চোখের পলকে বিশাল বিশাল আগুনের গোলা এসে পড়তে লাগল তাদের মাথার ওপরে। কিছু মানুষ সেখানেই পুড়ে মরল। কেউ ছুটল তাদের বাড়ির দিকে। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে ভাবল- যাক, বিপদ কেটে গেছে। এমন সময় তীব্র এক শব্দ হলো। তারপর দুলে উঠল মাটি। ভয়ংকর এক ভূমিকম্পে ঘরবাড়ি সব ধসে পড়ল। মানুষগুলো সব যার যার নিজের ঘরে উপুড় হয়ে মারা গেল। ধ্বংস হয়ে গেল গোটা শহর। শোয়াইব আলাইহিস সালাম ও তাঁর সাথের ঈমানদারগণ আগেই শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাই তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এভাবেই আল্লাহ ‘মাপে কম দেওয়া’ জাতিকে ধ্বংস করলেন। আমাদের নবি একবার আল্লাহর কাছে দুআ করেছিলেন। বলেছিলেন-‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতকে আগের জাতিগুলোর মতো একেবারে ধ্বংস করে দিয়ো না।’ আল্লাহর নবি যদি এই দুআ না করতেন, তাহলে হয়তো যারা ওজনে কম দেয়, তাদের আল্লাহ দুনিয়াতেই আজাব দিতেন। কঠিন শাস্তি দিতেন। দুনিয়াতে আজাব না হলেও পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে। কেবল তওবা করলেই তারা এই শাস্তি থেকে ক্ষমা পেতে পারে।
বর্তমানে কিছু লোক আছে, যারা নিজেদেরকে ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী দাবি করে। তাদের কেউ কেউ মনে করে, ঈসা আলাইহিস সালাম মানুষ ছিলেন না। তিনি মূলত নিজেই খোদা ছিলেন (নাউজুবিল্লাহ)। আবার কেউ কেউ বলে, তিনি ছিলেন আল্লাহর ছেলে (নাউজুবিল্লাহ)। এই লোকগুলোকে বলে খ্রিষ্টান। তারা ক্রুশকে সম্মান করে। ক্রুশের পূজা করে। কিয়ামতের আগে আগে ঈসা আলাইহিস সালাম আবার পৃথিবীতে নেমে আসবেন। মুসলমানদের পক্ষ হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। তাদেরকে হারিয়ে দেবেন। ভেঙে ফেলবেন সব ক্রুশ। প্রমাণ করে দেবেন, খ্রিষ্টানরা তাঁকে নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছে। তিনি একজন সাধারণ মানুষ। তিনি আল্লাহও নন, আল্লাহর ছেলেও নন।
নুহ আলাইহিস সালাম তাদের সুন্দর করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। বললেন-‘দেখ, আল্লাহ কাকে নবি করে পাঠাবেন-এটা তাঁর ইচ্ছা। কেউ চাইলে নিজে নিজে নবি হতে পারে না। কিছু সাধারণ মানুষ আমার কথা শোনে। আল্লাহর কথা মানে। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। অথচ তোমরা তাঁদের গরিব বলে বিদ্রুপ করো। জেনে রেখ, আল্লাহর কাছে ধন-সম্পদের কোনো দাম নেই। তোমরা যদি আল্লাহর কথা না শোনো, তবে তোমাদের ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কোনো কাজে আসবে না। আল্লাহর আজাব এসে পড়লে কেউ তোমাদের বাঁচাতে পারবে না।’ নুহ আলাহিস সালাম আরও বললেন-‘আর তোমরা যে বলছো বাপ-দাদাদের কথা... বাপ-দাদাদের আমল থেকে কোনো কিছু চালু থাকলেই কি তা ঠিক হয়ে যায়? বাপ-দাদারা ভুল করলে তোমরাও কি ভুল করবে? দিনের পর জেনে-বুঝে একই ভুল করে যাবে? এটা কি কোনো যুক্তির কথা হলো?’ নুহ আলাইহিস সালামের কথা শুনে তাদের মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তারা আর কথা খুঁজে পেল না। আর পাবেই-বা কী করে, তাদের সব যুক্তিই যে ভুল!
