আপাতদৃষ্টিতে বংশবীজ একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস হলেও এর ব্যাপ্তি গভীরতা বহুমাত্রিক। এ উপন্যাস সিলেটের বর্ণময় নানান চরিত্রসম্পন্ন সম্রান্ত, পরিশীলিত এবং রুচিবান একটি বৃহৎ পরিবারের গল্প। আবার তা বিলেতে সিলেটবাসীদের ঐতিহাসিক ঐতিহ্যগত অভিবাসনের প্রেক্ষিতে উপযুক্ত পরিবারের নানান সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে বিলেত যাত্রা ও প্রতিষ্ঠা লাভের আলেখ্যও। এবং এ গ্রন্থকে এও বলা যেতে পারে, এখন থেকে তিন দশক আগে বাংলাদেশের একজন নারীর দেশের বর্ণাঢ্য ও প্রতিষ্ঠিত পেশাজীবী জীবন ও লেখার জগৎকে পেছনে ফেলে বিলেতে নিজেকে প্রতিষ্ঠার উপাখ্যান। আর এই অভাবনীয় আলেখ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন বাংলাভাষার এক কবি ও লেখকের বিলেতে মূলধারা ইংরেজি সাহিত্যে নিজেকে কবি ও লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অদম্য স্পৃহা ও নিরন্তর প্রচেষ্টার ও সমান্তরালভাবে বাংলা সাহিত্যেও নিজের সৃষ্টিকে বেগবান রাখার গল্প। কবি ও লেখক শামীম আজাদ ঈর্ষণীয় কৌশলের সঙ্গে এরকম বহুমাত্রিকতাকে একটি অবিচ্ছিন্ন। কথনকাঠামোর মধ্যে সুগ্রথিত করেছেন। তাঁর নিজের ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক গল্প এতে যেমন আছে, তেমনি আছে তার চোখে বিভিন্ন সময়ের সামাজিক অবস্থা, বাধা, সংগ্রামের ইতিহাস। এ লেখা তাই একাধারে উপন্যাস এবং তার পাশাপাশি ইতিহাস ও সমাজচিত্রণও বটে। এমন একটি অনন্যসাধারণ গ্রন্থের পাঠ দাবী করে সুগভীর অভিনিবেশ এবং সেটা প্রদত্ত হলেই সেই পাঠ হয়ে ওঠে অনাস্বাদিত সুখপাঠ।
“পৃথু, আমার বড় ছেলে, চাকরি সূত্রে नস অ্যাঞ্জেলস থাকে। আমি থাকি নিউ ইয়র্কে। সপ্তাহান্তে ফোনে ওকে একটা টেক্সট পাঠিয়ে চুপচাপ বসে থাকি 'বাবা কেমন আছো? কল করিও' তারপর কোনো এক সময় বাবা আমার টেক্সট ব্যাক করে, 'তোমাকে আগামী কাল কল করবো। আমি আগামী কালকে ভালোবাসতে শুরু করি।” এক সন্ধ্যায় পৃথু ফোন করে মা'র সঙ্গে গল্প তুলে বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান দুর্ঘটনার। ২০১৯-এ বছরের শুরুতেই ইন্দোনেশিয়া এবং ইথিওপিয়ায় দু'টি বিশাল যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনায় পাইলট সহ ৩৪৬ জন যাত্রীর প্রাণনাশ হয়। এর পরেই ১০৩ ...
পুরো বইটি জুড়েই তো শুধু চলার গল্প। বইটিকে কী বলব? উপন্যাস? নাকি পরিব্রাজকের আত্মকথন? জানি না। কিন্তু বইটি পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, অনেক অনেক মানুষের পড়া দরকার এমন বই। লেখক তো কোনও সমাধান বাতলে দেবার চেষ্টা করেননি। নিজের মত চাপিয়ে দেননি। বরং একটা খেলা খেলেছেন। প্রশ্নের খেলা। নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করা আর উত্তর খোঁজার খেলা। পথ চলা তো আসলে একটা খেলাই। তবে ছেলেখেলা তো নয়। এই বইটি আসলে পথ চলার গল্প। চলতে শেখার দর্শনবোধের গল্প।
আমেরিকান ভ্রাম্যমান সাংবাদিক কার্ল হফম্যান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে খবর-প্রতিবেদন তৈরি করেন। আফ্রিকার কঙ্গোতে একটা প্রতিবেদন করতে গিয়ে ওখানকার আভ্যন্তরিন প্লেনে চড়ার ভি অভিজ্ঞতা হয়। তারপর ঝোঁকের বশে তৃতীয় বিশ্বের তাবৎ গণ-পরিবহণগুলোর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র তুলে ধরতে পরিবার-পরিজন ফেলে ঘর ছাড়েন। সেই সুবাদে কিউবা থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা হয়ে এশিয়ার কয়েকটা দেশে ঘুরে বেড়ান। সব দেশের সাধারণ জনগণ প্রিয়জনের টানে, জীবিকার সন্ধানে নূন্যতম নিশ্চয়তার কথা ভুলে মারাত্মক বিপজ্জনক এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ বাস-ট্রাক-লঞ্চ- হাওয়াই জাহাজে চড়তে বাধ্য হয়। কার্লও সবার মতো একই যানবাহনে চড়ে এক চরম অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে নিতে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান। সদরঘাট থেকে রকেট ইষ্টিমারে করে খুলনায় গিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছেন। লঞ্চে করে চাঁদপুরে যাবার পথে ফেরদৌসের সাথে পরিচয় হয়। বাংলাদেশিদের আতিথেয়তায় অভাবনীয়ভাবে মুগ্ধ হয়ে যান। সব অভিজ্ঞতার ফসল একত্র করে লুনাটিক এক্সপ্রেস' বইটায় তুলে ধরেন। আমার অনভিজ্ঞ হাতের অনুবাদে আপনাদের সাথে তাঁর অভিজ্ঞতাটা ভাগ করতে নাম দিয়েছি— খ্যাপার অভিযাত্রা। তাহলে চলুন, কার্ল ভাইয়ের সাথে আমরাও ফেরদৌসের উঠোনে বসে ডাবের পানি পান করতে করতে একটু জিরিয়ে নেই, আভিখোর স্বাদ নেই। পৃথিবীটা একটু অন্য চোখে দেখি, ঘুরে আসি.....