একটা খবর একই সঙ্গে কীভাবে ভাল আর মন্দ হয়, বলতে পারেন? ঠিক আছে, উদাহরণ দেয়া যাক। নাসার ডিপ স্পেস প্রোব ভয়েজার-টু রিসিভ করা হয়েছে। অত্যাশ্চর্য এক সিগ্নাল-ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণী থাকার অকাট্য প্রমাণ। সুসংবাদ, তাই না? কিন্তু খারাপ খবরটা হচ্ছে, ওটার ভিতর লুকিয়ে আছে এক ভয়ঙ্কর কোড, যা আগামী চারদিন পর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেবে। আর এর পিছনে যারা জড়িত, তারা কোনও ভিনগ্রহবাসী নয়, এই গ্রহের দু-পেয়ে জানোয়ার। এই মহাবিপর্যয়ের হাত থেকে সভ্যতাকে বাঁচাতে হ্যাকিং, সাইবার-ক্রাইম আর সাইবার-টেররিজমের সম্পূর্ণ অজানা-অচেনা অন্ধকার জগতে টু মারতে চলেছে মাসুদ রানা। কিন্তু কাজটা সহজ নয় মোটেই। উদয় হয়েছে ওর পুরনো শত্রু ডগলাস বুলক ওরফে বুলডগ। যে-কোনও মূল্যে রানাকে ঠেকাতে মরিয়া সে। রয়েছে অচেনা শত্রুর লেলিয়ে দেয়া ভয়ঙ্কর খুনীরাও। আগামী ৯০ ঘণ্টা নরক দর্শন করে ফিরবে রানা।
ক্লাইম্বার মাঝ-আকাশে ঘটে গেল রুদ্ধশ্বাস ডাকাতি। কিন্তু তারপরেই দুর্বৃত্তদের বিমান আছড়ে পড়ল রকি পর্বতমালার উপর, একশো মিলিয়ন ডলার ভর্তি তিনটে বাক্স হারিয়ে গেল উঁচু-নিচু পর্বতশৃঙ্গের মাঝে। বেতারে পাঠানো হলো সাহায্যের আবেদন। আবেদনে সাড়া দিল দু’জন উদ্ধারকারী। ওরা এলেই আটক করা হলো তাদের। বাধ্য করা হলো ডলার-ভর্তি বাক্স খুঁজে বের করতে। কাজ শেষ হওয়ামাত্র খুন করা হবে ওদের। কিন্তু উদ্ধারকারীদের একজনের নাম মাসুদ রানা, সেটা ওদের জানা ছিল না। মরুস্বর্গ কোথায় ওই ক্যাসিনো? সব দেশের সিক্রেট সার্ভিস খুঁজছে ওটাকে। কেন? গোটা দুনিয়ার লেজে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এক ভয়ানক দুবৃর্ত। ওই ক্যাসিনো থেকেই নাকি আসছে সেই ড্রাগ। একবিংশ শতাব্দীর অভিশাপ। পাগল হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের তরুণ-যুবা। এমন নেশা যে, একবার নিলে কী মরলে! আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে ওরা ড্রাগ না পেলে। শুধু ঢাকা শহরেই গত ছয় মাসে দেড় হাজার অ্যাডিক্ট খুন করেছে সতেরো হাজার নিরীহ মানুষকে। প্রথম সুযোগেই ঢুকে পড়ল রানা ওই ক্যাসিনোয়। জানে না, ও শিকার না শিকারী ।
প্রিয় পাঠক, মাসুদ রানার সঙ্গে আরও একবার সুমেরু অভিযানে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি আপনাকে। এবারের গন্তব্য—আর্কটিক সার্কেলের সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উত্তরের নামহীন এক বরফ-দ্বীপ। দর্শনীয় অনেক কিছুই পাবেন ওখানে। দ্বীপের গভীরে আছে গোপন এক প্রাচীন গবেষণাগার… ভিতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে অসংখ্য মানুষের লাশ! আরও কিছু চাই? পাবেন। গবেষণাগারের পাশে, জমাট বাঁধা বরফের ভিতরে রয়েছে পঞ্চাশ হাজার বছর ধরে ঘুমিয়ে থাকা একদল হিংস্র, রাক্ষুসে, প্রাগৈতিহাসিক দানব! এবে রওনা দেবার আগে