×
Categories
আমার লেখালেখিতে কিছু শাখা-উপশাখা তৈরি হয়েছে। একটি প্রধান শাখা— হিম’ বিষয়ক রচনা। আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়, হিমুটা আসলে কে ? আপনি নিজেই কি হিমু ? আমি কখনাে বলেছি—হা; কখনাে বলেছি—না। আবার কখনাে বলেছি—অর্ধেক হিমু অর্ধেক মিসির আলি । সবই পাশ কাটানাে উত্তর। পাশ কাটানাের প্রধান কারণ প্রশ্নের উত্তর আমার নিজেরই জানা ছিল না। এক সন্ধ্যাবেলায় আমি নুহাশপল্লীর পুকুরঘাটে বসে আছি। নিজের হাতে লাগানাে ঝাউগাছের সারি মাথাচাড়া দিয়ে আকাশে উঠে গেছে—এই দৃশ্য দেখে খুব মজা পাচ্ছি এবং মনে মনে ‘হিমু' বিষয়ক একটা রচনা নিয়ে ভাবছি। নিজেকে কল্পনা করছি হিমু হিসেবে। আমার গায়ে তখন সত্যি সত্যি হলুদ পাঞ্জাবি এবং পা খালি। হিমু হবার জন্যে পা খালি না। কাদায় স্যান্ডেল পরে হাঁটা মুশকিল বলে পা খালি। হাওয়ায় ঝাউগাছের পাতায় অদ্ভুত শব্দ হচ্ছে। আমি ভাবছি, ঝাউগাছের পাতার শব্দকে হিমু কীভাবে বর্ণনা করত ? সে কী বলত—পাতার কান্না, নাকি পাতার খিলখিল হাসি ? একসময় আমার মনে হলাে। আমি হিমুর মতাে করে ভাবতে পারছি না। আমি ভাবছি আমার মতাে। ছােট্ট নিঃশ্বাস ফেলে ভাবলাম ইশ, এই জীবনে একজন হিমুর দেখা যদি পেতাম! চিন্তার এই পর্যায়ে হঠাৎ আমি একটু কেঁপে উঠলাম। আমার কাছে মনে হলাে, আরে আমি হিমু খুঁজছি কেন ? আমি তাে বড় হয়েছি একজন হিমুর ছায়ায়। এই হিমু একজন পুলিশ অফিসার। তিনি খাকি পােশাক পরতেন এবং বুটজুতা পরতেন। এই হিমু আমার বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ। আমার দেখা প্রথম হিমু সম্পর্কে একটা ছােট্ট গল্প বলি। আমি তখন ঢাকা কলেজে পড়ি। বাবা আমাকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যাবেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে রওনা হয়েছি। ভৈরববাজার রেলস্টেশনে ট্রেন বদল করতে হবে। প্ল্যাটফরমে দুজন বসে আছি। বাবা মিষ্টিওয়ালার কাছ থেকে দুটা মিষ্টি কিনে আমাকে খেতে দিলেন। শালপাতার ঠোঙ্গায় মিষ্টি। আমি খুব আগ্রহ করে মিষ্টি দুটা খেলাম। শালপাতার ঠোঙ্গা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ছয়-সাত বছরের একটা ছেলে ছুটে এসে ঠোঙ্গাটা হাতে নিয়ে চেষ্ট খেতে শুরু করল। খুবই সাধারণ দৃশ্য। বাবা এই দৃশ্যটা দেখে আর দল হৃদয়বান মানুষ যা করে তাই করলেন। ছেলেটাকে দু’টা মিষ্টি কিনে খে দিলেন। ঘটনা এইখানেই শেষ হয়ে যেতে পারত। শেষ কিন্তু হলাে না। ছেলে যতক্ষণ মিষ্টি খেল তিনি ততক্ষণই গভীর মমতায় ছেলেটার মাথায় হাত বুলি দিতে লাগলেন। এক সময় বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, বাবার চোখ ভিজে আসছে। একজন বয়স্ক মানুষ যদি ছেলের সামনে কেঁদে ফেলেন তাহলে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে— এই ভেবে আমি অতি দ্রুত স্থান ত্যাগ করলাম। অনেক দিন পর বাবার এই গল্পটা লিখতে গিয়ে আমার নিজের চোখে পানি আসছে। আমার এই চোখের পানি সেদিনের আমার বাবার চোখের পানির মতাে পবিত্র না। এইটাই সমস্যা। এই একটি বিষয়েই হিমুরা অন্যসব মানুষদের চেয়ে আলাদা। হিমু হবার জন্যে হলুদ পাঞ্জাবি লাগে না। চোখের জল লাগে। হুমায়ূন আহমেদ। নুহাশ পল্লী, গাজীপুর।
SKU: ANYP88
Old price: 800.00৳
680.00৳
Supported cards
Supported cards
Titleনির্বাচিত হিমু
Author
Publisher
ISBN
9848682023
Edition3th Printed, 2012
Number of Pages543
Countryবাংলাদেশ
Languageবাংলা

নির্বাচিত হিমু - হুমায়ূন আহমেদ

Old price: 800.00৳
680.00৳
Picture of Support | +8809613717171

Support | +8809613717171

24 Hours a Day, 7 Days a Week

Picture of Happy Return Policy

Happy Return Policy

All over Bangladesh

Picture of Worldwide Shipping

Worldwide Shipping

We Deliver Product All Over the World

Picture of Fastest Delivery

Fastest Delivery

Own Distribution Channel