শিশুরা গল্প শুনতে বা পড়তে ভালোবাসে। কিন্তু সব গল্পই কি শিশুদের ভালো লাগে? না। শিশুরা তাদের মতো গল্প পছন্দ করে। কখনো রূপকথা, কখনো বীরত্ব, কখনো বা শিক্ষণীয় গল্প প্রভাবিত করে তাদের। কখনো শুনতে চায় নিজের জীবনের গল্প। গল্প শিশুদের কল্পনাশক্তিতে প্রখর করে। তাদের ভবিষ্যত চিন্তাকে প্রভাবিত করে। তাদের জীবন বদলে দেয় অনেক গল্প। কিন্তু রূপকথার গল্পগুলো তো মিথ্যা। অনেক গল্প আছে যেগুলো অবাস্তব কাহিনিতে ভরা। আবার অনেক গল্প এমনও আছে যেগুলো ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক। তাহলে কোন গল্প শোনাবো তাদের? কেমন হয় যদি শিশুদের গল্প শোনাই কুরআনের আয়াত দিয়ে? যে গল্পে নায়ক থাকবে সে নিজেই। যে গল্প কোনো রূপকথা নয়, কোনো কল্পনা নয়; বরং তার জীবনের গল্পই বলা হবে কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। তার পরিবার, বন্ধু, স্কুল আর চারপাশের পরিবেশই হবে তার গল্পের প্লট। কুরআনের এক-একটি আয়াত অনুযায়ী এমনই যুগোপযোগী গল্প বলেছেন নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। আমাদের সময়ের গল্পগুলোই সাজিয়েছেন কুরআনের আয়াত অনুযায়ী। শিশুদের ঈমানি চরিত্র ও জীবন নির্মাণের এক অভিনব আয়োজন এক একটি বই।
পশ্চিমা ও হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের সন্তানরা মূলত কী শিখছে? ইন্টারনেট-টিভির মুক্ত সংস্কৃতির বদৌলতে ছোটবেলায় তারা শিখছে হ্যারি পটার, সুপার হিরো, ডিসি-মার্ভেল, রাম-ভীম-শিব আর ঠাকুরমার ঝুলির সব মিথ্যা গল্প। এই মিথ্যা ও বানোয়াট গল্পগুলো শিশুদের মনে এমনই প্রভাব ফেলে, বিশ্বাস করতে শুরু করে—পৃথিবীকে ধ্বংস ও অন্যায়ের হাত থেকে বাঁচাতের পারে কেবলই সুপারহিরো আর হিন্দুদের দেবতারা। ফলে, একটু বড় হলে যখন আমরা আমাদের সন্তানদের ইসলাম ও ইবাদত পালনের কথা বলি, সেগুলো তাদের মনে কোনো রেখাপাত করে না। নবী, সাহাবি, আউলিয়া, আলেম আর পীর-মাশায়েখদের জীবন ও জীবনের গল্প যখন তাদের শোনাই, সেগুলো তাদের কাছে পানসে লাগে। একদমই মনে দাগ কাটতে চায় না। ফলতঃ দেখা যায়, ভবিষ্যত জীবনে ইসলামি অনুশাসনের পবিত্র পিঞ্জরে আগলে রাখা সম্ভব হয় না তাদের। এজন্য শিশু বয়সেই সন্তানদের মন-মস্তিষ্কে স্থান দিতে হয় নবী-রাসুল, সাহাবি-তাবেয়ি এবং ইসলামি আদর্শের চেতনা। আর শিশু-কিশোরদের মনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে নানা স্বাদের গল্প। হরেক রকম গল্প। গল্পের বুনন তাদের মনের মধ্যে রোপন করে বিশ্বাসের চারাগাছ। তাই তাদের শোনাতে হয়, দেখাতে হয়, পড়াতে হয় সত্য গল্প। যে গল্প তাদের জীবনকে উজ্জীবিত করবে ইসলামের পথে। নন্দিত লেখক সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর সাহাবিদের জীবনের এমন গল্প নিয়েই লিখেছেন ‘ছোটদের সাহাবি সিরিজ’-এর ৫টি বই। শিশুতোষ ঢংয়ে লেখা এবং চাররঙা ঝকঝকে কাগজে ছাপা বইগুলো শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দেবে আমাদের শিকড়ের সঙ্গে। আধুনিকতা আর পাশ্চাত্যের মোহে যে শিকড়ের কথা আমরা ভুলতে বসেছি প্রায়।
