মার্কিন কথাসাহিত্যের বরপুত্র আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ছিলেন একাধারে নন্দিত ও নিন্দিত। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই মানুষটি দুটি বিশ্বযুদ্ধই প্রত্যক্ষ করেন। প্রথমটিতে মারাত্মক আহত হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান তিনি। পরবর্তী জীবনে দুবার বিমান দুর্ঘটনায় নিজের ও স্ত্রীর মৃত্যুর খবর পড়েছেন সংবাদপত্রে। অ্যাম্বুলেন্সচালক ও সমর সাংবাদিক হিসেবে রণক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে শিকার, মুষ্টিযুদ্ধ, ষাঁড়ের লড়াই, গভীর সমুদ্রে মাছ ধরাসহ নানা দুঃসাহসিক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন বয়সী নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন, পরবর্তী জীবনে যাঁদের মধ্যে ছিলেন এক আফ্রিকান কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীও। বিভিন্ন সময়ে একাধিক পক্ষের হয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তিনি গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, প্রমাণিত ও অনুমাননির্ভর এমন ভূমিকার কথাও উপেক্ষা করা যায় না। তাঁর প্যারিস-জীবন নিয়ে মরণোত্তরকালে প্রকাশিত বিতর্কিত স্মৃতিগ্রন্থটির পূর্ণাঙ্গ সংস্করণ প্রকাশিত হলে তা আবার নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করে। হেমিংওয়ের জীবনের এ ধরনের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে এই বইয়ে চারটি গবেষণালব্ধ রচনা সন্নিবেশিত হয়েছে, যা পাঠে রমণীমোহন, দুঃসাহসী ও শক্তিশালী এই সাহিত্যিক প্রতিভা ও বিতর্কিত মানুষটিকে চেনা যাবে।
গ্রাসিয়াস আ লা ভিদা’ বা ‘জীবনকে ধন্যবাদ’ বলতে পারাটা বোধ হয় এ সময় পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। জীবনের সব অনিশ্চয়তাকে অভিবাদন জানিয়ে রাত্রিশেষের গান এমন এক সমকালীন অভিজ্ঞতার গল্প বলে যেখানে সপ্তাহের দিনরাত একেবারে নিশ্চল, গতিহীন। অচল এক জোড়া পায়ের কাছে তারপরও সমুদ্র-নীল অশান্ত কিছু ঢেউ ছুটে আসে। একজন অভিজাত ‘পঙ্গু’ অসহায় নারীর চোখ দিয়ে আমরা নাগরিক বাংলাদেশ আর বদলে যাওয়া দুনিয়াকে দেখি। বৃষ্টির তোড়ে ডুবে যাওয়া নতুন কবর, গাঙচিল, চন্দ্রমল্লিকা, খালার ছোট নাকফুল, অন্য ভাষার ভাঙা ভাঙা শব্দ-বাক্য, গিটার হাতে আন্তোনিও বান্দারাস, প্রথম চুমু খাওয়ার ইচ্ছে, পরাবাস্তব আলো—কাহিনির এই অনন্য ইমেজগুলো একটার পর একটা ভিজে ক্ষয়ে যাওয়ার ছবি যেমন এঁকেছে, তেমনি শুকনো আকাশে উড়িয়েছে স্মরণের গাঙচিল।
মৌলভিবাজারের কমলগঞ্জ থেকে আসা মণিপুরি তরুণী অনিমা সিংহ। ঢাকা শহরে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে এসে সাথি হিসেবে পায় আরেক উন্মূল তরুণী শীলাকে। এই আলোকিত জনমুখর চকচকে শহরে দুটি মেয়ের টিকে থাকার নিত্যদিনের সংগ্রামে নাটকীয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে অনেকেই। এদের মধ্যে আছে পড়তি নায়িকা মোহিনী চৌধুরী, থিয়েটারকর্মী চিশতী আর সেলিব্রিটি অভিনেতা আনিস জুবের। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের পেছনে এক এঁদো গলি থেকে বেরিয়ে ক্রমে এক রঙিন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় ঘটতে থাকে তাদের। কিন্তু সেই দুনিয়া কি সত্যি রঙিন? সেই একই কমলগঞ্জের আরেক মণিপুরি তরুণী তারাল্লেই শৈশব থেকে মনের মাঝে ঠাঁই দিয়েছে এলাকার বীরপুরুষ গিরীন্দ্রকে। বড় হয়ে স্বপ্নের মানুষটিকে যখন নিজের করে পেল, তখন সে-ও কি আসলে সুখী হতে পেরেছিল? গল্পকার ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনির লেখক হিসেবে সমধিক পরিচিত তানজিনা হোসেন তাঁর এই প্রথম উপন্যাসে এসব প্রশ্নেরই জবাব দিয়েছেন। লেখকের মায়াবী গদ্যের সঙ্গে মণিপুরি সংস্কৃতির অনাস্বাদিত জগতেও পাঠক আপনাকে স্বাগত!