ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা হুমায়ূন আহমেদ বেড়াতে ভালোবাসতেন। বেড়ানোর জন্য সঙ্গী হিসেবে চাইতেন পরিবার কিংবা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের।তিনি মনে করতেন বেড়ানোর আনন্দ এককভাবে উপভোগের নয়।দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন।এইসব ভ্রমণের কিছু কিছু গল্প তিনি লিখেছেন তাঁর ছয়টি ভ্রমণ-বিষয়ক গ্রন্থে।গ্রন্থগুলো হলো ‘পালের তলায় খড়ম,’ ‘রাবণের দেশে আমি এবং আমরা,’ ‘দেখা না-দেখা,’ ‘হোটেল গ্রেভার ইন,’ ‘মে ফ্লাওয়ার’ ও ‘যশোহা বৃক্ষের দেশে।’ হুমায়ূন আহমেদের গল্প-উপন্যাসের মতো তাঁর ভ্রমণোপাখ্যানগুলোও পাঠকপ্রিয়তায় ধন্য। তাই আশা করা যাচ্ছে, তাঁর ভ্রমণবিষয়ক সমস্ত রচনার সংকলন এই ভ্রমণসমগ্র পাঠকদের ভালো লাগবে। ভূমিকা প্রিয়জনের নিয়ে বেড়াতে পছন্দ করতে হুমায়ূন আহমেদ। বেড়ানোর সময়কার খুব সাধারণ গল্পকেও অসাধারণভাবে বর্ণনা করতেন তিনি।আর উদ্ভট কিছু ঘটনাও যেন অপেক্ষা করত হুমায়ূন আহমেদের জন্যে।তাঁর অনেকগুলি ভ্রমণেরে সঙ্গী আমি।পরে যুক্ত হয়েছে একে একে নিষাদ ও নিনিত। ভ্রমণ থেকে ফিরে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা বলছেন, আর তাঁর বন্ধুশ্রোতারা কখনো হেসে গড়িয়ে পড়ছে আবার কখনো দেখা যাচ্ছে তাদের চোখের কোনায় পানি; এটি ছিল ‘দখিন হাওয়া’র অতি পরিচিত দৃশ্য।যারা কাছ থেকে তাঁর বেড়ানোর গল্প গুনেছেন শুধু তারাই জানেন কত চমৎকার করেই না সেসব গল্প বলতেন হুমায়ূন আহমেদ। তাঁর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা বইগুলি একত্রিত হচ্ছে। আর হুমায়ূন আহমেদ চলে গেছেন এক অচেনা ভ্রমণে। প্রিয়জনদের ছাড়াই, একা।তাঁর এই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যদি তাঁর কাছ থেকে জানতে পারতাম! মেহের আফরোজ শাওন দখিন হাওয়া ১৩.০১.২০১৩ সূচিপত্র *পায়ের তলায় খড়ম *রাবণের দেশে *আমি এবং আমরা *দেখা না-দেখা *যশোহা বৃক্ষের দেশে *মে ফ্লাওয়ার *হোটেল গ্রেভার ইন
তোমাদের জন্য ভালোবাসা তারা তিনজন অন্য ভূবন ইরিনা অনন্ত নকত্রবীথি * কুইক ফিহা সমীকরন * শূন্য * নি তাহারা পরেশেয় হইলদা বড়ি আয়না নিউনের ভুল সুত্র যন্ত্র নিমধ্যমা ওমেগা পয়েন্ট ইমা * দ্বিতীয় মানা অইক জাদুকর * কুদ্দুসের একদিন সম্পর্ক ভূমিকা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পাঠকদের নিয়ে অবহেলার দৃষ্টিতে তাকানোর নিয়ম আছে। পাঠক সমাজে এরা সর্বনিম্নে অবস্থান করে। ধরা হয়ে থাকে সাহিত্যের মহানবোধ... ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে এরা বঞ্চিত। কোনো পাঠক একবার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী পড়া শুরু করলে ভাঙ্গা গ্রামোফোন রেকর্ডের মতো সেখানেই আটকে থাকে। পাঠক আর বেড়ে ওঠেন না। আমার জন্যে এটা বিরাট দুঃসংবাদ কারণ আমি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অতি ভক্ত পাঠক। যখন পড়ার মতো কল্পকাহিনী পাই না তখন নিজেই লিখি যেন পড়েতে পারি। অন্বেষা আমার বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সব লেখা একত্র করেছে। সিরিয়াস পাঠকদের বলছি এই বইয়ের ধারে কাছে যাবেন না। একবার পড়তে শুরু করলে সিরিয়াস পাঠকের মৃত্যু ঘটবে। আর যারা আমার মতো পাঠক তাদের বলছি- 'কেঁও মি ছিয়া' (ভীন গ্রহের প্রাণীর ভাষা। এর অর্থ পাঠের নিমন্ত্রণ।)
