রেজেপ তায়্যিপ এরদোয়ান। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম একজন ক্যারিশম্যাটিক ও জনপ্রিয় নেতা। বিংশ শতাব্দীর শেষ ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই নেতার উত্থান। ২০০১ সালে একে পার্টি গঠনের মাধ্যমে ‘নতুন তুরস্ক’ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০২ সালের নির্বাচনে জনগণের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসেন তিনি। টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায়। তাঁর নেতৃত্বকেই তুরস্ক বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অবকাঠামোসহ সকল খাতে ব্যাপক উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বর্তমান তুরস্ক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। শুধু উন্নয়নই নয়; এরদোয়ান জয় করেছেন তাঁর দেশের সাধারণ জনগণের হৃদয়ও। তুরস্কের সীমানা ছাড়িয়ে দুনিয়াব্যাপী তাঁর জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। বিশ্ব রাজনীতিতে এরদোয়ান একজন অন্যতম নীতিনির্ধারকে পরিণত হয়েছেন। বিশ্বের মজলুম মানুষের পাশে তিনি সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তবে এরদোয়ানের এই দীর্ঘ সফলতার পথচলা মোটেই সহজ ছিল না।
মুসলিম দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ রাষ্ট্রযন্ত্র সম্পর্কে হেঁয়ালিপনার মধ্যে রয়েছে। যৎসামান্য জানাশোনা থাকলেও তা যাপিত জীবনে খুব দরকারি বলে বিবেচিত হচ্ছে না। একুশ শতকের এই বস্তুবাদী দুনিয়ায় খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন একমাত্র দায়! অথচ অজ্ঞাতে রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কিন্তু রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য অধিকারকে নিজের করে নেওয়ার কোনো তাড়না তার ভেতর নেই! উদাসীনতা নাগরিকদের একটা যন্ত্রে পরিণত করছে; যার আল্টিমেট পরিণতি- চালাক, চতুর, বুঝদার এক কায়েমি শক্তির দাসত্ব কবুল করা। মুসলিম মানসে ইসলামি রাষ্ট্রধারণার চরম অনুপস্থিতি বিরাজমান। মুসলমানরা ঠিক জানে না, আদতে কী ধরনের রাষ্ট্র তারা নির্মাণ করতে চায়। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রতত্ত্ব বলতে মুসলমানরা ঠিক কী বোঝে, কী বোঝাতে চায় বিশ্ববাসীকে? যারা জাহেলি রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তে ইসলামি জীবনবোধের আলোকে নববি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে বিভোর এবং সে প্রচেষ্টায় নিজের জীবন- যৌবনের সেরাটা ঢেলে দিচ্ছে, ঠিক তারাও রাষ্ট্রচিন্তাকে আন্তরিকভাবে বোঝার কোনো তাগিদ অনুভব করছে না। এই সংকটাবস্থায় ‘ইসলামি রাজনৈতিক তত্ত্বে রাষ্ট্রধারণা’ গ্রন্থে আধুনিক মুসলিম স্কলারদের রাষ্ট্রচিন্তাকে ঠিক তাঁদের বয়ানে তুলে ধরেছে। গ্রন্থটিতে মুসলিম চিন্তকদের জবানে উপস্থাপিত হয়েছে মুসলমাদের রাষ্ট্র, রাষ্ট্রভাবনা ও রাষ্ট্র-কাঠামো।
ইউরোপের রুগ্ন দেশ তুরস্ক হঠাৎ করেই বদলে গেল। উসমানি ঘোড়ার খুর আবার শব্দ করে ছুটতে শুরু করল। বিশ্বব্যবস্থার নতুন শক্তি হয়ে ওঠা তুরস্ক নিয়ে বাংলাভাষী পাঠকদের অনুসন্ধিৎসু চোখের চাহনি আমরা উপলব্ধি করতে পারি। বাংলাদেশী তরুণ হাফিজুর রহমান বদলে যাওয়া তুরস্কের ভেতর-বাহিরের স্কেচ এঁকেছেন।