ধরুন মাঝ রাতে আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ যদি কোনো আলোকিত বস্তু আপনার চোখে পড়ে, যেটি একবার সোজা মাটিতে নামছে কিংবা পাশের পুকুরে ডুবে যাচ্ছে আবার উপরে উঠে যাচ্ছে! তাহলে আপনি কী মনে করবেন? আপনি হয়ত ভাববেন, হবে হয়ত কিছু। এত ভেবে লাভ কী! কিংবা জিন-ভূত ভেবে একটু ভয় পেয়ে পরের দিন মনের আনন্দে সব ভুলে যাবেন। কিন্তু আপনার মনে এর পিছনের প্রযুক্তি নিয়ে প্রশ্ন জাগবে না, যা পৃথিবী নামক গ্রহে আবিষ্কৃত হয়েছে। পৃথিবীর আরেক প্রান্তের মানুষরা কিন্তু এইসব নিয়ে প্রশ্ন করছে, চিন্তা করছে। যে কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নিয়েই তারা প্রশ্ন করে। যার কারণে তারা বিভিন্ন নতুন জিনিস আবিস্কার করছে শিক্ষা ও সভ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে খেতে গেলে বকশিস দিচ্ছি, জিপিএ ফাইভ পেয়ে মেধাবী হয়ে যাচ্ছি! গতানুগতিক বিষয় নিয়েই আমরা ব্যস্ত। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, আধুনিক বিশ্ব থেকে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। এই বইটিতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক মনে করা এমন অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যে গুলো আদৌ স্বাভাবিক নয়। যেগুলো নিয়ে আমাদের প্রশ্ন করা উচিত।
‘আত্মহত্যার মৃত্যুদণ্ড’ উপন্যাসটি আমাদের সম-সাময়িক সমাজের প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে বর্তমান সমাজ এবং সমাজ কাঠামো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। উপন্যাসের মূল দুই চরিত্র ইভান এবং ফুয়াদ। এদের একজন পড়াশুনা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরেকজন এরই মাঝে বিসিএস দিয়ে পুলিশ অফিসার হয়ে গিয়েছে। এই দুজনের সাক্ষাৎ হয় একটি অসফল আত্মহত্যার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে। সেই আত্মহত্যার কারণ জানতে গিয়ে উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্র সামনে চলে আসে। যেখানে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরি, সামাজিক মূল্যবোধ, রাজনীতি, প্রেম-ভালোবাসা কিংবা পারিবারিক সম্পর্কগুলোও সামনে চলে এসেছে। সমাজের সাধারণ মানুষের না-বলা গল্পগুলো উঠে এসেছে এই উপন্যাসের মাধ্যমে।
রায়হানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে। তার বাবা-মা অনেক বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমিয়েছিল। কিন্তু তাদের মন সবসময় পড়ে থাকে বাংলাদেশে। রায়হানের বাবা-মা তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছেলে-মেয়ে বড় হলে সবাই মিলে দেশে চলে যাবে। রায়হানকে একারণে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য। দেশটা সম্পর্কে বাবা-মায়ের মুখে অনেক শুনেছে। কিন্তু কখনো আসা হয়নি। সম্পূর্ণ নতুন একটা দেশে রায়হানের নানা অভিজ্ঞতা হতে থাকে। যেই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে ভাবতে শেখায়- এ কেমন সমাজব্যবস্থা। রায়হানের অভিজ্ঞতাগুলোই উঠে এসেছে এই বইতে।
আকবর আলি খানের বিপুল বিচিত্র রচনা ও চিন্তাজগতের সামগ্রিক খতিয়ান এক মলাটে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীর লেখায়। আকবর আলি খান বাংলাদেশের মানুষ, ইতিহাস আর সমাজ বিষয়ে নিবিড়তম অনুসন্ধানকারীদের অন্যতম। স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে সদ্যস্বাধীন দেশের প্রশাসনব্যবস্থা ও উন্নয়নকৌশলের ভিত্তি রচনায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন। কেন বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থা একটা বৃত্তের মধ্যেই ক্রমাগত ঘুরপাক খায়, দেশের উন্নয়নকৌশলগুলো কেন সাফল্যের সম্ভাবনা দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়—এমন সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন তিনি এই ভূখণ্ডের মানুষের মানস গঠন ও ইতিহাসের ধারা বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে। তাঁর আগ্রহের ব্যাপ্তি প্রসারিত ছিল জীবনানন্দ থেকে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব ও বিষয়ের অনুসন্ধান ও মূল্যায়নে। সারা জীবনের এই অনুসন্ধান লিপিবদ্ধ করেছেন একাধিক শ্রমসাধ্য গবেষণাকর্মে, সুলিখিত জনপ্রিয় বই আর প্রবন্ধে। এই বইয়ের লেখক আমিনুল ইসলাম ভুইয়া ছিলেন আকবর আলি খানের সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠজন। তাঁর অন্তরঙ্গ উপস্থাপনায় পাঠক আকবর আলি খানের জীবনব্যাপী সাধনার একটা পরিচয় পাবেন বলে আমরা আশা করি।