খ্যাতিমান সাহিত্য সম্পাদক আবুল হাসনাত যে ‘মাহমুদ আল জামান’ নামে কবিতা লিখতেন, এ তথ্য যেমন অনেকের অজানা, তেমনি বহু অজানা তথ্যের সমাবেশ ঘটেছে তাঁকে নিয়ে লেখা কিছু আন্তরিক রচনার এ সংকলনে। ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী থেকে আবুল হাসনাতের কন্যা দিঠি হাসনাত পর্যন্ত ১৯ জন কবি ও গদ্যকারের লেখায় ফুটে উঠেছে সদ্য প্রয়াত কবি-শিশুসাহিত্যিক, চিত্রসমালোচক, সম্পাদক ও সংস্কৃতিকর্মী আবুল হাসনাতের ব্যক্তিস্বরূপ ও শিল্পসাধনা। নানা ভূষণের অন্তরালে যে সহজ-প্রাণোচ্ছল-অসাধারণ মানুষ ছিলেন আবুল হাসনাত, তার পরিচয় পাওয়া যাবে নিবেদিত এই কটি লেখায়। বিরূপ বিশ্বে নিয়ত একাকী মানুষের সংকট-সংগ্রাম আর স্বপ্ন ফুটে উঠেছে সবার স্মৃতিতে, অনুভবে। সেই সঙ্গে আবুল হাসনাতের নিজের কবিতা ও গদ্যের সংযোজন পাঠকের সঙ্গে তাঁর লেখনশৈলী ও সাহিত্যভুবনের পরিচয় ঘটাবে। আপনজনদের একান্ত আবুল হাসনাতের প্রতিকৃতি এ বইয়ের সূত্রে সবার কাছে বিশ্বস্তভাবে ফুটে উঠবে নিঃসন্দেহে।
"নিরীহ একটা পাখিকে কে যে বিষ খাওয়াল! কেনই-বা খাওয়াল? গ্রিজলি হিলে কি সত্যি সত্যি দানব ভালুক বিচরণ করে? এখানে-ওখানে ছড়িয়ে আছে ওগুলো কার পায়ের ছাপ? মিউজিয়াম থেকে কে সরাল পাবলো পিকাসোর মহামূল্যবান পেইন্টিং? জায়ান্টস রিজের বরফ-দানব কি সত্যিই তার কয়েক হাজার বছরের ঘুম থেকে জেগে উঠেছে? কেনই-বা এমন তাণ্ডব বাধিয়েছে ওটা? মাথা ঘোরানো প্রশ্ন, দমবন্ধ উত্তেজনা আর দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চারে ভরা এমনই চারটি রহস্যের সমাধানে নেমেছে অয়ন-জিমি। তাদের বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও কর্মনৈপুণ্যের পরিচয় গল্পগুলো। "
সুখ ও প্রাপ্তি ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে মানুষের জীবন নিরন্তর সংগ্রামের। এই বইয়ের গল্পগুলো যেন অতল সমুদ্রের মাঝখানে বিকল হওয়া একেকটা নৌকা। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসেই চলেছে—উদ্দেশ্যহীন, কূলকিনারাহীন। এখানে প্রেম নেই, আশা নেই। আছে এক ঘোরলাগা গোলকধাঁধার ক্ষয়ে যাওয়া ধূসর জগত্। যে জগতে জীবন হোঁচট খায় পদে পদে। ভেঙে পড়ে চেতনার সব প্রাচীর। মানসিক টানাপোড়েন, অসহায়ত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, নৈতিক স্খলন, অবক্ষয়, সংশয় ও মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো আনিসুর রহমানের গল্পে উঠে এসেছে। এসব গল্পে সময় অলস, স্থবির। সিসিফাসের নিয়তি নিয়ে সবকিছু যেন ফিরে আসে একই জায়গায় বারবার।
প্রফেসর তিবুতি লামা। অংশ না নেওয়ার পরও কোনো একটি আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অনুষ্ঠিত প্রতিটি খেলায় আন-অফিশিয়ালি চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল তাকে। সত্যি কি ঘটেছিল ঘটনাটি? নইলে অদ্ভুতদর্শন এই মানুষটিকে ‘থিঙ্কিং মেশিন’ কেন বলা হবে? ঘটনাচক্রে থিঙ্কিং মেশিন প্রফেসর তিবুতি লামাকে এমন এক জেলখানায় আটক করা হয়েছে, যেখানে আসামিরা সবাই মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত। সেখান থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে পালিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন তিনি। এখন? এতগুলো সতর্ক চোখ এড়িয়ে ‘কুখ্যাত’ ১৩ নম্বর সেল থেকে কীভাবে পালাবেন প্রফেসর? ...