মহান ভাষা আন্দোলনের উত্তাল মিছিলে নিজে আহত হয়েও অমর শহিদ আবুল বরকতের লাশ দেখতে গিয়েছিলেন ঢাকা কলেজের তরুণ ছাত্র আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। আর সেই লাশ দেখেই আবেগ-তাড়িত হয়ে লিখেছিলেন একটি কবিতা, পরের বছরই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ভাষা-সৈনিক আবদুল লতিফ তার সেই কবিতা সুরারোপ করে একটি সংগীতানুষ্ঠানে গেয়েছিলেন। সেই গানে পরে মুক্তিযুদ্ধে অমর শহিদ, সংগীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদও সুরারোপ করেন। এই গান দেশের সীমানা ডিঙিয়েছে অনেক আগেই, যেখানে বাঙালি সেখানেই এই গান : 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি।' জনপ্রিয় কথাশিল্পী আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত কলামিস্ট। ভাষা-সৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও শব্দ- সৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী কবিতা রচনায় ইতি টানেননি কখনোই। বর্ণাঢ্য জীবনের আবেগ-অনুভূতি এবং স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের কথাটিও রাষ্ট্র করেছেন কবিতায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য 'সময়ের ঘড়ি' তাঁর প্রথম কবিতার বই।
‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ একটি মঞ্চ নাটক। প্রথম অভিনীত হয় ২০০৪ সালের মার্চ মাসে। তারপর নিউইয়র্কে। মঞ্চ নাটকের অধিকাংশ বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেই এটিকে চলচ্চিত্রে রূপায়িত করা হয়েছে। এই নাটক মঞ্চায়নে ও চলচ্চিত্রে রূপায়নে আমাকে। অনেক বাধা বিঘ্নের সম্মুখিন হতে হয়েছে। বাংলাদেশের অনেক খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী সরকারী রােষের ভয়ে এই নাটকে ও তার ছায়াছবিতে অভিনয়ে রাজি হন নি । তবু যারা সাহসের সঙ্গে এগিয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পলাশীর যুদ্ধ ও সিরাজউদ্দৌল্লাকে হত্যার ঘটনা নিয়ে নাটক লেখা হয়েছিল ঘটনার | পৌনে দু’শ বছর পর। আমি বঙ্গবন্ধু-হত্যা নিয়ে এই নাটক লিখেছি মাত্র ঊনত্রিশ বছর পর । এই কাহিনীর অধিকাংশ চরিত্র এখনাে বেঁচে আছেন, ফলে আমাকে অনেক সতর্কতার সঙ্গে ঘটনাবিন্যাস। ঘটাতে হয়েছে। যতদূর সম্ভব আমি ঘটনার বাস্তব সত্যের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছি। এজন্যে নিজের সংগৃহীত তথ্য, নির্ভরযােগ্য সূত্রের তথ্য এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় যে রায় প্রকাশিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করেছি। ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনাে চরিত্রকে মসি মলিন করার চেষ্টা করিনি। সেদিক থেকে এটিকে একটি ডকুড্রামা বলা চলে।
‘বঙ্গবন্ধু’ খেতাবটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও সীমাহীন ভালোবাসা। ‘বাংলা’ ও ‘বঙ্গবন্ধু’ এক ও অবিচ্ছেদ্য। এ কারণেই ‘জয় বাংলা’ শব্দ উচ্চারণ করার পরে ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ না-বললে বাঙালি বাঙালি জাতির অন্তরের আবেগ মুক্তি পায় না। সর্ব্কালের সর্বশেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের জাতির পিতা, শোষিত মানুষের মহান নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একদিনেই ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠেননি। তাঁর ‘বঙ্গবন্ধু’ হয়ে ওঠার পেছনে আছে দীর্ঘদিনের আপসহীন সংগ্রাম ও কারান্তরালে শারীরিক নির্যাতন ভোগ করার বেদনাবিধুর ইতিহাস। ‘মুক্তিযুদ্ধ’ বাঙালি জাতির গৌরবের অগ্নি-শিখা। বাঙালি জাতি ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত ঢেলে এই গৌরবের শিখা প্রজ্বলন করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক জাতির মুক্তিযুদ্ধের কথা লিপিবদ্ধ আছে বটে, কিন্তু বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই সোনালি অক্ষরে লেখা হয়ে থাকবে। পৃথিবীর আর কোনো জাতি এত সংক্ষিপ্ত সময়ে, এত রক্ত আর মৃত্যুর বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেনি। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং ২০২১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে আগামী প্রকাশনীর বিশেষ প্রকাশনা উদ্যোগ বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ সিরিজ। এ সিরিজের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের বিশিষ্ট কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবীদের বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সমুদয় রচনার সংকলন পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমাদের পরিকল্পিত লেখক তালিকায় এমন অনেক বিশিষ্টজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন যাদের স্মরণীয় রচনায় এদেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু উত্তরপ্রজন্মের পাঠকের কাছে ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে স্বদেশের স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাসের বার্তা, বর্তমানের দৃঢ় পথচলা এবং সুন্দর আগামীর বিনিমার্ণ সাধন করতে এ সিরিজ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি।