয়া’ গ্রন্থে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত ১০০টি কবিতা আছে। গ্রন্থের শুরুতে কবি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের ওপর একটি দীর্ঘ ভূমিকা-প্রবন্ধ লিখেছেন যা পাঠকের জন্য বাড়তি পাওয়া। একই ছন্দে, বিশেষ করে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে, এতো অধিক কবিতা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যে বিরল। এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত কবিতাগুলো এবং ভূমিকা-প্রবন্ধ পাঠের মধ্য দিয়ে কাব্যানুরাগী পাঠকেরা একদিকে যেমন মাত্রাবৃত্ত ছন্দের এক জাদুময় জগতে প্রবেশ করতে পারবেন অন্যদিকে চাইলে এই ছন্দটি ভালো করে শিখেও নিতে পারবেন। সৃজনশীল এবং মননশীল চিন্তার এক যৌথ উপহার এই বই। কবি কাজী জহিরুল ইসলাম ছন্দ বিষয়ে একজন সুপণ্ডিত, তিনি শুধু ছন্দের শিক্ষকই নন শুদ্ধ ছন্দে অনবরত রচনা করে চলেছেন একের পর এক সার্থক কবিতা। এর আগে জলধি প্রকাশ করেছে স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত তার শত কবিতার বই “শেষ বিকেলের গান”। শেষ বিকেলের গান-এর মূল থিম ছিল মৃত্যু, এবারের গ্রন্থে বিষয়ের বৈচিত্র থাকলেও মূল সুরটি হচ্ছে তারুণ্য, বিকশিত হবার কাল, তাই গ্রন্থের নামকরণ করেছেন কবি “ভোরের হাওয়া”। ভোরের হাওয়া পড়তে পড়তে পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে ভোরের রোদ ভেঙে উঠে আসা এক পশলা স্নিগ্ধ হাওয়া।
এটি কাজী জহিরুল ইসলামের ২৫তম কবিতা বই। কবি যখন লেখেন, ‘আগুন দেখি না, শুধু দেখি তার ছায়া।/ছায়ার ক্ষমতা যে পেয়েছে টের/ কায়ার দহনে তার পোড়ে না কিছুই, না সুখ না দুঃখ।/ সে এক দৃষ্টি-বেহায়া। তখন পাঠকের চমকে উঠবারই কথা। অল্প কিছু শব্দ, কি যেন শুনিয়ে গেল খুব গোপনে, কোথায় যেন নিয়ে গেল। ছায়াই কি সব, এই ইহকাল? এ কোন দৃষ্টি-বেহায়া? এই গ্রন্থে আছে পরিণত চিন্তার স্ফুরণ। ছোটো ছোটো কথা কিন্তু ধারণ করে আছে সুবিশাল এক একটি ভাবনা। গ্রন্থটিতে সন্নিবেশিত ১০০টি কবিতা মানবতা ও আধ্যাত্মিকতার এক সুবৃহৎ ক্যানভাস। কবি বলেন, ‘বুকের তাপে উঠছে বেড়ে সাপ/অন্ধকারের রূপ দেখেছি/কোন সাহসে গিলবে আমায় অস্বীকারের পাপ?’।
আমাকে অনেকেই অনুরোধ করেছেন আমি যেন ছন্দের ওপর একটি বই রচনা করি । আমিও অনেকবার ভেবেছি কবিতার ৩টি ছন্দ নিয়ে খুব সহজ-সরল ভাষায় একটি বই লিখবো । যাতে তরুন এবং কোন কোন প্রবীন খুব সহজেই শিখে নিতে পারে । ছন্দ শেখানোর কাজটি এখন আমি পেশাগত ভাবেই করি ।ক্লাস উপকরন হিসেবে কিছু লিখতে হয়েছে ।সেগুলোকে একটু ব্যখ্যা -বিশ্লেষন করে কিছু যোগ করলে হয়তো একটা বই হয়ে যাবে । কিন্তু এই কাজটিতে আমি তেমন উৎসাহ পাই না । কেন পাই না তা নিয়ে কখনো ভাবিনি ।আমাকে যখন কোন সম্পাদক ফোন করে বলেন ,অমুক বিষয়ের ওপর একটি প্রবন্ধ দিন,কখনো দেই কখনো দেই না ।দিলেও খুব আগ্রহ নিয়ে তা লিখিনা ।কিন্তু যদি বলেন,অমুক বিষয়ের ওপর একটি গল্প বা কবিতা দিন,আমি খুব উৎসাহ বোধ করি ।এই উৎসাহ এবং নিরুৎসাহ নিয়ে কখনো ভাবিনি ।কিন্তু ঘটনাটি বার বার ঘটে চলছে ।একদিন এ নিয়ে ভাবলাম এবং বুঝলাম ,সৃজনশীল কাজের প্রতি আমার একটা সুস্পষ্ট পক্ষপাত আছে এবং আমি এও জানি আমার মননশীল কাজও একবারে মন্দ হয় না ।কিন্তু ভিতর থেকে আমি যে উত্তর পাই,তা হলো ঈশ্বর আমাকে সৃজনশীল কাজ করার এসাইনমেন্ট দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।