জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি। তাঁরই নেতৃত্বে পরাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাঙালির অধিকার আদায়ে আপসহীন ছিলেন। তাঁর দৃঢ়তা, বাগ্মিতা ও সাহসিকতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাে বটেই, সারা বিশ্বেই এক বিরল ঘটনা। আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি অমর একুশের স্মৃতি জাগানিয়া এই গানটি তারই রচিত । আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। বহুদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়েছেন। 'মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করেছেন। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুর তুলনামূলক বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে এই গ্রন্থে। ‘বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ একটি দ্বিভাষিক গ্রন্থ। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও বইটি এক মলাটে বন্দী করা হলাে। এর ফলে শুধু বাংলাভাষী পাঠক নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও বইটি পড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে-বুঝতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক। তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর। যত দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালি জাতির সামনে থাকবে তত দিন এ জাতি দিকভ্রষ্ট হবে না।
এই গ্রন্থের জন্য বন্ধুস্থানীয় তিন বাংলাদেশি ব্যারিস্টারের কাছে নূরের ব্যাপারে ‘আইনের ফাঁকে’র বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি নূর চৌধুরীর আবেদন চার চার বার বাতিল হয়েছে। ক, সেই ধারায় তাে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কারের বিধান রয়েছে। আবার অন্য বিধানে আছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তকে কানাডা থেকে ফেরত দেয়া হবে না! স্ববিরােধী এই বিধান সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? কিন্তু আমাদের খ্যাতিমান আইনজীবীরা সাড়া দেননি। বরং তাঁরা আইনের জটিলতা তুলে ধরেছেন। অথচ ইচ্ছে করলে, তাঁরা কেউ কেউ এ ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ে লড়তে পারতেন, যা ইতিহাসের পাতায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকত।
জাপান -বাংলা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শতাধিক বছরের পুরনো । ১৯০২ সালে জাপানি মনীষী ওকাকুরা তেনশিন বৃটিশ-ভারতের রাজধানী কলিকাতায় যান এবং স্বামী বিবেকানন্দ,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,ভগিনী নিবেদিতা,অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখের সঙ্গে বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন । সেই থেকে শুরু জাপানি ও বাঙালি জাতির মধ্যে প্রত্যক্ষ শিক্ষা,সাংস্কৃতিক,ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক ভাববিনিময়। জন্ম হয় বহু ঘটনার। ১৯১২ সালে ঢাকার মেয়ে হরিপ্রভা মল্লিক তাঁর জাপানি স্বামী তাকেদা উয়েমোনসহ জাপানে আসেন ।১৯০৮ সালে জাপানি বৌদ্ধভিক্ষু কিমুরা রিউকাল চট্টগ্রামে যান পালি ভাষা শেখার জন্য । ১৯১৫ সালে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু,১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র বসু,১৯৪৬ সালে টোকিও মিলিটারি ট্রাইব্যুনালে আসন গ্রহন করেন বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এবং ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্বে ও পরে অনেক ওকাকুরা-রবীন্দ্রভক্ত বিশিষ্ঠ জাপানি বাংলা অঞ্ছলে যান । বস্তুত,পূর্বজদের ধারাবাহিকতা ধরেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে জাপানি রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে জাপান বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে বঙ্গবন্ধুর আহবানে। কিন্তু সেই সম্পর্কের ইতিহাস বাঙালিদের কাছে প্রায় অজানাই রয়ে গেছে । সেই অজানা ইতিহাসেরই সংক্ষিপ্ত রূপ এই গ্রন্থ ।