সরদার ফজলুল করিম সারা জীবন মানুষের সঙ্গে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ, সমকাল, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ও লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তা, অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ের রচনায়। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো তে প্রকাশিত এমন ২১টি নির্বাচিত অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে এ বই। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা দিক। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকটের কথা। বাদ পড়েনি ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিসহ নানা প্রসঙ্গ। লেখকের মনীষার পরিচয়বহ রচনাগুলো বর্তমান সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি ভবিষ্যত্কালের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন ইতিহাসকে বোঝার পাশাপাশি বইটি দেশের একজন সেরা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব্বকে চিনতেও পাঠককে সহায়তা করবে।
"বেকার, হতাশাগ্রস্ত তরুণ ফাহাদ আবির। চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। প্রেমিকা নাবিলা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে কিন্তু তাতে তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় না। একপর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ফাহাদ। পরামর্শের জন্য একজন মনোচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করে। চলে যায় গ্রামে মায়ের কাছে। তাতে যদি তার মানসিক স্বাস্থে্যর উন্নতি হয়, এই আশায়। এরপর ঝড়ের বেগে তার জীবনে ঘটতে থাকে একের পর এক দুর্ঘটনা। এই জীবন তার আর ভালো লাগে না, পালাতে চায় সে। তখন তার জীবনে আবির্ভাব হয় মুনিয়ার। কে এই মুনিয়া? আর শেষ পর্যন্ত ফাহাদ কি পেরেছিল জীবন থেকে পালাতে? নাকি তার পথ পরিবর্তন করেছিল? জানতে হলে পড়তে হবে এই উপন্যাস। "
অর্থনীতিবিদ্যা কোনো সমরূপ জ্ঞানশাস্ত্র নয়। এর মধ্যে আছে বহুধারা—চিন্তাদর্শন ও রাজনীতির বৈচিত্র্য, ভিন্নতা ও সংঘাত। অর্থশাস্ত্রের ইতিহাস তাই একই সঙ্গে দর্শন ও রাজনীতিরও বিষয়। অর্থশাস্ত্রের ইতিহাস নিয়ে বাংলায় মানসম্পন্ন বই দুর্লভ, আর বাংলাদেশে প্রাপ্ত ইংরেজি ভাষার বইগুলোরও আছে নানা সীমাবদ্ধতা। এই পরিপ্রেক্ষিতে লেখক বর্তমান বইয়ে প্রাচীন ভারত, চীন, আরবসহ প্রাচ্যের অর্থশাস্ত্রবিষয়ক চিন্তার পর্যালোচনা করেছেন। এরপর বিশ্লেষণ করেছেন পাশ্চাত্যে পুঁজিবাদের বিকাশের মধ্যে একে একে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন ধারা। এর মধ্যে রয়েছে ক্ল্যাসিক্যাল, মার্ক্সীয়, নয়া ক্ল্যাসিক্যাল আর কেইনসীয় অর্থশাস্ত্র এবং এগুলোর সম্প্রসারণ, পরিমার্জন ও সমালোচনা। পাশাপাশি তুলে ধরেছেন ঐতিহাসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পটভূমিও। সাবলীল ভাষা আর স্বচ্ছ চিন্তার প্রামাণিক, কিন্তু স্বাদু পাঠের এই বই অর্থশাস্ত্র নিয়ে আগ্রহী পাঠক এবং শিক্ষার্থী সবার জন্য অবশ্যপাঠ্য।
মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ থেকে আসা মণিপুরি তরুণী অনিমা সিংহ। ঢাকা শহরে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এসে সাথি হিসেবে পায় আরেক উন্মূল তরুণী শীলাকে। এই আলোকিত জনমুখর চকচকে শহরে দুটি মেয়ের টিকে থাকার নিত্যদিনের সংগ্রামে নাটকীয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে অনেকেই। এদের মধ্যে আছে পড়তি নায়িকা মোহিনী চৌধুরী, থিয়েটারকর্মী চিশতী আর সেলিব্রিটি অভিনেতা আনিস জুবের। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পেছনে এক এঁদো গলি থেকে বেরিয়ে ক্রমে এক রঙিন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটতে থাকে তাদের। কিন্তু সেই দুনিয়া কি সত্যি রঙিন? সেই একই কমলগঞ্জের আরেক মণিপুরি তরুণী তারাল্লেই শৈশব থেকে মনের মাঝে ঠাঁই দিয়েছে এলাকার বীরপুরুষ গিরীন্দ্রকে। বড় হয়ে স্বপ্নের মানুষটিকে যখন নিজের করে পেল, তখন সে-ও কি আসলে সুখী হতে পেরেছিল? গল্পকার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত তানজিনা হোসেন তাঁর এই প্রথম উপন্যাসে এসব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। লেখকের মায়াবী গদ্যের সঙ্গে মণিপুরি সংস্কৃতির অনাস্বাদিত জগতেও পাঠক আপনাকে স্বাগত!
সমগ্র বাংলা কথাসাহিত্যের বিচারে হাসান আজিজুল হক এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং বিরলদৃষ্ট প্রতিভা। তাঁর ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’-এর মতো ছোটগল্প আর আগুনপাখির মতো উপন্যাস তাঁকে বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় করে রাখবে। তরুণ গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মাসউদ আহমাদ ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে কিছু নিবিড় সময় কাটিয়েছেন। সে সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও স্মৃতিধর্মী রচনা। এই প্রথম এগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হলো। বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন কালপর্বের সৃষ্টিসম্ভারের মূল্যায়ন যেমন বইটিতে আছে, তেমনি আছে সমকালীন সাহিত্যের সমস্যা নিয়ে পর্যবেক্ষণও। আছে লেখকের জীবনস্মৃতি ও নিজের লেখা নিয়ে অন্তরঙ্গ আলাপ। বাদ যায়নি সমাজ সমস্যার আলোচনাও। এসব বিষয়ে হাসান আজিজুল হকের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গির অকুণ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে এই বইয়ের অন্তভুর্ক্ত নানা স্বাদের রচনাগুলোর মধ্য দিয়ে।
আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় অলক্ষ্যে যুক্ত হয়ে পড়ল কয়েকজন মানুষ। লোকলজ্জায় গুটিয়ে গেছে হামলাকারীদের পরিবার। যার লাশ আনতে যাবে তারা সে আত্মীয়, নাকি জঙ্গি? শাহরিয়ারকে দাফন করার ইচ্ছায় সাফা ছুটে মরছে। ভাইবোনের আবেগের বন্ধন তাদের। শাহরিয়ারের সঙ্গে আরেক সুতোয় বাঁধা দিলরুবা, দিলরুবার সঙ্গে শফি। বিপরীত এ বন্ধন আবেগের, উপলব্ধির, দায়ের। শফি গৃহশিক্ষক। নিত্য সে তরুণদের উন্মোচিত মন দেখতে পায়। শফি কল্পনাজীবীও। দেখতে পায়, ভূগোল আর ইতিহাস পেরিয়ে কার কার যে আশনাই জীবন্ত হয়ে আছে তার চারপাশের মানুষের মনের গভীরে। দুনিয়াজুড়ে ছড়ানো সেই মাকড়সার জালে একেকটা মানুষ আটকে আছে পোকার মতো। কার দায়ই-বা নিতে পারে সে, নিছক তার কল্পিত চরিত্র আবু ইসহাককে মুক্তির অস্পষ্ট এক পথ দেখিয়ে দেওয়া ছাড়া?