আপনার শিশু নিশ্চয়ই গল্প শোনার বায়না ধরে, কখনোও-বা কিছু পড়তে চায়। তখন আপনি কী করেন? কী গল্প শুনিয়ে দেন? আচ্ছা, তাদের হাতে কি রূপকথার কোনো গল্পের বই তুলে দেওয়া কথা ভাবছেন? তাহলে নিশ্চিত থাকুন- মনের অজান্তেই শিশুর মনে শিরক ও কুফরের বীজ বপন করে দিচ্ছেন। অথচ, পবিত্র কুরআনেই রয়েছে অসংখ্য চমৎকার কাহিনি, ভ্রমণ বৃত্তান্ত, পৃথিবীর সেরা ব্যক্তিদের জীবনী, মন্দ লোকদের করুণ ইতিহাস, শিক্ষামূলক ঘটনা, সঠিক পথে পরিচালিত করার দিক-নির্দেশনা, দুআ ও প্রার্থনা। এসবই আমাদের আলোর পথ দেখিয়ে দিতে পারে। কুরআনুল কারিমের অনুপম কাহিনিগুলো পড়ে আমাদের শিশুরা তাদের জীবনের দিশা খুঁজে পাবে। শিশু-মনে বিশ্বাসের পরশ বুলিয়ে দিতেই ‘গল্পে গল্পে আল কুরআন’ সিরিজ। এ সিরিজ শিশুদের জন্য দারুণ এক উপহার। এ সিরিজ পড়ে শিশুরা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, সত্যবাদী এবং মা-বাবার জন্য সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ।
শিশু আকীদা সিরিজের বইগুলোতে শিশুদের অবুঝ মনে বিশ্বাসের ভিত গড়ার জন্য অনেকগুলো ছোট ছোট কবিতার মতো করে দেয়া আছে। লেখাগুলো অনেক চমৎকার। আর এই কবিতার মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বা তার সৃষ্টির প্রতি বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে।
গল্পে গল্পে ৪০ হাদীস” বইটিতে গল্পের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চল্লিশ হাদীস শেখানো হয়েছে। মহানবী ﷺ এর মুখ নিঃসৃত আসমানী বাণী উঠে এসেছে গল্পে গল্পে। প্রতিটি গল্পের নির্যাসে রয়েছে নবীজি ﷺ এর সুপরিচিত হাদীস। বইটির লেখক দক্ষ হাতে গল্পে গল্পে সাজিয়েছেন নবীজি ﷺ এর চল্লিশটি হাদীস - যা সহজেই বোধগম্য এবং মনে রাখার মতো। শিশু-কিশোরেরা, এমনকি আমাদের বড়রাও অনেক সময় তাত্ত্বিক আলোচনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, সেই যায়গা থেকে এই বইটি স্বতন্ত্র। ছোট বড় সবাই গল্পে গল্পে নবীজি ﷺ এর এই চল্লিশটি হাদীস উপভোগ করতে পারবে বলে আমি মনে করি। আর উপভোগ্য জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ কয়েকগুণ বেশীই থাকে। বইটির গল্পগুলো নিছক কোন গল্প নয়। বরং প্রতিটি গল্পই শিক্ষণীয়। আদব, আখলাক, আচার-আচরণ, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যসহ নবীজি ﷺ এর হাদীস থেকে জীবন গড়ার পাথেয় রয়েছে প্রতিটি গল্পে। গল্পে গল্পে হাদীসের শিক্ষাগুলো শিশু-কিশোরদের একাধারে একজন ভালো মানুষ, একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, সেই সাথে একজন দ্বীনদার মানুষ হতে শিক্ষা দেবে। আমাদের শিশু-কিশোরেরা আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের তরবিয়ত আমাদের হাতেই নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে সে চিনতে পারে তার সৃষ্টিকর্তাকে। তার আদর্শকে। তার জীবন চলার পথকে। এ জন্য তাদেরকে কল্পকাহিনী আর গাল্পগল্প না শুনিয়ে এমন কিছু শোনানো উচিৎ, যাতে তারা জীবনের আসল উদ্দেশ্য খুঁজে পায়। বড় হয়ে যেন মাতা-পিতাকে সম্মান করতে শিখে। উত্তম আদব, আখলাকে একজন সত্যিকারের মানুষ হয়ে গড়ে ওঠে – এই দুআ ও প্রত্যাশায়।