"নদীগুলো আজ অবিরত কাঁদে বালুচরে বেঁধেছে বুক, দু-ফোঁটা যা অশ্রু আছে চৈত্রের খরা পান করে নিমিষে। মেঘকন্যা লুকিয়ে থাকে সারাক্ষণ নিত্য তাদের ভয়, সূর্যটা কখন কুড়ে-কুড়ে খায় ও মেয়ে তুমি কেন কাঁদো? প্রেম এখন কৃত্রিম নেশা বেশ্যাপনা বেশিŇ বদলে যাওয়ার সময় এখন অশ্রæ ফেলো মুছে নদীর সাথে মিতালি করে নদীকে করো রাজি যুদ্ধে চলো ভেঙে ফেলার জঞ্জাল যা কিছু।" স্বপন বিশ্বাসের প্রিয়তমা প্রেমা' কাব্যগ্রন্থে মোট ৪৮টি কবিতা রয়েছে। সবগুলো কবিতাই প্রেমের-ভালোবাসার। অত্যন্ত নিপুণভাবে কবি শব্দ, ছন্দের রূপকে তার ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। এটি কবি স্বপন বিশ্বাসের প্রকাশিত প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ। বইটি পাঠকপ্রিয়তা পাবে আশা করছি। --প্রকাশক
"রাজাকারের কর্মকাণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় চার দশকের তথ্যানুসন্ধান ও গবেষণার সূত্রে তাজুল মোহাম্মদ ঘুরেছেন জনপদ থেকে জনপদে, আহরণ করেছেন মাঠ পর্যায়ের তথ্য, দীর্ঘ দিনের একনিষ্ঠ ইতিহাস-চর্চায় তিনি নিজেকে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন গোটা দেশের বাস্তবতার ছবি তার চিত্তপটে যেমনভাবে উদ্ভাসিত হয়, তেমন আর কারো ক্ষেত্রে বলা যাবে না। একাত্তরে পাকবাহিনীর সহযোগী-গোষ্ঠী, যারা বহু নির্মমতা ও নৃশংসতার জন্য দায়ী, রাজাকার অভিধায় সাধারণভাবে পরিচিত, তাদের দেশব্যাপী কর্মকাণ্ডের খোজ তাজুল মোহাম্মদের মতো করে আর কেউ রাখেন না। ফলে তাজুল মোহাম্মদের রাজাকারের কর্মকাণ্ড গ্রন্থ কোনো অঞ্চল বা কতক ঘটনার বিবরণ কেবল নয়, একাত্তরে নয় মাস জুড়ে সারা দেশে যেসব নৃশংসতা ঘটিয়েছে পাকবাহিনীর সহযোগীরা তার সুনির্বাচিত ভাষ্য এখানে উপস্থাপিত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কিত তথ্য গবেষক স্বয়ং জেনেছেন প্রত্যক্ষদর্শী কিংবা শহীদের নিকটজনের সঙ্গে আলাপচারিতার মাধ্যমে, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। ফলে ইতিহাসের ঘটনা শুধু নয়, ইতিহাসের সাক্ষ্য হয়েছে এই গ্রন্থ, সেইসাথে নিছক বর্ণনা নয়, হয়েছে মানবতার দলিল।
এ সময়ের মুক্তচিন্তার একজন সাহসী মানুষ হোসাইন কবির। বিদ্যায়তনিক বিষয়সহ সমাজ, রাজনীতি শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক লেখা নিয়ে এটি তাঁর প্রথম প্রবন্ধগ্রন্থ। গ্রন্থের প্রবন্ধসমূহ বিষয়ের দিক থেকে নানা বৈচিত্রের হওয়া সত্ত্বেও একই ঐক্যসূত্রে সুসংবদ্ধ। বিষয়ের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও উচ্চারণে লেখক স্পষ্টভাষী, নিঃসঙ্কোচ, সাহসী ও আপোষহীন।
এই পাঁচটি বছরে প্রতিবারই প্রকৃতিতে ফাগুন এসেছে, বসন্তও এসেছে— জানো তো? ফাগুন মাসেই জন্মেছিলাম কিনা, তাই ফাগুনকে ভুলতে পারি না। শুধু সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষটির দেখা পাইনি— একটি বারের জন্যও না; মনেও করেনি সে। —এভাবে বলো না, প্লিজ! —তা ঠিক, এভাবে বলে আর কী লাভ? কিন্তু খুব মিস করি, জানো? বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললে, ‘আজও মনে আছে তোমার?’ —থাকবে না কেন? আমি তো কিছু ভুলতে চাইনি। চাইলে হয়তো ভুলে যেতাম।