"জয়জয়ন্তী বইটির প্রথমের কিছু অংশ: আমি ঘুরে-ফিরে একটা স্বপ্নই দেখি মামুন এবং আমি পাশাপাশি একটা রিকশা করে যাচ্ছি। রিকশার চাকার সঙ্গে কি করে যেন শাড়ি পেঁচিয়ে গেল। আমি চেঁচিয়ে বলছি- রিকশা থামাতে বল, রিকশা থামাতে বল। মামুন চিৎকার করছে এই রিকশা, থাম থাম। কিন্তু রিকশাওয়ালা কিছুই শুনছে না সে সমানে প্যাডেল করে যাচ্ছে। আশেপাশে লোক জমে যাচ্ছে। একজন ট্রাফিক পুলিশ পর্যন্ত রিকশা থামাবার জন্য ছুটে আসছে... স্বপ্নের এই জায়গায় আমি জেগে উঠি। আমার বুক ধ্বক ধ্বক করতে থাকে। পানির পিপাসা হয়। নিজেকে ধাতস্থ করতে অনেক সময় লাগে। বিছানায় চুপচাপ বসে হাঁপাতে থাকি। এই সময় বাবা এসে আমার দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলেন, কি হয়েছে রে মা? কি হয়েছে? বাবার ঘর দোতলার শেষ মাথায়। রাতে তার ঘুম হয় না বললেই হয়। তিনি সামান্য শব্দেই চটি পায়ে বের হয়ে আসেন। আমি দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে যে শব্দ করি তা নিশ্চয়ই সামান্য না। আমার পাশের ঘরে বাবলু ঘুমায়। তার ঘুম অবশ্যি কখনো ভাঙে না। আমার মত সেও দুঃস্বপ্ন দেখে। তার দুঃস্বপ্নগুলি বিকট এবং বারবার। সে বিশ্রী ধরনের গোঙানির শব্দ করতে থাকে, হাত-পা ছুঁড়তে থাকে। আমি নিজেই ভয়ে অস্থির হয়ে পড়ি। বাবা ছুটে এসে দরজায় ধাক্কা দিতে দিতে বলেন কি হয়েছে? এই বাবলু, এই। দরজা খোল, দরজা খোল। বাবর দুঃস্বপ্নগুলি সহজে ভাঙে না। সে গো গো শব্দ করতে থাকে এবং বিছানায় নড়াচড়া করতে থাকে। এক একবার মনে হয়, বিছানা থেকে গড়িয়ে বোধহয় মেঝেতে পড়ে যাবে। বাবা ভয় পেয়ে আমাকে ডাকেন রাত্রি! রাত্রি মা। আমি বাবার পাশে দাঁড়াই। দুজনে মিলে দরজা ধাক্কাতে থাকি। এক সময় বাবলুর ঘুম ভাঙে কিন্তু চেতনা পুরোপুরি ফিরে আসে না কারণ সে কঁপা গলায় ডাকতে থাকে মা। মা। বাতি জ্বালাও মা। তার মনে থাকে না যে মা মারা গেছেন আট বছর আগে। ছেলের দুঃস্বপ্নের সময় তিনি এসে বাতি জ্বালাতে পারবেন না। বাবা ব্যস্ত হয়ে ডাকেন ও বাবলু! বাবলু।
হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়।সাবলীল ঘটনার বর্ননা আর সহজ ভাষায় লেখার কারণে হুমায়ুন আহমেদের বই এর তুলনা নেই। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। হুমায়ুন আহমেদের বইসমূহ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। হুমায়ূন আহমেদ এর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে।তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। নবীজি (২০১২) হুমায়ুন আহমেদের অপ্রকাশিত ও অসমাপ্ত বই।
একজন মানুষের তার দেশের প্রতি, দেশ মাতৃকার প্রতি তার জন্মের ঋণ শোধ করার সাথে একজন লেখকের শোধ করার পার্থক্য কি খুব বেশি? সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে যে গুরুগম্ভীর শব্দটা আমরা হরহামেশাই শুনি সেই দায়বদ্ধতাটা লেখক হিসেবে কিভাবে পুরন করবেন একজন লেখক? মানুষের যেমন পিতৃঋণ-মাতৃঋণ শোধ করতে হয়, দেশমাতার ঋণও শোধ করতে হয়। হুমায়ূন আহমেদের কাছে একজন লেখক হিসেবে সে ঋণ শোধ করা যায় লেখার মাধ্যমে। আর দেশ দেশ মাতৃকার প্রতি একজন লেখক হুমায়ুন আহমেদের যে ঋণ তা শোধ করার মাধ্যম হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন ‘জোছনা ও জননীর গল্প’কে। ভূমিকাতেই হুমায়ূন আহমেদ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন যে ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ কোন ইতিহাসের বই না কিন্তু এটা এমন একটা উপন্যাস যে উপন্যাসের কাহিনীকে সাজানো হয়েছে দেশ মাতার ঋণ শোধ করার জন্য।
ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা মাঝে মাঝে আমার খুব কবিতা লিখতে ইচ্ছা করে। তখন কাগজ কলম নিয়ে বসি এবং খুব আয়োজন করে কবিতার একটা নাম ঠিক করি। ব্যাগ এই পর্যন্তই। কবিতার শিরোনাম লেখা হয় কবিতা আর লেখা হয় না। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি এর মধ্যেই ধরে ফেলেছেন যে “তেতুল বনে জোছনা” আসলে আমার একটা কবিতার নাম। যে কবিতা লেখা হয় নি, এবং কখনো লেখা হবে না। কেউ যদি প্রশ্ন করেন-“এই নামের অর্থ কি? তেতুল বনে জোছনা কি আলাদা কিছু?” তাহলে আমি বিপদে পড়ে যাব। আসলেইতো এর কোনো অর্থ কি আছে? প্রশ্নটাকে এখন আলোর অর্থ কি? বর্ষার মেঘমালার অর্থ কি ? যে অনন্ত নক্ষত্র বীথি আমাদের ঘিরে রেখেছে তার অর্থ কি> আচ্ছা আমরা কি অর্থহীন একটা জগতে বাস করে জীবনে অর্থ অনুসন্ধান করছি না? কেন করচি?