দেশের খবরের কাগজগুলো মেতে উঠল এক ভুতুড়ে গাড়ি নিয়ে। গাড়িটাকে ‘ফাঁদ’-এর এ প্রান্ত থেকে শুধু ঢুকতেইদেখা যায়, ও প্রান্ত থেকে আর বেরোতে দেখা যায় না। সমস্যা কোথায়—রাস্তায়, না গাড়িতে? রহস্যভেদের দায়িত্ব নিলেন প্রফেসর।পাঠক, এক মলাটে দুটি আশ্চর্য কাহিনি। যাত্রা শুরু করুন প্রফেসর তিবুতিলামার সঙ্গে।
ষাটের দশকে ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছেন শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদ, ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন একান্ত সুহৃদ। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়ে জনতাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে একান্ত প্রেরণা ছিলেন এই গণনায়ক। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান এবং তাঁদের অস্ত্রভাণ্ডার সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি, যার পরিণাম হয়েছে ভয়াবহ। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানিরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর হত্যা করেছে। সাংস্কৃতিক কাজগুলোর সূত্রে শহীদ আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ছিল এ বইয়ের সম্পাদক মতিউর রহমানের। ছিল অপার মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধানের ৫০ বছর পূর্তিতে এ বই। আলতাফ মাহমুদের একান্ত আপনজনদের লেখাগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরবে ব্যক্তি ও সুরকার আলতাফ মাহমুদকে; সেলুলয়েডের পর্দার মতো সামনে তুলে ধরবে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো। নবীন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাঠক ও গবেষকদের আলতাফ মাহমুদকে জানার তৃষ্ণা মেটাবে এ বই।
জীবদ্দশায় মুনীর চৌধুরীর কোনো গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তিনি ছোটগল্প লিখেছেনও কম। সাহিত্যজীবনের প্রথম দিকে তরুণ বয়সে লেখা এসব গল্প। ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৮ সাল—মোটামুটি এই কয়েক বছর তাঁর ছোটগল্প লেখার সময়। গল্পগুলো ওই সময় প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন পত্রিকায়। সংখ্যার বিচারে অধিক না হলেও সেখানে তাঁর প্রতিভার পরিচয় প্রবলভাবে উপস্থিত। মুনীর চৌধুরীর লেখা ৯টি গল্প নিয়ে এই বই। সমাজের শোষণ-পীড়ন ও বঞ্চনা, কুসংস্কার ও ধর্মের অপব্যবহার, সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান, দুর্ভিক্ষকালে নিরন্ন মানুষের অসহায়ত্ব এবং নর-নারীর হৃদয়ঘটিত সম্পর্ক—গল্পগুলোর প্রধান উপজীব্য। প্রগতিশীল সমাজচেতনার পাশাপাশি লেখকের কৌতুকবোধ আমাদের সমসাময়িক কথাসাহিত্যের ধারায় মুনীর চৌধুরীর গল্পগুলোকে অনন্যতা দিয়েছে। নাট্যকার ও সাহিত্যসমালোচক পরিচয়ের বাইরে পাঠক গল্পকার মুনীর চৌধুরীকে আবিষ্কার করবেন এই বইয়ে।