ডুবসাঁতার দিয়ে সারফেসের কাছাকাছি পৌছুতেই বরফে ঠুকে গেল রানার মাথা। বিস্মিত হয়ে উপরে তাকাল ও, পরক্ষণে আঁতকে উঠল আতঙ্কে ভয়াবহ তুষার ঝড় জমিয়ে দিয়েছে জলাশয়ের উপরিভাগ— অন্তত চার ইঞ্চি পুরু হয়ে জমেছে বরফের আস্তর! ভেসে ওঠার কোনও উপায় নেই। আর্কটিকের পানিতে ডুবে মরতে চলেছে ও। আর তখুনি অনেক নীচে কী যেন একটা নড়ে উঠল ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকাল রানা। সাদাটে তিনটে আকৃতি… একটা ডুবোগুহা থেকে তীরবেগে বেরিয়ে এসেছে। পানির মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসছে অপরদিকে কে লক্ষ্য করে। রাক্ষুসে তিন গ্রেন্ডেল! হাঁ করা মুখের ভিতর চকচক করছে ধারালো দাঁতের সারি! ভয় পেল না রানা, চমকেও উঠল না, অদ্ভুত এক নির্বিকার ভাব ভর করেছে ওর মধ্যে। শান্ত ভঙ্গিতে মেনে নিল ভাগ্যকে। তাহলে ডুবে মরা কপালে নেই আর!
এত বড় বিপদে খুব কমই পড়েছে মাসুদ রানা। এত বড় অভিযোগের আঙুলও খুব কমই উঠেছে ওর বিরুদ্ধে। আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে ও। কী, চমকে গেলেন? আগে পুরোটা পড়ুনই না! ভয়ঙ্কর জটিল এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে ও। ওসামা বিন লাদেনকে পিছনে ফেলে দুনিয়ার সমস্ত মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টের এক নম্বরে উঠে এসেছে মাসুদ রানার নাম, ওর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে দুই কোটি ডলার! পালিয়ে বেড়াচ্ছে রানা, একা, আহত অবস্থায়। সাহায্য করার কেউ নেই। একটাই পথ সামনে-নিজের সেই নিষ্ঠুর রূপটা আরেকবার সবাইকে দেখিয়ে দেয়া। পাঠক, দমবন্ধ করে বসুন। শুরু হচ্ছে যুদ্ধ।
একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভাল আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু রিসিভ করা হয়েছে। অত্যাশ্চর্য এক সিগ্নাল-ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহের দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে টু মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।