বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর শিল্পায়নের পথে জাপানের গর্বিত অগ্রযাত্রার শুরু। এই অগ্রগতির রহস্য বুঝতে জাপান দেশটিকে ও তার জনমানসকে নিবিড়ভাবে চেনা ও বোঝা দরকার। এ বইয়ে লেখক মনজুরুল হক তাঁর দীর্ঘ জাপানবাসের অভিজ্ঞতার আলোকে সেই চেষ্টাই করেছেন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে জাপান হূদয়ের খুব কাছের দেশ হলেও, তার প্রকৃত পরিচয় যেন অনেকটাই আড়ালে ঢাকা। এর কারণ সম্ভবত জাপান সম্পর্কে বাংলা ভাষায় লেখা বইয়ের তুলনামূলক ঘাটতি। বিংশ শতাব্দীর মধ্য-পাঁচের দশক থেকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর শিল্পায়নের পথে দেশটির গর্বিত অগ্রযাত্রার শুরু। তবে অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই প্রবাহের নিচে জাপানের সাহিত্যিক, শৈল্পিক ও নান্দনিক উত্কর্ষ এবং আধ্যাত্মিক আবেদনের ধারাটি চাপা পড়েনি। এমন যে জাপান, সেই জাপানকে ভালোভাবে বুঝতে হলে দরকার তাকে অতি কাছ থেকে সুনিবিড়ভাবে দেখা ও তার ভেতরের সৌন্দর্যের অনুসন্ধান করা। জাপানে তাঁর দীর্ঘ প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে এ বই লিখতে গিয়ে লেখক মনজুরুল হক সেই চেষ্টাই করেছেন। সুযোগ হয়েছে তাঁর সে দেশের সব কটি জেলা সফরের। দেশটির নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। সে তালিকায় যেমন আছেন দেশটির সম্রাট, তেমনি পার্ক কিংবা রেলস্টেশনে কার্ডবোর্ডের বাক্সে সংসারজীবন যাপন করা গৃহহীন মানুষ। সমৃদ্ধ সেই অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে জাপানে তাঁর বসবাসের প্রথম দেড় দশকের নির্যাস লেখক তুলে ধরেছেন এ বইয়ে। একবার পড়তে শুরু করলে পাঠক একনিশ্বাসে তা শেষ না করে থাকতে পারবেন না।
সুদূর অতীত থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত হজযাত্রার অভিজ্ঞতা, যাত্রাপথের বর্ণনা এবং পবিত্র স্থানগুলো সম্পর্কে ঐতিহাসিক বিবরণ, বিভিন্ন যুগের হজযাত্রীদের স্মৃতিকথা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। হাজার বছর ধরে মানুষ পায়ে হেঁটে ও উটের পিঠে চড়ে, পরে জাহাজ, রেল আর এখন বিমানযোগে হজব্রত পালন করে আসছে। একসময় পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছ থেকে একরকম চিরবিদায় নিয়ে হজে যাওয়া হতো। জীবনের মায়া তুচ্ছ করে দীর্ঘ, দুর্গম ও বিপত্সংকুল পথ পাড়ি দিয়ে ছিল এই যাত্রা। পৃথিবীর একেক প্রান্ত থেকে একেক পথে এই যাত্রায় কত বিচিত্র অভিজ্ঞতাই না সঞ্চিত হয়েছে মানুষের, যুগে যুগে। প্রাচীনকাল থেকে সাম্প্র্রতিক সময় পর্যন্ত সেই যাত্রাপথের বিবরণ এবং পুণ্যপথের যাত্রীদের অভিজ্ঞতা এই বইতে তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের পবিত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আরব দেশে যাতায়াতের স্মৃতি এবং সেখানকার পবিত্র স্থানগুলোর ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা নিয়ে লিখিত বইটি পাঠকের অন্তর্লোককে আলোকিত করবে।
