আমি, শহীদুল ইসলাম, কারও রূপ দেখে মুগ্ধ হব, ভাবিনি। এ কথাও তো সত্য যে প্রেমে মানুষ পড়ে, পতিত হয়; প্রেমে কেউ ওঠে না, আরোহণ করে না। আমিও হঠাৎ করেই পড়ে গেলাম। পড়ে গেলাম এবং ডুবে গেলাম।
ওদের মা কখনো গান করেননি কেন? মাকে ওদের মনে পড়ে না। শুধু চরাচর ভেঙে যখন জ্যোৎস্না নামে, তখন মায়ের শাড়ির আঁচলের গন্ধ পায় ওরা। টিনে ছাওয়া বাংলো ধরনের বাড়ি, বাড়ির সামনে বাগান, কাঁটামেহেদির বেড়া, কামিনী ফুলের পাগল-করা গন্ধ—এ-ই ছিল সত্তরের দশকের মফস্সল শহরগুলো। তেমনই এক শহরে দুই মায়ের সংসারে বড় হচ্ছিল চার ভাইবোন। চোরকাঁটাভরা মাঠে খেলা, বৃষ্টিতে তুমুল ভেজা শৈশব। টিউবওয়েলের নিচে গোসল, কয়লা দিয়ে দাঁত-মাজার শৈশব। কিন্তু ওদের মুক্তিযোদ্ধা বাবা সরকারি চাকরি হারান অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করার অপরাধে। কারাগারে যেতে হয় বাবাকে। বড় ভাই বাবুল সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন নিজের ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে। কিন্তু এর চেয়েও ভয়াবহ সংবাদ দেন ছোটমা, হাসপাতালে শেষ শয্যায়। জানিয়ে যান, কেন মা কখনো গান করেননি। কে তাঁর কণ্ঠ থেকে গান নিংড়ে বের করে নিয়েছিল!
পুলিশ ভেঙে ফেলল ১৯৫২ সালের শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি। শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি পেলেন ফরিদপুর কারাগার থেকে অনশন ধর্মঘট করার পর। তাঁর আব্বা তাঁকে নিয়ে গেলেন গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই মুজিব জানতে পারলেন তাঁর নেতা সোহরাওয়ার্দীর মনোভাব—বাঙালিদেরও উর্দু শিখতে হবে। এবার কী করবেন মুজিব? তাজউদ্দীনরা ভাবছেন, একটা আলাদা দল করতে হবে। গণতন্ত্রী দল গঠনের তৎপরতার সঙ্গে খানিকটা যুক্ত থাকলেন তিনি। মওলানা ভাসানী কারাগারে। সেখান থেকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া, তাজউদ্দীনের আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া, যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, এ কে ফজলুল হকের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আর শেখ মুজিবের মন্ত্রিত্ব লাভ এবং মন্ত্রীর বাড়ি থেকে সোজা জেলযাত্রা। তিনটি শিশুসন্তান নিয়ে রেনুর অকূলপাথারে পড়ে যাওয়া। রাজনীতির ডামাডোল ওলটপালট করে দেয় ব্যক্তিমানুষেরও জীবন। এই রাজনীতির গতি-প্রকৃতি কেবল একটি দেশের নেতা বা জনগণ নির্ধারণ করে না, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলে ওয়াশিংটন থেকেও। ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমি তো তা-ই বলতে চায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষের ইচ্ছাই কি জয়ী হয় না?
চারজন মানুষ মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছে। একমুখী যাত্রা। যাওয়া যাবে কিন্তু ফেরা যাবে না। সেই দলে রয়েছে একজন বাংলাদেশি নারী, নাম সাবিনা আক্তার শিমু। মঙ্গলে অক্সিজেন নেই, পানি পাওয়া কঠিন, তেজস্ক্রিয় রশ্মির ভয় আছে। গাছপালা নেই। বৃষ্টি নেই। যাত্রাপথও সহজ নয়। ২৭০ দিন লাগবে শুধু যেতেই। সেখানে গিয়ে এই অভিযাত্রীরা থাকবে, এরপর ২৬ মাস পরে যাবে আরও চারজন। এভাবে মঙ্গলে গড়ে উঠবে মানববসতি। এক হাজার বছর পর মঙ্গল হয়ে উঠবে সুজলা-সুফলা। সাবিনা আক্তার শিমু মঙ্গলে যাত্রার আগে ঢাকায় এসে দেখা করল মা-বাবার সঙ্গে। 'ফিরে গিয়ে তারা রওনা হলাে ‘মার্স হােপ ১ নামের নভােযানে। বিপৎসংকুল শ্বাসরুদ্ধকর সেই অভিযাত্রায় অজানা শঙ্কার সঙ্গে আছে প্রেম, ভালােবাসা, হাসি-কান্না, ঈর্ষা-দ্বেষ। প্রিয় পাঠক, সাবিনা আক্তার শিমু ও আরও তিন অভিযাত্রীর সঙ্গে আপনিও চলুন প্রিয় এই পৃথিবী ছেড়ে।
কবি-সাহিত্যিকেরা বেশির ভাগই মজার মানুষ। হুমায়ূন আহমেদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ কিংবা নির্মলেন্দু গুণের রসবোধের কোনো তুলনা হয় না। তাঁদের রসিকতাগুলো দেশবিখ্যাত এবং চিরন্তন আনন্দ ও শিক্ষার উত্স। আবার রসবোধে খ্যাতি তেমন নেই, এমন মানুষও ঘটিয়ে থাকেন মজার মজার ঘটনা। শুধু মজার ঘটনা তো নয়, লেখক-কবিদের জীবনে ঘটে অনেক দুঃখের ঘটনা; আর সারাক্ষণই তাঁদের পোড়াতে থাকে শিল্পের আগুন। সমকালীন সাহিত্যের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিককে কাছে কিংবা দূর থেকে দেখেছেন আনিসুল হক। লেখকদের নিয়ে আনিসুল হকের স্মৃতি, অভিজ্ঞতা, কৌতুক, আনন্দ-বেদনা আর হাহাকারের গল্পগুলো ধরা থাকল এই বইয়ে। এই লেখাগুলো একই সঙ্গে স্মৃতিচারণা, সাহিত্যের উদ্যাপন, লেখকদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং সাহিত্যিক মূল্যায়নের রেখাচিত্র।