রাজনীতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়া, ষড়যন্ত্র নিয়ে লেখকের অনুসন্ধানী গবেষনা ১১ জানুয়ারি ২০০৭। বিকেলে বঙ্গভবনে মঞ্চস্থ হলো রুদ্ধশ্বাস নাটক। হঠাৎই বদলে গেল দেশের হালচাল। ক্ষমতায় এলো সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। লাইনচ্যুত গাড়ি ফের লাইনে তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে সরকার হাত দিলো অনেকগুলো কাজে, যা প্রশংসা ও নিন্দা দুটোই কুড়িয়েছে। উথাল-পাথাল এই দুই বছর ছিলো ঘটনাবহুল। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এ অধ্যায়। ১১ জানুয়ারির পালাবদলের ক্ষণটির নাম হলো ওয়ান-ইলাভেন বা এক-এগারো। প্রশ্ন হল - এই সেনা হস্তক্ষেপ কি বিরাজমান রাজনৈতিক সংকটের অনিবার্য পরিণতি, নাকি এর পেছনে ছিলো অনেক দিনের পরিকল্পনা? কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের প্রতিক্রিয়া, নাকি ষড়যন্ত্র? লেখকের অনুসন্ধানী গবেষণায় ঐ সময়ের একটি সুরতহালের চেষ্টা করা হয়েছে এই বইয়ে।
‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ আবুল মনসুর আহমদের আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য গ্রন্থ। স্মৃতিকথার আঙ্গিকে লেখা এই বইটিতে লেখক ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে পুরো পাকিস্তান আমল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়-পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রায় অর্ধশতাব্দীর রাজনৈতিক ইতিহাস অত্যন্ত সরল ও অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। লেখক নিজে ছিলেন এই সময়ের অনেক ঘটনার সাক্ষী, কিছু ঘটনায় তাঁর ছিল সরাসরি অংশগ্রহণ। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর সে অভিজ্ঞতারই বস্ত্তনিষ্ঠ বয়ান পাওয়া যায় বইটিতে। কৌতূহলী পাঠক, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে বহুদিন ধরেই এ বই একটি মূল্যবান ও নির্ভরযোগ্য তথ্য-আকর হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে গুরুত্বপূর্ণ এ বইটির একটি সুমুদ্রিত সংস্করণ প্রকাশ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
জনসংখ্যার অনুপাতের বিচারে ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিম সংখ্যা স্বল্প হলেও বিদেশি শাসকদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের অবদান ছিল অনেক বেশি। ভারতের ইতিহাসই এর সাক্ষী। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের বহু আগে থেকে ভারতের বহু মুসলিম শাসক ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। এমনকি স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনও আলেম সমাজসহ ভারতীয় মুসলমানদের বড় অংশ দ্বিজাতি তত্ত্বের বিরোধিতা করে অখণ্ড ভারতের পক্ষে অটল ভূমিকা পালন করেছেন। বইটিতে দেশের জন্য ভারতীয় মুসলমাদের অবদান তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতায় জিতে ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এম জে আকবরের বিশ্লেষণ-ভিত্তিক গ্রন্থ ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স ইসলাম’ এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করতে যাচ্ছে সৃজনশীল গ্রন্থ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘নালন্দা’। অন্যান্য যেসব প্রকাশনা সংস্থা বইটির অনুবাদ প্রকাশের আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পূর্ব পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্তানের জাতির পিতা যথাক্রমে মোহনদ্াস করমচাঁদ গান্ধী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলনে শরীক অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের ভূমিকার ওপর তথ্যনির্ভর গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ ‘গান্ধী’স হিন্দুইজম: দ্য স্ট্রাগল অ্যাগেইনস্ট জিন্নাহ’স ইসলাম’ । বইয়ের শিারোনামই বলে দেয়, লেখক অবিভক্ত ভারতের পক্ষে গান্ধীর অবস্থানকে উর্ধে তুলে ধরেছেন এবং জিন্নাহকে তুলোধূনা করতে ছাড়েননি। মানুষের সমালোচনা থেকে কেউ রক্ষা পায় না। সৃষ্টিকর্তা, তিনি আল্লাহ হোন, ইশ্বর বা ভগবান হোন -- তারাও মানুষের সমালোচনা, হাসি-মস্ক‹রার পাত্র। তাদের প্রেরিত নবী-রাসুল, অবতাররা সমালোচনার উর্ধে নন। অতএব গান্ধী ও জিন্নাহ তাদের পক্ষ-বিপক্ষের দ্বারা প্রশংসিত ও সমালোচিত হবেন, এটাই স্বত:সিদ্ধ। বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে অহরহই দেখা যায়, গতকাল যারা একজনের মাথায় ক্ষমতার রাজমুকূট পরিয়েছেন, আজ তাকে মসনদ থেকে টেনে নামাচ্ছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে আমি ভারত বিভাগ মেনে নিতে পারি না। কোনো রাষ্ট্রের কোনো বিভাজন মেনে নিতে পারি না। আমি ‘বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যে’ (ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি) বিশ্বাস করি। এটি নতুন বা আধুনিক যুগের ধারণা নয়। সূফি দার্শনিক ইবন-আল-আরাবি (১১৬৫-১২৪০) বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারণা দিয়েছেন, যাকে তিনি বলেছেন ‘ওয়াহদাত আল-ওয়াজুদ’ অর্থ্যাৎ ‘সত্তার ঐক্য’। অর্থ্যাৎ ‘সেই বাস্তবতা এক, আল্লাহ বা ইশ্বরের অস্তিতই একমাত্র সত্য, অন্যান্য সবকিছু ছায়া, আল্লাহ গুণাবলীর প্রতিফলন মাত্র। আল-আরাবির দর্শনকে সার্বজনীন রূপ দিয়েছেন আবদ আল-করিম আল-জিলি (১৩৬৬-১৪২৪), যিনি বলেছেন, ‘আল ওয়াহদাহ ফিল-কাসরাহ ফিল-ওয়াহদাহ’ অর্থ্যাৎ বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য এবং ঐক্যের মধ্যে বৈচিত্র’। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিরা আরও চমৎকারভাবে ‘ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি’কে বিশ্লেষণ করেছেন। এম জে আকবরের গ্রন্থের প্রতিপাদ্যও তাই। এই গ্রন্থে ব্রিটিশের কবল থেকে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মুসলমানদের পৃথক আবাসভূমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা এবং মাত্র ২৪ বছর পর বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে পাকিস্তান তত্ত্বের অসারতার কথাও বলা হয়েছে। সাধারণ পাঠক ছাড়াও রাজনীতিবিদ, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকদের অবশ্য পাঠ বই বলে আমার বিশ্বাস।