প্রিয় পাঠক, উপন্যাসের আড়ালে লুকিয়ে-থাকা কোনো উপন্যাস কি কখনও পড়েছেন আপনি? কখনও কি সমাধান পেয়েছেন রহস্যের নিচে চাপা পড়ে-থাকা রহস্যের? আগাথা ক্রিস্টি অথবা ডরোথি এল. সেয়ার্সের সমসাময়িক গোল্ডেন-এইজ-অভ-মিস্ট্রি’র সঙ্গে কি সাযুজ্য পেয়েছেন আধুনিক কোনো কাহিনির? যদি তিনটি প্রশ্নের জবাবই “না” হয়, তা হলে এ-বই আপনার জন্য। অ্যালান কনওয়ে একজন রহস্য-সাহিত্যিক। তাঁর সাম্প্রতিক উপন্যাসটা সম্পাদনা করার জন্য দেয়া হয়েছে “ক্লোভারলিফ বুকস”-এর এডিটর সুয্যান রাইল্যান্ডকে। ওটা পড়তে গিয়ে চমকে উঠতে হলো সুয্যানকে...শেষের কয়েকটা চ্যাপ্টার হারিয়ে গেছে! অ্যালানের দ্বারস্থ হতে চেয়ে জানতে পারল সে, আত্মহত্যা করেছেন তিনি। কিন্তু সে-মৃত্যু মেনে নিতে পারল না সুয্যান। ওর ধারণা, খুন করা হয়েছে অ্যালানকে। অনন্যোপায় হয়ে শখের গোয়েন্দাগিরিতে নামল সে। ফলে, শুরুটা হয়েছিল সাদামাটা এক রহস্যোপন্যাস দিয়ে, আর কাহিনির শেষ টানল অভিনব এক টুইস্ট।
আবারও রহস্যের আড়ালে রহস্য। আবারও একই মলাটের ভিতরে দুটো উপন্যাস। এবং আরও একবার সুয্যান রাইল্যান্ড আর অ্যাটিকাস পান্ডের দ্বৈরথ। ম্যাগপাই মার্ডার্সের সুয্যান রাইল্যান্ড এখন থাকে গ্রীসের ক্রীটে। ভালোমন্দ মিলিয়ে ওর দিন কেটে যাচ্ছে পলিডোরাস হোটেলে। কিন্তু হুট করেই যেন দিক বদল করল ঘটনাপ্রবাহ। ধনী এক ইংরেজ দম্পতি হাজির হলেন পলিডোরাসে। সুয্যানকে শোনালেন অদ্ভুত এক গল্প... অ্যালান কনওয়ের লেখা “অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস” বইটি পড়ে গায়েব হয়ে গেছে তাঁদের মেয়ে সিসিলি ট্রেহার্ন। তবে তার আগে বলেছে, আজ থেকে আট বছর আগে সংঘটিত এক হত্যাকাণ্ডের দায়ে জেল খাটছে যে-লোক, সে আসল খুনি না। নিজের ভিতরে এমন এক আহ্বান টের পেল সুয্যান, যা অগ্রাহ্য করা অসম্ভব ওর পক্ষে। চলে এল ইংল্যান্ডে। শুরু করল তদন্ত। কিন্তু পদে পদে হাজারটা বাধা। ভালোমানুষির মুখোশ যারা পরে আছে, লেজে পা পড়লে তারাই ফণা-তোলা বিষধর সাপ! শুধু তা-ই না, সে যদি পুলিশের কাজে বাধার কারণ হয়, তা হলে গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়া হলো ওকে। এবং, সে যখন রহস্য-সমাধানের দ্বারপ্রান্তে, তখন আরও একবার ওর জন্য পাতা হলো মৃত্যুফাঁদ। সে-ফাঁদ কি এড়াতে পারবে সুয্যান? সে কি সমাধান করতে পারবে জটিলতম এক রহস্যের... তা-ও আবার শুধু একটি বই সম্বল করে? চলুন, পাঠক, আরও একবার আমরা সঙ্গী হই সুয্যান রাইল্যান্ডের। “অ্যাটিকাস পান্ড টেকস দ্য কেস” ঘেঁটে ক্লু বের করে আমরাও সমাধান করার চেষ্টা করি “মুনফ্লাওয়ার মার্ডার্সের”।
নিজের শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন ডায়ানা ক্যুপার। ছ’ঘণ্টা পর নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো তাঁকে। কাকতালীয়? কোনো ক্লু নেই পুলিশের কাছে। আর তাই ডেকে আনা হলো ড্যানিয়েল হোথর্নকে। হোথর্ন... মেধাবী কিন্তু পাগলাটে একজন ডিটেক্টিভ ইন্সপেক্টর, বহিষ্কৃত হয়েছে পুলিশ ফোর্স থেকে। কেস সমাধান করার আগেই সে গিয়ে হাজির হলো স্বনামধন্য লেখক অ্যান্টনি হরোউইটযের কাছে। ‘আমাকে নিয়ে বই লিখবেন একটা?’ ইচ্ছা না-থাকার পরও না বলতে পারলেন না হরোউইটয। তাঁরা দু’জনে ছুটে বেড়াতে লাগলেন লন্ডনের এমাথা থেকে ওমাথায়। কিন্তু খুনি যেমন ধূর্ত তেমনই সতর্ক। আড়ালে থেকে চোখ রেখেছিল সে পুরো পরিস্থিতির উপর। তাই সুযোগ পাওয়ামাত্র মরণফাঁদে আটকে ফেলল সে হরোউইটযকে।
