বাংলাদেশের স্বাধীনতার কবি শামসুর রাহমান বাংলা কাব্যজগতে এক জ্যোতিষ্ক হয়ে আছেন। তাঁর সমসাময়িককালে তিনিই ছিলেন উভয় বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি। বাংলাদেশে আধুনিক কবিতার ধারা তিনিই সূচনা করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তিনি ছিলেন সোচ্চার। স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি হারিয়ে বেকারত্ব গ্রহণ করতে দ্বিধা করেননি। তাঁর এই প্রতিবাদী ভূমিকার কথা রয়েছে এই বইয়ে । তিনি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে 'হাতির শুঁড়' নামে একটি কবিতা লিখেছেন। সাহস করে আর একটি কবিতা লিখেন বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে বন্দি। বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে কবি শামসুর রাহমান একটি অসাধারণ কবিতা 'টেলেমেকাস' লিখেন। প্রবাসে স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন লেখক। বাংলাদেশে চলমান সে আন্দোলনে কবি শামসুর রাহমান কবিতায়, রাজপথে এবং মিছিলে মিটিং-এ সোচ্চার ছিলেন। কবির এই সংগ্রামী মনোভাবের কারণে তাঁর সাথে একাত্মতাবোধ করছিলাম। এই প্রতিবাদী কবিকে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসি। তিনি আমাদের বাসগৃহে দীর্ঘদিন অতিথি ছিলেন। আমাদের সৌভাগ্য হয়েছিল কবিকে খুব কাছ থেকে জানার এবং বোঝার।সুযোগ হয়েছিল তাঁকে সেবা করার। কবি শামসুর রাহমান দু'দফায় প্রায় ছয় মাস আমেরিকায় অবস্থান করেন। অনেকেই কবি শামসুর রাহমানের এই ছয় মাসের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নন। লেখক এ গ্রন্থে পাঠকদের জন্যে কবি শামসুর রাহমানের চারিত্রিক গুণাবলি, স্বাধীনতার কবি হিসেবে তাঁর একনিষ্ঠতা এবং যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর ছয় মাসের কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করেছি।