সুখ ও প্রাপ্তি ক্ষণস্থায়ী। এর বিপরীতে মানুষের জীবন নিরন্তর সংগ্রামের। এই বইয়ের গল্পগুলো যেন অতল সমুদ্রের মাঝখানে বিকল হওয়া একেকটা নৌকা। ঢেউয়ের তোড়ে ভেসেই চলেছে—উদ্দেশ্যহীন, কূলকিনারাহীন। এখানে প্রেম নেই, আশা নেই। আছে এক ঘোরলাগা গোলকধাঁধার ক্ষয়ে যাওয়া ধূসর জগত্। যে জগতে জীবন হোঁচট খায় পদে পদে। ভেঙে পড়ে চেতনার সব প্রাচীর। মানসিক টানাপোড়েন, অসহায়ত্ব, জীবনের অর্থহীনতা, নৈতিক স্খলন, অবক্ষয়, সংশয় ও মৃত্যুর মতো বিষয়গুলো আনিসুর রহমানের গল্পে উঠে এসেছে। এসব গল্পে সময় অলস, স্থবির। সিসিফাসের নিয়তি নিয়ে সবকিছু যেন ফিরে আসে একই জায়গায় বারবার।
জীবনের প্রয়োজনে মানুষ দেশান্তরী হয়। কঠোর সংগ্রাম করে সচ্ছল জীবন খুঁজে নেয়। নিজের জন্যে ও দেশে রেখে আসা পরিবার, স্বজনের জন্যে। যে কোনও প্রাপ্তির পেছেনে হারানোর গল্প থাকে। থাকে হাহাকার, দীর্ঘশ্বাস। শেকড় ছেড়ে আসা মানুষেরা প্রতিনিয়ত শেকড়ে ফেরার স্বপ্ন লালন করে বুকের গহীন কোণে। ভাবে, একদিন দেশে ফিরে যাব। অবশ্যই ফিরে যাব। কিন্তু ফেরা কি হয়? 'অনন্ত গোধূলির ছায়া' গ্রন্থের প্রতিটি গল্প দেশ ও প্রবাসের কঠিন বাস্তবতার কথা বলে। বুকের ভেতরে পুষে রাখা স্বপ্নের ও দীর্ঘশ্বাসের কথা বলে। জীবন যুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবার কথা বলে। এক কথায় বলা চলে গল্পগুলো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।