আবদুল্লাহ (রা.)-এর কবিতা শুনে উমর (রা.) চটে যান। ধমক দিয়ে বলেন-‘থামো! রাসূলুল্লাহর সামনে এ পবিত্র স্থানে কবিতা পাঠ?’ কিন্তু কবিতা তো সবার। সর্বজনীন। একজনের হৃদয় উৎসারিত হলেও সকলের হৃদয়গ্রাহী। কবিতা মায়ের বুলি। তাতে জাতপাত নেই। কাঠিন্য নেই। দর্শন নেই। প্রেম আছে। কবিতা আরশে মোয়াল্লার ভাষা। ফেরেশতার বিশুদ্ধ সুর। কাওসারের কুলুকুলু ধ্বনি। আয়িশা (রা.)-এর ঘরে মৌ মৌ গুঞ্জন। কবিতা রাসূলের মসজিদের আলাদা মিম্বর। ক্ষুরধার তার শব্দশৈলী। ইবনে রাওয়াহা (রা.)-এর তলোয়ার।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকলে আল্লাহর পক্ষ থকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা আসে। আসে বিপদ-আপদ। যত কঠিন বিপদই আসুক না কেন, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আল্লাহর কাছে দুআ করতে হবে। অনেকে আছে, বিপদ-আপদ এলে অস্থির হয়ে যায়। ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। অনেকে বলা শুরু করে-‘হে আল্লাহ! কেন আমাদের এই বিপদ এলো? কেন আমাদের ওপরই এমন মুসিবত এলো?’ কেউ কেউ বলতে থাকে-‘আল্লাহ কি বিপদ দেওয়ার মতো আর কাউকে খুঁজে পেল না? আমি কী এমন পাপ করেছি যে আমার ওপরই বিপদ এলো?’ আইয়ুব আলাইহিস সালাম আল্লাহর নবি ছিলেন। তিনি কোনো গুনাহ করেননি, পাপ করেননি। কিন্তু তবুও আল্লাহ তাঁকে বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় তিনি পাশ করেছেন। তাই তো আল্লাহ তাঁর মর্যাদা অনেক অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। এজন্য বিপদ-আপদ এলে আমরা বেশি বেশি আল্লাহকে ডাকব। তাঁর কাছে ক্ষমা চাইব। দুআ করব, যেন তিনি আমাদের বিপদ-আপদ দূর করে দেন। আমাদের রোগ ভালো করে দেন।
জাতিসংঘের ভাষ্যমতে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠির নাম হলো ‘রোহিঙ্গা’। মিয়ানমার নামক রাষ্ট্রীয় দানবের গণহত্যা ও নির্মূল অভিযানে রোহিঙ্গারা জন্মভূমি আরকান থেকে বিতাড়িত হলেও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, গোটাবিশ্ব তাদের রক্ষার্থে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর দ্বান্দিক অবস্থানের পেছনে জাতীয় স্বার্থ, ভূ-রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের যেসব ইস্যু রয়েছে, তরুণ সাংবাদিক ইমরুল কায়েস তা এই বইতে বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। শুধু ধর্মীয় কারণে এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্মি ও রাখাইন মগদের সমর্থন নিজের পক্ষে রাখার আশায় নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে কীভাবে আজ রোহিঙ্গা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, তার স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে এই বই থেকে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও তথ্যের বিষয়ে লেখকের ফুটনোট ও রেফারেন্স ব্যবহার বইটিকে দালিলিক মর্যাদা দেবার পাশাপাশি পাঠকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলবে। সু চি ও সেনাপ্রধান জেনারেল হ্লাইং অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর কী নিষ্ঠুর নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে, শত বছর পরেও বইটি তার একটি দলিল ও প্রমাণপত্র হয়ে থাকবে।