‘অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ রাজনৈতিক দিক থেকে জন্মলগ্নে বাংলাদেশ ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দুর্বার, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত একটি দেশ । আর অর্থনৈতিক দিক থেকে ছিল একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও সমস্যা- জর্জরিত রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানে দেশটিতে সুশাসনের প্রকট ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমাপে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন। এই বইয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের বিশ্লেষণ এবং তা থেকে উত্তরণের পথ সন্ধান করা হয়েছে। রাজনৈতিক সমস্যার সামাধান দেওয়া এ বইয়ের উদ্দেশ্য নয় । আর কোনো একটি গবেষণাকর্মে তা সম্ভবও নয়। মূলত রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু করার তাগিদই বইটি লেখার পেছনে কাজ করেছে। আর সে বিতর্ক যাতে যুক্তির পথে পরিচালিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় মালমসলা বা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে এ বইয়ে। বইটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর রচনাশৈলী। একটি নির্ভেজাল গবেষণাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে অনেকটা রম্যরচনার ঢঙে। ফলে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে যাঁদের তেমন মাথাব্যথা নেই, এমনকি তাঁরাও এ বই পড়ে আনন্দ লাভ করবেন।
বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতি গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরীর ১৪৫টি লেখা সন্নিবেশিত হয়েছে। বিষয়-অনুযায়ী লেখাগুলােকে আটটি পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন, প্রসঙ্গ বঙ্গবন্ধু, প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা, ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ, স্মৃতিচারণ, বাংলাদেশের রাজনীতি, বিশ্বরাজনীতি, প্রসঙ্গ করােনা ইত্যাদি। এই লেখাগুলােতে লেখকের পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও মতামত প্রকাশিত হয়েছে। বস্তুত আটটি পর্ব নিয়ে পৃথক পৃথক গ্রন্থই প্রকাশ করা যেতাে, কিন্তু পাঠকের কথা চিন্তা করেই এক গ্রন্থে এতগুলাে বিষয়কে স্থান দেওয়া হয়েছে। এ গ্রন্থের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলাে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিশদ আলােচনা। এ ছাড়া ‘ভাষা-আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি যেসব সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন সেগুলােও অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে যে-চারটি লেখা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেই লেখাগুলােতে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র তাে বটেই আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতি-প্রকৃতিও উপস্থাপিত হয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মহান স্থপতি। তাঁরই নেতৃত্বে পরাধীন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বঙ্গবন্ধু বাংলা ও বাঙালির অধিকার আদায়ে আপসহীন ছিলেন। তাঁর দৃঢ়তা, বাগ্মিতা ও সাহসিকতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তাে বটেই, সারা বিশ্বেই এক বিরল ঘটনা। আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাহিত্যিক। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানাে একুশে ফেব্রুয়ারি অমর একুশের স্মৃতি জাগানিয়া এই গানটি তারই রচিত । আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। বহুদিন তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থেকে বঙ্গবন্ধুর অনেক স্মৃতির সাক্ষী হয়েছেন। 'মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ গ্রন্থে আবদুল গাফফার চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর একটি নিরপেক্ষ মূল্যায়ন করেছেন। ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধুর তুলনামূলক বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে এই গ্রন্থে। ‘বঙ্গবন্ধু : মধ্যরাতের সূর্যতাপস’ একটি দ্বিভাষিক গ্রন্থ। বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায়ও বইটি এক মলাটে বন্দী করা হলাে। এর ফলে শুধু বাংলাভাষী পাঠক নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষও বইটি পড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে জানতে-বুঝতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক। তিনি আমাদের চেতনার বাতিঘর। যত দিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা বাঙালি জাতির সামনে থাকবে তত দিন এ জাতি দিকভ্রষ্ট হবে না।