আশির যখন জাপানে পড়তে গিয়েছিল ও তখন ছাত্র। পুরো আলাদা একটা সংস্কৃতিক থেকে সেখানে গিয়ে সে দেশের নানা কিছু দেথে ও স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত ঢঙে লেখা এই বইয়ের ছোট ছোট রচনাগুলো ওর সেই অবাক হওয়ার গল্প। জাপানি জীবনের নানা ব্যাপার দেখে ও একাই শুধু অবাক হয়েছে তা নয়, ওর স্বাদু চিত্তাকর্ষক আর আমেজি লেখার মৌতাতে পাঠক হিসেবে আমরাও যেমন কিছুটা অবাক হয়েছি। লেখাগুলো ছোট মজাদার বুদ্ধিদীপ্ত ও গতিশীল। বিচিত্র তথ্যে ভরা। লেখার এই প্রসাদগুণ দিয়ে আশির ছোট ছো বেশকিছু মানবিক গল্পের পাশাপাশি জাপানি জীবনের নানা পরিচয়- ওখানকার মানুষের আত্মহত্যা, তাদের ভূতে বিশ্বাস, ফিউনারালের পরিপাটি ব্যবস্থা, শ্মশান, কাস্ট সমস্যা, কুসংস্কার, সামাজিক শিক্ষা, ভাষা, মিডিয়া- এমনি হরেক বিষয়কে রমণীয় করে তুলেছে। দেশটিকে ও টুরিস্টদের মতো বাইরে থেকে দেথেনি- দেখেছে একজন বিদেশি হিসেবে যে বহুদিন সে দেশে থাকতে থাকতে নানা বাস্তব ও মানবিক অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে। এ বই তারই উষ্ণ সজীব বিবরণ। এজন্যে বইটিতে জাপানের অন্তর্জীবনের খবর মেলে। বছর আট-দশ আগে জাপানে বেড়াতে গিয়ে আমি ওদেশের ওপর একটা ভালো বই নিয়ে এসেছিলাম। কিন্ত বইটি পড়ে জাপানকে যেন জেনেছি তার চেয়ে বেশি। এর কারণ এ গল্প জাপানের একেবারে ভেতরের গল্প। লেখকের ব্যক্তিগত রসবোধ, চাউনি, বর্ণনাভঙ্গি একে প্রাণবন্ত করেছে। বইটি আমাকে জাপানের বাসিন্দা করে তুলেছে। পড়ার সময় মনে হয়েছে সব পাঠকেরই হয়তো তাই মনে হবে। -- আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ
আমেরিকান ভ্রাম্যমান সাংবাদিক কার্ল হফম্যান। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে খবর-প্রতিবেদন তৈরি করেন। আফ্রিকার কঙ্গোতে একটা প্রতিবেদন করতে গিয়ে ওখানকার আভ্যন্তরিন প্লেনে চড়ার ভি অভিজ্ঞতা হয়। তারপর ঝোঁকের বশে তৃতীয় বিশ্বের তাবৎ গণ-পরিবহণগুলোর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র তুলে ধরতে পরিবার-পরিজন ফেলে ঘর ছাড়েন। সেই সুবাদে কিউবা থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা হয়ে এশিয়ার কয়েকটা দেশে ঘুরে বেড়ান। সব দেশের সাধারণ জনগণ প্রিয়জনের টানে, জীবিকার সন্ধানে নূন্যতম নিশ্চয়তার কথা ভুলে মারাত্মক বিপজ্জনক এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ বাস-ট্রাক-লঞ্চ- হাওয়াই জাহাজে চড়তে বাধ্য হয়। কার্লও সবার মতো একই যানবাহনে চড়ে এক চরম অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে নিতে বাংলাদেশে এসে পৌঁছান। সদরঘাট থেকে রকেট ইষ্টিমারে করে খুলনায় গিয়ে কয়েকদিন ঘুরেছেন। লঞ্চে করে চাঁদপুরে যাবার পথে ফেরদৌসের সাথে পরিচয় হয়। বাংলাদেশিদের আতিথেয়তায় অভাবনীয়ভাবে মুগ্ধ হয়ে যান। সব অভিজ্ঞতার ফসল একত্র করে লুনাটিক এক্সপ্রেস' বইটায় তুলে ধরেন। আমার অনভিজ্ঞ হাতের অনুবাদে আপনাদের সাথে তাঁর অভিজ্ঞতাটা ভাগ করতে নাম দিয়েছি— খ্যাপার অভিযাত্রা। তাহলে চলুন, কার্ল ভাইয়ের সাথে আমরাও ফেরদৌসের উঠোনে বসে ডাবের পানি পান করতে করতে একটু জিরিয়ে নেই, আভিখোর স্বাদ নেই। পৃথিবীটা একটু অন্য চোখে দেখি, ঘুরে আসি.....
দানাকিল ডিপ্রেশনে আগ্নেয়গিরির লাভালিপ্ত নিসর্গের বিবরণের সঙ্গে লেখক যুক্ত করেন স্থানীয় আফার সম্প্রদায়ের মানুষের দিনযাপনের খণ্ড কাহিনি। সমান্তরালভাবে উপস্থাপন করেন হরেক কিসিমের পর্যটকের চরিত্র। বিস্তারিত হয় শরণার্থীশিবির, মরুচারীদের গ্রাম বা বেসক্যাম্পের বিষয়-আশয়। পরিশেষে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি-সংলগ্ন লাভাহ্রদের পাড়ে রাত্রিযাপনের ঘটনাও পাঠকদের আগ্রহী করে তোলে।