পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার মত বাংলা ভাষাতেও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে-ওয়াসাল্লাম-এর উপর অসংখ্য গ্রন্থ রচিত ও সংকলিত হয়েছে। হযরত (দ.)-এর জীবন ও আদর্শ নিয়ে রচিত বর্তমান গ্রন্থ নবী পরিচয় ইসলামী চিন্তাবিদগণ কর্তৃক প্রশংসিত একখানা গ্রন্থ। এই গ্রন্থে লেখক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (দ.)-এর আদর্শ ও কর্মময় জীবনকে যেভাবে সুসংগত যুক্তির মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন তা বিরল। লেখক মহানবীর জীবন ও আদর্শের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের কষ্টি পাথরে যুক্তির আলোকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা যেকোন বিদগ্ধজনকেই অনায়াসে আকৃষ্ট করে। গ্রন্থটিতে বিশ্বনবীর পরিচয় সার্থকভাবে বর্ণিত হয়েছে। ফলে এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীসহ সকল ধর্মের মানুষের কাছেই তথ্যপূর্ণ ও সাবলীল গ্রন্থ হিসেবে দেখা দেবে।
ঘরে-বাইরে (১৯১৬) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস।এটি চলিত ভাষায় লেখা রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯১৬ সালে সবুজপত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। স্বদেশী আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত এই উপন্যাসে একদিকে আছে জাতিপ্রেম ও সংকীর্ণ স্বাদেশিকতার সমালোচনা, অন্যদিকে আছে সমাজ ও প্রথা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নারী পুরুষের সম্পর্ক; বিশেষত পরস্পরের আকর্ষণ-বিকর্ষণের বিশ্লেষণ।
চতুরঙ্গ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস। এটি সাধুভাষায় লিখিত রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ উপন্যাস। এটিকে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে বিবেচিত হয়। চতুরঙ্গ উপন্যাসের চারটি অঙ্গ- জ্যাঠামশাই ,শচীশ ,দামিনী এবং শ্রীবিলাস। উপন্যাসটি ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়।শ্রীবিলাস (বর্ণনাকারী) নামে এক যুবকের যাত্রা, তাঁর সর্বোত্তম বন্ধু, দার্শনিক এবং পথপ্রদর্শক শচীশের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ, দামিনী বিধবা এবং আদর্শবাদী ব্যক্তি জ্যাঠামশাইয়ের গল্প নিয়ে উপন্যাসটি লিখিত
বাংলাদেশের গ্রাম সমাজ গত কয়েক শতকে যে বিপুল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তার স্বরূপটিকে চিহ্নিত করবার চেষ্টা করা হয়েছে এই বইটিতে। গ্রাম শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে সবুজ প্রান্তর, দিগন্তজোড়া জমিতে ধান চাষ, নদী বা পুকুরে মাছ চাষ, কৃষিকাজে মগ্ন কৃষক, মানুষ ইত্যদি। সুজলা—সুফলা, শস্য—শ্যামলা গ্রামের গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের বয়ান আমরা গল্প-উপন্যাসে পাই, তার কতটুকু সত্যিকারের গ্রামের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে? বা, গ্রামকে এককভাবে ‘কৃষিভিত্তিক সমাজ’ হিসেবেই উপস্থাপন করা গবেষণাগুলোতে গ্রামের সংজ্ঞায়ন কতটুকু কার্যকর আছে? গ্রামের বদলটি শুধু রাস্তাঘাট ও যানবাহন, রাইসমিল, ইট ভাটা বা ঘর—দালানের সংখ্যা দিয়েও বোঝা যাবে না। গ্রামের ক্ষমতা কাঠামো এবং সমাজ সম্পর্কেও বিপুল বদল এসেছে। যাতায়াতের বিকাশের কারণে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক শিল্প ও কৃষির বিস্তার, পর্যটনের বিকাশ, প্রবাস থেকে আসা বৈদেশিক মুদ্রা প্রভৃতি মিলে বাংলাদেশের গ্রাম সমাজকে মৌলিকভাবেই বদলে দিয়েছে। এই বদলে যাওয়া আবহেই বাংলাদেশের গ্রামকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে চেষ্টা করেছে ‘একুশ শতকের গ্রাম ও কৃষক সমাজ’ গ্রন্থটি। এই কাজটি করতে গিয়ে অনেকগুলো নতুন প্রশ্নেরও মুখোমুখি হয়েছেন লেখক। গ্রামীণ জনগোষ্ঠী গ্রামকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেন? শহুরে সাহিত্যিক বা গবেষকের উপস্থাপিত গ্রাম কতখানি প্রতিফলিত করে গ্রামের বাস্তবতাকে? নৃবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, অথর্নীতিবিদ কিংবা রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন, এমন সকলেই এই গবেষণাটি থেকে প্রয়োজনীয় অনেক অন্তর্দৃষ্টির সন্ধান পাবেনগ্রন্থের বিষয়বস্তু।
উত্তম উপন্যাসের মতো এই উপন্যাসের অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্য পাঠককে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করে। পুরো বইখানিতে ঘটনাপ্রবাহ একইভাবে আন্দোলিত হয়েছে। উপন্যাসের চরিত্রগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য খুশবন্ত সিং তাদেরকে অত্যন্ত জাঁকজমকের সাথে বেগবান করেছেন। সেই সঙ্গে বেগবান করেছেন তাদের ভালোবাসা ও প্রতিশোধ স্পৃহা,যা জড়িয়ে আছে দৈনন্দিন কাজের সাথে। গ্রামীন সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের ঔদ্ধত্য ও সাহসিকতা সমগ্র কাহিনীতে বিধৃত হয়েছে। ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের রাজনৈতিক বিপ্লবের পটভূমি ও বিপ্লবপরবর্তী সময়ে তাদের ভেঙে যাওয়া জীবনধারার ঘটনাবলী অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে উপন্যাসখানিতে। এটা শুধু শ্রমসাধ্য ও অতি দক্ষতায় সৃষ্ট গল্প-কাহিনী নয়, সামাজিক দলিল হিসাবে এর মূল্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এই দলিলে স্পষ্টভাবে বিধৃত হয়েছে পাকিস্তান সৃষ্টিসহ ব্যাপক উত্থান-পতনের কাহিনী। ঐতিহাসিক, সমাজ-বিজ্ঞানী এবং সাধারণভাবে মানব বিষয়ে উৎসুক ছাত্রের কাছে বইখানি খুবই প্রাসঙ্গিক।