আমার বাবা ছিলেন একজন নেশাদার পাখি শিকারি। সরকারি চাকরি করতেন তিনি। চাকরিসূত্রে যেখানেই থাকতেন, মূল্যবান বন্দুকটা সেখানেই রাখতেন। মায়ের কাছে শুনেছি আমি, ঘুমের ভেতরও বাবা পাখি শিকার করতেন এবং চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে বসতেন, 'পাখি পাখি, মানিকজোড়-মদনটাক-গগনবেড় পাখি'। তাঁর ভাগ্যটাও পক্ষে ছিল। সারা জীবন চাক্রি করেছেন সুন্দরবন ঘেষাঁ শরণখোলা, রায়েন্দা, মোরেলগঞ্জ, চালনা (মংলা), দাকোপ, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা), মোল্লাহাট ও ফকিরহাটে। যেখানেই তিনি ছিলেন, সেখানেই জুটিয়ে নিয়েছিলেন শিকারি বন্ধুদের। এমনকী চাক্রির মায়া ত্যাগ করেও শিকারে বেরুতেন তিনি। সুন্দরবনে ঢুকতেন চোরা শিকারি বন্ধুদের সাথে, শিকার করতেন হরিণ, বনমোরগ, সুন্দরী হাঁস, মদনটাক, মানিকজোড় পাখি। বাল্য-কৈশোরে তাঁর সাথে সুন্দরবনে শিকারে যাবার সুযোগ আমার বহুবার হয়েছিল। বাবার বন্দুকটা ছিল ইংল্যান্ডের। বাবার টার্গেটও মিস হতো না সহজে। বন্যপ্রাণী আইন তখনো ছিল, কিন্তু কড়াকড়ি ছিল না মোটেই। সুন্দরবনের নেশাটা তাই আমাকেও পেয়ে বসেছিল ভালভাবে। তাই সুযোগ পেলে এমনকী স্কুল কামাই করেও আমি চলে যেতাম শরণখোলা বা মোরেলগঞ্জে। বাবা হাসতেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ চোরা শিকারি বন্ধু (আমার শিকারি কাকা) বুঝে ফেলতেন আমার মতলবটা।