সমবয়সী কিশোর-কিশোরীর সঙ্গে পাঠকের ঘোরা হবে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইথিওপিয়া ও সিয়েরা লেওনের হানাবাড়িতে। ঘটবে ভুতুড়ে ঘটনা, অনুভব করা যাবে অনেক বছর আগে মৃত মানুষের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস। একটি রহস্যময় ফিটনগাড়ির ঘোড়াগুলোর চোখ ঝলসে উঠবে স্বর্ণমুদ্রার মতো। সুড়ঙ্গের অন্ধকারে হায়েনারা হাত থেকে তুলে নেবে মাংস। আর ব্রিটিশ-আমলের হিলস্টেশনে মৃত সাহেব-মেমরা ফিরে আসবেন স্টিমইঞ্জিনে টানা রেলগাড়িতে। একটা গল্প যে ঘোর তৈরি করে তা-ই পাঠককে নিয়ে যাবে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত।
দানাকিল ডিপ্রেশনে আগ্নেয়গিরির লাভালিপ্ত নিসর্গের বিবরণের সঙ্গে লেখক যুক্ত করেন স্থানীয় আফার সম্প্রদায়ের মানুষের দিনযাপনের খণ্ড কাহিনি। সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করেন হরেক কিসিমের পর্যটকের চরিত্র। বিস্তারিত হয় শরণার্থীশিবির, মরুচারীদের গ্রাম বা বেসক্যাম্পের বিষয়-আশয়। পরিশেষে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি-সংলগ্ন লাভাহ্রদের পাড়ে রাত্রিযাপনের ঘটনাও পাঠকদের আগ্রহী করে তোলে।
আফ্রিকার ছােট্ট রাজ্য লিসােটোতে বেড়াতে গিয়ে রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করতে না পেরে লেখক ম্যাডলক সাহেবের কটেজে আশ্রয় নেন । কথাবার্তায় জানতে পারেন, ম্যাডলক যে সুদর্শনা নারীর জন্য শৌখিন কটেজ তৈরি করেছিলেন, সে তাকে ত্যাগ করে ঘর বেঁধেছে এ কটেজের স্থপতির সঙ্গে। পাঠকদের সঙ্গে লেখক পরিচয় করিয়ে দেন তাঁর এইডসগ্রস্ত গাইডের। স্বভাবে কবিয়াল মানুষটি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে মৃত্যুর। বর্ণনা করেন ব্ল্যাকম্যাজিকের। জাদুটোনায় ব্যবহারের জন্য শ্বেতীগ্রস্ত এক মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নির্মমভাবে কেটে নেওয়ার ঘটনা। অনিরাপত্তায় মানুষটি অনুনয় করে তাকে যেন কারাগারে পােরা হয়। এক জমানায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছিলেন শরীরের তীব্র আবেদন ছড়ানাে এক রূপসী। এ যাত্রায় পাঠকও লেখকের সঙ্গে সেই রূপসীর তালাশ করেন। তাঁর দেখা পান উপত্যকার নিভৃত এক কুটিরে। বাশক্তিহীন স্ট্রোকে জর্জরিত মহিলা সেখানে একাকী বাস করছেন। কাউকে দেখাতে চান না তার মুখাবয়ব, তাই তিনি মুখে তুলে নিয়েছেন মুখােশ। লেখক মঈনুস সুলতানের অতুলনীয় বর্ণনায় পাঠক নানা ধরনের মানুষের দেখা পাবেন এবং উপভােগ করবেন তাদের বিচিত্র দিনযাপন।