জানিয়ে রাখা ভাল, ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। দ্বীপের দখ। নেবার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে মার্কিন সরকার। খবর পেয়ে সাবমেরিন নিয়ে রাশান এক রিয়ার অ্যাডমিরাল আসছেন ওটাকে নিউক্লিয়ার বোমা মেরে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। শুধু তা-ই নয়, শীতনিদ্রা ভেঙে খুব শীঘ্রি জাগতে চলেছে। রাক্ষুসে দানবের দল! ভীষণ খিদে ওদের পেটে। বুঝতেই পারছেন, যেতে হবে নিজ ঝুঁকিতে। রানা অবশ্য থাকছে আপনার সঙ্গে তবে… ওর নিজেরই তো.. ভাল করে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
দুষ্প্রাপ্য এক কালো চিতা আঁধার রাতে বতসোয়ানার বিপদসংকুল কালাহারি মরুভূমি ধরে নিঃশব্দে ছুটছে। টোপ বানানো হয়েছে পরমাসুন্দরী জুলজিস্ট ডোরা ডারবিকে। ফাঁদে আটকা পড়েছে মাসুদ রানা, এখন ওকে মোগলদের সঙ্গে খানা খেতে হবে। টেরোরিস্টদের গ্রুপটাও ছুটে এল, রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়ে হলেও সফল করবে নিজেদের ষড়যন্ত্র । ‘তোমাকে ভালবাসি, তাই তোমার বিপদ শুনে স্থির থাকতে পারিনি, রানাকে শুধু এই কথাটি বলার জন্যে ছুটে এল মিষ্টি কোমল মেয়ে ইভা পুনম, কিন্তু না এলেই ভাল হােত। সন্ত্রাসী ডেকা বারগাম এবার অগ্নিমূর্তি ধারণ করে নিজেই হাজির হলো রণক্ষেত্রে। ফুয়েল নেই, রসদ নেই, সঙ্গীরাও হারিয়ে গেছে-কোণঠাসা রানা আঁধার দেখছে চোখে।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের খুদে একটি দ্বীপ, মুমুরা। তার অধিবাসীরা পাচেক ‘অসভ্য সহ অকস্মাৎ ধ্বংস হয়ে গেল একদিন। পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। জানা গেল, এ ধ্বংসযজ্ঞের জন্যে দায়ী একটি পারমাণবিক বোমা, এবং সেটির আবিষ্কারক একজন বাংলাদেশী পরমাণু বিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে ছুটল মাসুদ রানা। জড়িয়ে পড়ল ভয়ঙ্কর মরণপণ লড়াইয়ে।
মধ্যপ্রাচ্যের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে গ্রাস করতে চলেছে। পশ্চিমা দুনিয়া। প্রস্তুতির কাজ শেষ। এমন সময় মাসুদ রানার হাতে এল ওদের পরিকল্পনার নীল নকশা। পৌছে গেল ওটা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ মেজর জেনারেল (অবঃ) রাহাত খানের হাতে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে এমন কয়েকটি দেশের সিক্রেট সার্ভিস চিফের সঙ্গে বসে তৈরি করলেন তিনি পাল্টা পরিকল্পনা। প্রস্তুত রইল এশিয়ার বেশিরভাগ দেশের সেনাবাহিনী ঠিক হলো: ইজরায়েলের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে মার্কিন পারমাণবিক মিসাইল। ডাক পড়ল মাসুদ রানা, সোহেল আহমেদ, লিউ ফু-চুং, অনিল চট্টোপাধ্যায়, আসি ও উর্বশী দাসার। ওদের সঙ্গে সেই ধচাপচা জাহাজে করে চলেছে আরও অনেকে। জাহাজ কিন্তু আপনার খুবই চেনা… স্বর্ণ-বিপর্যয় সেই মার্ভেল অভ গ্রিস! পাঠক, এই আত্মঘাতী মিশনে যাবেন ওদের সঙ্গে?