অশ্রুত একুশ’ বাংলাদেশের মফস্বল শহরের এক প্রতিভাদীপ্ত তরুণের আশ্চর্য আত্মবীক্ষণ। লেখক শাকিল রেজা ইফতি এই আত্মকাহিনীতে বর্ণনা করেছেন ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্রে হালবিহীন ভাঙা জাহাজের এক বিপর্যস্ত নাবিকের দুঃসাহসী
বাংলাদেশের এক যুবকের কথা ভাবি যে দূরের ছােট্ট দ্বীপ দেশ কিউবার দিকে কৌতূহলে তাকায়। মাত্র বছর বত্রিশের এক তরুণ ক্যাস্ত্রো তার সহযােদ্ধাদের নিয়ে পরাক্রমশালী আমেরিকার একেবারে নাকের ডগায় ঘটিয়ে ফেলেছিলেন এক সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। তারপর আমেরিকার অবিরাম বিরােধিতা আর চোখ রাঙানির ভেতরও টিকিয়ে রেখেছেন সেই বিপ্লবের মন্ত্রকে। একসময় নদীর পাড় ভাঙার মতাে পৃথিবীর চারদিকে এক এক করে শােনা গেল সমাজতান্ত্রিক চরাচরের ভাঙনের শব্দ; কিন্তু তবু ক্যাস্ট্রো তার নিঃসঙ্গ দ্বীপটিতে জ্বালিয়ে রাখলেন সেই পুরনাে স্বপ্নের বাতিঘর। যুবকের জানতে ইচ্ছা হয় কী করে পারলেন তিনি? ক্যাস্ট্রোর নিজ মুখে সে তখন শােনে নাগরদোলায় চড়া তার আশ্চর্য জীবনের গল্প।
এই গ্রন্থে আমার পাঁচ বছরের ইস্তাম্বুল-জীবনের কিছু মুহূর্তকে কখনো গদ্যে, কখনো পদ্যে, কখনোবা স্বপ্নের ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। জেগে থেকে ইস্তাম্বুলের যা কিছু দেখেছি, তার পাশাপাশি এই শহরে ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোর কদর না করলে এই স্মৃতিকথা অপূর্ণ থেকে যেত। বিশেষ করে এই পাঁচ বছরের প্রায় অর্ধাংশ আমাকে চলনশক্তিহীন জীবন যাপন করতে হয়েছে, এখনো তা-ই। হুইলচেয়ারে করে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ ইদানীং আর খুব একটা হয় না। তাই লুসিড ড্রিমিং অনেকটা ভরসা…
প্রবাস জীবনের নানাবিধ ঘটনার সমন্বয়ে লিখিত বই 'আমার প্রবাস মনের প্রাপ্তি'। এখানে ব্যাক্তিগত সুখ, দুঃখ ও বেদনার পাশাপাশি লেখক সুনিপুনভাবে তুলে ধরেছেন প্রবাস জীবনের বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান। পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কিভাবে একজন মানুষ বিদেশ বিভূইয়ে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকে, অনেক অপ্রাপ্তির মাধ্যেও প্রাপ্তি খুজে পায়- তার সরল উপস্থাপনায় রঙ্গিন হয়েছে 'আমার প্রবাস মনের প্রাপ্তি'।
বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট পরিবারগুলো প্রাথমিক পর্যায়ে নতুন দেশের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার সংগ্রাম থেকে উত্তরণের আগেই তাদের সন্তানদের নিয়ে আবর্তিত হয় নতুন সংকটে। সেই সংকট নানাবিধ। মা-বাবার হোম সিকনেস যেমন দেশের প্রতি আত্মিক টানকে জিইয়ে রাখে, সন্তানদের হৃদয়ে তেমন কোনো অনুভব টেরই হয় না। বরং তারা ক্রমশ মিশে যেতে চায় আমেরিকার সমাজে।বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের দূরত্ব তৈরি হতে থাকে পরিবারের সঙ্গে। পরিবারের চাপ তাদের বাঙালি এবং মুসলমান (যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী) করে রাখার জন্য, আর তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে আমেরিকান হওয়ার। এই দুই টানাপোড়নে তাদের যে মানসিক ক্ষরণ ও দ্ব›দ্ব তা অনেকের পক্ষে বোঝা অনেক সময় সম্ভব হয় না। আমেরিকায় জন্ম নেয়া এবং বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী। তারা স্কুল-কলেজ ও কর্মজীবনে মোটা দাগে সাফল্য অর্জন করছে। কিন্তু তাদের পরিচয় নিয়ে তারা অনেকটা বিভ্রান্ত থাকে। বাংলা বলতে না পারার জন্য তারা নিজেরাও সংকুচিত হয়ে থাকে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, আবার কিছু কিছু বড় শহর ছাড়া অন্যত্র বাংলা শেখাটাও সহজ নয়। এইসব ছেলেমেয়েদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়েও শুরু হয় অন্যরকম জটিলতা। