একটি দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ঐ দেশের সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষের অবদান থাকে, সকলের অবদানেই তো জন্ম নেয় একটি স্বাধীন দেশ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের অংশ গ্রহণের পাশাপাশি অংশগ্রহণ করে এদেশের আদিবাসীরাও। অত্যাচার-নির্যাতনের দিক থেকেও আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের মাত্রা কোন অংশে কম ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর বাঙালি জাতির পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সনাতন সব অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত সমরদক্ষ পাকিস্তানী সেনাদের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে বাঙালি ছাড়াও অর্ধ-শতাধিক জাতিগোষ্ঠীর মানুষ- সাঁওতাল, চাকমা, মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, গারো, হাজং প্রভৃতি; অসংখ্য আদিবাসী নারী-পুরুষ এদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশ নিয়েছে প্রত্যক্ষভাবে।
প্রখ্যাত রাজনীতিক আতাউর রহমান খান বাংলার ইতিহাসে তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি রচনাকর্মের জন্যও সমাদৃত। তাঁর রচনায় ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ হয়ে ওঠে নৈর্ব্যক্তিক গুণসমৃদ্ধ। তিনি ইতিহাসের বিশ্বস্ত বয়ান উপস্থাপন করেন সরল ভাষায় কিন্তু চিন্তার গভীরতায়। অবরুদ্ধ নয় মাস তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালের স্মৃতিচারণ। এই বই যেমন আতাউর রহমান খানের জীবনের একটি পর্ব ধারণ করেছে, একই সঙ্গে জাতীয় ইতিহাসের বিশ্বস্ত দলিল হয়ে উঠেছে। মহান একাত্তরের বহু অজানা তথ্য এই স্মৃতিচারণে পাওয়া যাবে যা মুক্তিযুদ্ধের সত্যসন্ধ ইতিহাস নির্মাণেও ভূমিকা রাখবে।
আমার এই মুক্তিযুদ্ধ ফিরে দেখা গ্রন্থের নেপথ্যে উৎসাহ জুগিয়েছেন সহধর্মিণী সুলতানা নাদীরা বেগম নাজনীন এবং দুই মেয়ে নাদিয়া ইসলাম ও নিতিয়া ইসলাম। এদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী ইমরুল চৌধুরী। তাঁদের উৎসাহে স্মৃতি নির্ভরশীল ঘটনাবহুল বই রচনায় সাহস পেয়েছি। এই বই ৬৬৮২২টি শব্দমালায় রচিত। চল্লিশ বছর পেছনের ঐতিহাসিক ঘটনা দিনের পর দিন চর্চা, গর্ব, অহংকারের সুরক্ষায় যেন একটি টাটকা স্মৃতি হয়ে গেছে। 'ঐতিহ্য' সৃজনশীল প্রকাশনায় বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে এর প্রধান নির্বাহী জনাব আরিফুর রহমান নাইমের গভীর আগ্রহে ও উৎসাহে বইটি লেখায় আত্মনিয়োগ করি এবং তাঁরই প্রচেষ্টার ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত আরও একটি দলিল হিসেবে বইটি প্রকাশ পেল। এর জন্য আমি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ ও তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এ ছাড়া ধন্যবাদ প্রাপ্য আমার সাবেক সিনিয়র সহকর্মী বাংলাদেশ বেতারের প্রাক্তন পরিচালক ও নাট্যকার কাজী মাহমুদুর রহমানের-তাঁর আন্তরিক সহযোগিতার জন্য।
এই গ্রন্থে আমার পাঁচ বছরের ইস্তাম্বুল-জীবনের কিছু মুহূর্তকে কখনো গদ্যে, কখনো পদ্যে, কখনোবা স্বপ্নের ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। জেগে থেকে ইস্তাম্বুলের যা কিছু দেখেছি, তার পাশাপাশি এই শহরে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোর কদর না করলে এই স্মৃতিকথা অপূর্ণ থেকে যেত। বিশেষ করে এই পাঁচ বছরের প্রায় অর্ধাংশ আমাকে চলনশক্তিহীন জীবন যাপন করতে হয়েছে, এখনো তা-ই। হুইলচেয়ারে করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ ইদানীং আর খুব একটা হয় না। তাই লুসিড ড্রিমিং অনেকটা ভরসা…