ষাটের দশকে ছাত্র ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন এবং স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোর সঙ্গে একাত্ম হয়ে আছেন শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদ। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদ, ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী ও সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির কর্মকাণ্ডেও তিনি ছিলেন একান্ত সুহৃদ। প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সমর্থন জানিয়ে জনতাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে একান্ত প্রেরণা ছিলেন এই গণনায়ক। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ। মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান এবং তাঁদের অস্ত্রভাণ্ডার সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি, যার পরিণাম হয়েছে ভয়াবহ। ১৯৭১ সালের ৩০ আগস্ট পাকিস্তানিরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর হত্যা করেছে। সাংস্কৃতিক কাজগুলোর সূত্রে শহীদ আলতাফ মাহমুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ছিল এ বইয়ের সম্পাদক মতিউর রহমানের। ছিল অপার মুগ্ধতা। সেই মুগ্ধতা এবং কৃতজ্ঞতা থেকে আলতাফ মাহমুদের অন্তর্ধানের ৫০ বছর পূর্তিতে এ বই। আলতাফ মাহমুদের একান্ত আপনজনদের লেখাগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরবে ব্যক্তি ও সুরকার আলতাফ মাহমুদকে; সেলুলয়েডের পর্দার মতো সামনে তুলে ধরবে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলো। নবীন ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পাঠক ও গবেষকদের আলতাফ মাহমুদকে জানার তৃষ্ণা মেটাবে এ বই।
কবি নজরুল ইসলামের পর উভয় বঙ্গে সমান সমাদৃত লেখক নিঃসন্দেহে সৈয়দ মুজতবা আলী এবং ষাটের দশকের তিনি সর্বাধিক নন্দিত বাঙালি লেখকও বটে। ‘দেশে-বিদেশে’ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই মুজতবা আলী পাঠকচিত্ত জয় করে নেন। এবং শেষদিন পর্যন্ত তাঁর খ্যাতি ছিলো অম্লান। আন্তর্জাতিক চেতনায় সমৃদ্ধ এই লেখকের বিশ্বমানবিকতা এবং অননুকরণীয় অনন্য শৈলীতে তাঁর স্বাতন্ত্র্য বিশেষভাবে লক্ষ্যযোগ্য। বাঙলা সাহিত্যে মজলিশী বা আড্ডা-রসের একটি ধারার ঐতিহ্য ছিলো,কিন্তু খোশগল্প আলী সাহেবের রচনায় শিল্পসুষমামণ্ডিত হয়ে আর্টের পর্যায়ে উন্নীত। তাঁর কৃতিত্বের মূলেও রয়েছে মজলিশী রস ও তার বাহন বাক্- নৈপুণ্য।