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে সন্তানদের স্বপ্ন যেন ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ঘরে এবং বাইরে নানা মাত্রার অশান্তি বাংলাদেশ থেকে আসা ইমিগ্র্যান্ট বা-বাবা এবং এদেশে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানদের নিজ নিজ সংকট ও মনোবেদনা তাদের আর্থিক সাচ্ছন্দকে অনেকটাই আড়ালে ফেলে দেয়। মিজান রহমান আমেরিকায় আমাদের নতুন প্রজন্ম বইটিতে এইসব সংকট ও মনোবেদনার স্বরূপ অনুসন্ধান করেছেন।
কৈশোর ও যৌবনকালের রোমান্টিক সম্পর্কের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ নিয়ে রচিত একটি উপন্যাস। সাদা এবং কালো, অথবা ভালো এবং মন্দ, অথবা আলো এবং আঁধারের বাইরেও একটি জগৎ আছে। এর বিস্তৃতি মোটা দাগের সাদা ও কালোর চেয়েও অনেক বেশি, যার হদিস আমরা খুব কমই পাই। তেমনি মোহ বা ইনফাচুয়েশন থেকে ভালোলাগা এবং প্রেম-ভালোবাসার পার্থক্য করাও কঠিন। ফলে সৃষ্টি হতে পারে দুঃখ, ঘৃণা ও প্রতিহিংসার মতো পরিস্থিতি। বইটিতে এসবই বর্ণিত হয়েছে কয়েকটি চরিত্রের মাধ্যমে একটিমাত্র গল্পের কাঠামোয়। কাজেই ভালো-মন্দের তাত্ত্বিক বিচার ছাড়াই শুধু উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া যাবে বইটিতে।
বইটিতে ইরানের সংস্কৃতির একটা সম্মখ ধারণা পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন ইরানে কাজ করার সুবাদে লেখক ইরানের যাপিত জীবনের খুটিনাটি খুব কাছ থেকে খেয়াল করেছেন।বইটিতে ইরানের সংস্কৃতির একটা সম্মখ ধারণা পাওয়া যাবে। দীর্ঘদিন ইরানে কাজ করার সুবাদে লেখক ইরানের যাপিত জীবনের খুটিনাটি খুব কাছ থেকে খেয়াল করেছেন।
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে। থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর । পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে । বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি। বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে।উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা। ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের। শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তার। একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
‘এক জীবনের কথা’ উপন্যাসে একজন মানুষের কাহিনির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে স্বাধীনতা এবং দেশভাগের ইতিহাস। মুখ্য চরিত্রের তারুণ্য রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল দেশভাগের বেদনায়, দাঙ্গার আঘাতে। তারপর কালের প্রবাহে সেই তরুণ পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ বিভাগে যোগ দিলেন। মধ্যবিত্তের নীতিবোধের সঙ্গে কর্তব্যের সংঘাত, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা — এসবের মধ্যেই এগিয়ে এল বাংলাদেশের জন্মমুহূর্ত। এক কথায় অনবদ্য একটি বই।