দ্য লায়ন’স স্কিন মা’র করুণ মৃত্যুর বদলা নিতে ইংল্যাণ্ডে এসেছে ক্যারিল। উদ্দেশ্য: রাজদ্রোহিতার দায়ে ফাঁসিয়ে দেবে লর্ড অস্টারমোরকে, যিনি ওর জন্মদাতা হয়েও ওর সবচেয়ে বড় শত্রু। কিন্তু ঘটতে শুরু করল একের পর এক আজব ঘটনা। ক্যারিলের দ্বিধাবিভক্ত মন শোধ নেয়ার আগে ভালোবেসে ফেলল এক অসহায় অনাথ মেয়েকে। ওদিকে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছে ওরই সৎ ভাই, তাতে ধরা পড়লে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড। শেষ পর্যন্ত যে-নাটকীয় ঘটনা ঘটল, সে-ব্যাপারে ঘুণাক্ষরেও কোনো ধারণা ছিল না ক্যারিলের। দক্ষিণের যাত্রী বন্দিশিবির থেকে এল পয়গাম। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষের আচরণ কংস মামার মতো। মানবিকতার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে রাজনীতির নোংরা খেলা। শেষ পর্যন্ত বাকি রইল একটা কাজই। বিপন্ন জাহাজের উদ্ধারে এগিয়ে চলল ওরা সাতজন। …মানুষগুলো কোথায়? প্রকৃতির হারামিপনা তো রয়েছেই, ষোলো কলা পূর্ণ করতে মুখ খিচাল রক্তলোভীর দল। প্রাণ বাঁচানোই এখন দায়। এত কিছু সামলে পাবে কি অভিযাত্রীরা সেই মানুষটির হদিস- যার আছে দুই জিভ, দুই হৃদপিণ্ড?
বাস্তুহারা হয়ে লন্ডনে এসে কপালগুণে ধনী ব্যবসায়ী হয়ে গেল হুবার্ট অভ হেস্টিংস, কিন্তু অভিজাত বংশের সুন্দরী অথচ রহস্যময়ী ব্লাশকে ভালোবেসে সব হারাতে হলো। পালিয়ে চলে গেল সে তাভানতিনসুয়ু-তে (পেরু), হয়ে গেল “সমুদ্র-দেবতা”। পরিচয় হলো কুইলার সঙ্গে, প্রেম আবার এল জীবনে, কিন্তু বিদ্রোহের আগুন আলাদা করে দিল দুজনকে। বাধল চ্যাকা-য়ুক্কা বনাম ক্যাছুয়া যুদ্ধ, ঝলসে উঠল হুবার্টের তরবারি “শিখা-তরঙ্গ”, ক্যাছুয়াদের সিংহাসনে বসার সুযোগ পেল কারি। একদিন এই লোকের জীবন বাঁচিয়েছে হুবার্ট, কিন্তু আজ রাজা হয়ে সেই কারিই বলছে দরকার হলে কুইলাকে পুড়িয়ে মারবে তারপরও কোনোদিন তুলে দেবে না হুবার্টের হাতে। পাতা হলো নিশ্ছিদ্র ফাদ, অপহৃত হলো মেয়েটা, ওকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠল হুবার্ট। কিন্তু শেষ রক্ষা বোধহয় হলো না, মৃত্যু-উপত্যকায় সদলবলে হাজির হলো প্রতিশোধপরায়ণ কারি। সুতরাং আরও একবার শিখা-তরঙ্গ হাতে নিতে হলো হুবার্টকে। হ্যাগার্ড এর আরেকটি চমকপ্রদ উপন্যাস। নিয়তির কাছে মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণের আরেকটি অনন্যসাধারণ কাহিনি।
কথা ছিল, চিরশত্রু ফাংদের কবল থেকে আমার অপহৃত ছেলেকে উদ্ধার করবেন আবাটিদের রানি, তবে তার আগে ফাংদের সিংহ-মাথার দেবতার বিশাল মূর্তিটা গুঁড়িয়ে দিতে হবে। ফিরে এলাম লণ্ডনে। খুঁজে বের করলাম পুরনো এক বন্ধুকে, সঙ্গে জুটে গেল আরও দুজন। রাইফেল আর ডিনামাইটের বহর নিয়ে আমরা চারজন রওয়ানা হয়ে গেলাম মিশরের উদ্দেশে। কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করে বসল পথপ্রদর্শক শ্যাডর্যাক, ধরা পড়ল আমার বন্ধু, সিংহের মুখে ছুঁড়ে দেয়া হলো ওকে। ওদিকে রানির প্রেমে বুঁদ হয়ে গেল আমাদের দলনেতা অলিভার, শোধ নিতে প্রস্তুত হলো রানির হবু স্বামী সেনাপতি যশুয়া, গভীর রাতে অলিভারের ঘরে ছুরি নিয়ে ঢুকল আততায়ী। মাহেন্দ্রক্ষণে ফাঁস হলো ষড়যন্ত্র: সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রহরীদের, এবার অপহৃত হয়ে যেতে পারেন রানি নিজেই। শুরু হয়ে গেল আবাটিদের গৃহযুদ্ধ, রানির প্রাসাদে লাগল আগুন, রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভি্যোগে বিচারের সম্মুখীন হলাম আমরা, যার রায় হতে পারে একটি-মৃত্যুদণ্ড। বজ্রাহতের মতো প্রত্যক্ষ করলাম আমরা রানীর ছলনাময়ী রূপ। তারপর?