সরদার ফজলুল করিমের পৃথিবী ছিল নিরন্তর অনুসন্ধানের। বিপুল বিচিত্র জীবনাভিজ্ঞতা আর অধ্যয়নের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে তাঁর জীবন। ফলে দিনপঞ্জিতে লেখা নিত্যদিনের খুব সাধারণ ঘটনার মধ্যেও জীবন-জগৎ আর ইতিহাস সম্পর্কে তাঁর গভীর বোধের পরিচয় পাওয়া যায়। সরদার ফজলুল করিমের দার্শনিক মন সারাক্ষণ জীবন ও জগৎ সম্পর্কে নানা জটিল জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজে ফিরেছে। আপন জীবন এবং সমকালীন ইতিহাসকে পরিপ্রেক্ষিতে রেখে তিনি দেশ ও সমাজকে উপলব্ধির প্রয়াস করেছেন। সমস্যা আর সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করেছেন। আবার জীবন বলতেও জীবনের বহুমাত্রিক দিক উঠে এসেছে তাঁর এসব ভাবনালিপিতে। আমার পৃথিবী বইয়ে তাঁর লেখাগুলো ডায়েরি-আশ্রিত। সেগুলোকে দর্শন, সমাজ, রাজনীতি, দেশ, জীবন, সাহিত্য—এভাবে পর্ববিন্যস্ত করে তুলে ধরা হয়েছে। সাহিত্য অংশে স্থান পেয়েছে বই ও লেখক নিয়ে তাঁর পাঠানুভূতি। সরদার ফজলুল করিমের চিন্তাজগৎকে বুঝতে বিশেষ সহায়ক হবে বইটি।
সরদার ফজলুল করিমের ভাবনা, সংগ্রাম ও সাধনায় প্রভাব রেখেছেন—এমন ১৮ ব্যক্তিকে নিয়ে তাঁর লেখার সংকলন এ বই। তাঁদের কেউ জন্মেছেন অন্য কালে অন্য দেশে, কেউবা ছিলেন তাঁর সমসাময়িক ও সহযোদ্ধা। মনুষ্যত্ব প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সবাই তাঁর প্রিয় মুখ। মানবিক সমাজের আকাঙ্ক্ষাকে সারা জীবন নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন সরদার ফজলুল করিম। প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষকতা ও লেখালেখি—সব কাজের মধ্য দিয়ে সারা জীবন চেষ্টা করেছেন সমাজে শুভ চিন্তার প্রসার ঘটাতে। এই পথে তিনি যেমন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন দূর দেশের ও কালের সক্রেটিস কিংবা রুশোকে, তেমনি স্বদেশের ও সমকালের রণেশ দাশগুপ্তের মতো কাউকে কাউকে। দেশ আর কালের গণ্ডি পেরিয়ে এমন সব মানুষকে তিনি ভালোবেসেছেন, করেছেন তাঁর মানসসঙ্গী। লেখালেখির মধ্য দিয়ে তিনি বারবার তাঁদের স্মরণ করেছেন, বলে গেছেন তাঁদের কথা। প্রিয় এমন কিছু মুখ নিয়েই সরদার ফজলুল করিমের লেখার সংগ্রহ এ বই।
সরদার ফজলুল করিম সারা জীবন মানুষের সঙ্গে পথ চলেছেন। দেশ, সমাজ, সমকাল, সংস্কৃতি ও রাজনীতি নিয়ে ভেবেছেন, কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ও লিখেছেন। এসব বিষয়ে তাঁর চিন্তা, অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত হয়েছে বিভিন্ন সময়ের রচনায়। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথম আলো তে প্রকাশিত এমন ২১টি নির্বাচিত অগ্রন্থিত লেখা নিয়ে এ বই। লেখাগুলোয় উঠে এসেছে বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা দিক। এসেছে সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা ও সংকটের কথা। বাদ পড়েনি ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা-অনুভূতি এবং বিশিষ্টজনদের সঙ্গে তাঁর সান্নিধ্যের স্মৃতিসহ নানা প্রসঙ্গ। লেখকের মনীষার পরিচয়বহ রচনাগুলো বর্তমান সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, তেমনি ভবিষ্যত্কালের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। সমকালীন ইতিহাসকে বোঝার পাশাপাশি বইটি দেশের একজন সেরা মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মহত্ত্ব্বকে চিনতেও পাঠককে সহায়তা করবে।