‘অবাক বাংলাদেশ বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ বইয়ের ফ্ল্যাপের কথাঃ রাজনৈতিক দিক থেকে জন্মলগ্নে বাংলাদেশ ছিল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে দুর্বার, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত একটি দেশ । আর অর্থনৈতিক দিক থেকে ছিল একটি দারিদ্র্যপীড়িত ও সমস্যা- জর্জরিত রাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করেছে। অথচ আন্তর্জাতিক মানে দেশটিতে সুশাসনের প্রকট ঘাটতি রয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমাপে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন। এই বইয়ে অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের বিশ্লেষণ এবং তা থেকে উত্তরণের পথ সন্ধান করা হয়েছে। রাজনৈতিক সমস্যার সামাধান দেওয়া এ বইয়ের উদ্দেশ্য নয় । আর কোনো একটি গবেষণাকর্মে তা সম্ভবও নয়। মূলত রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু করার তাগিদই বইটি লেখার পেছনে কাজ করেছে। আর সে বিতর্ক যাতে যুক্তির পথে পরিচালিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় মালমসলা বা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে এ বইয়ে। বইটির প্রধান আকর্ষণ হলো এর রচনাশৈলী। একটি নির্ভেজাল গবেষণাগ্রন্থ লিখিত হয়েছে অনেকটা রম্যরচনার ঢঙে। ফলে রাজনৈতিক সংস্কার নিয়ে যাঁদের তেমন মাথাব্যথা নেই, এমনকি তাঁরাও এ বই পড়ে আনন্দ লাভ করবেন।
চট্টগ্রাম সফরকালে বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তাদের হাতে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নিহত হওয়া এবং এর পরপরই আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল মঞ্জুরকে গ্রেপ্তার ও নির্মম হত্যার ঘটনা এ বইয়ের মূল বিষয়। জিয়া হত্যার দায়ে সংক্ষিপ্ত সামরিক আদালতের রায়ে যাঁদেরকে দোষী সাব্যস্ত ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, কেবল তাঁরাই কি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন? সাত্তার সরকারের গঠিত সেনা ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে কি প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এসেছিল? জেনারেল মঞ্জুর কি আসলেই চট্টগ্রামের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন? নাকি ষড়যন্ত্রের শিকড় ছিল আরও গভীরে? আমাদের কাছে ইতিহাসের এই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহের অনেক কিছুই আজও অনুদ্ঘাটিত। ঘটনার সময় এ বইয়ের লেখক ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। কাছ থেকে অনেক কিছু জানার, অনুসরণ করার সুযোগ হয় তাঁর। লেখকের অভিজ্ঞতার বিবরণসংবলিত এ বই অনুসন্ধানের নতুন জানালা খুলে দেবে।
১৯৭৫ সাল বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক অস্থির সময়। বাকশাল গঠন, সেনা অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধুর সপরিবার নির্মমভাবে নিহত হওয়া, নভেম্বরে আবার সামরিক অভ্যুত্থান, জাতীয় চার নেতার হত্যা, পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান—সব মিলিয়ে বছরটি ছিল বাংলাদেশের একটি গভীর সংকটের কাল। এত অল্প সময়ে এত সব তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর ঘটেনি। ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা হয়েছে অনেক। কিন্তু কোথাও এই সময়ের একটি পুরো চিত্র পাওয়া যায় না। এ বইয়ে ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ ও মতামত তুলে ধরা হয়েছে। সঙ্গে আছে দেশি ও বিদেশি নানা দলিল। সংশ্লিষ্টদের জবানবন্দি, সাক্ষাৎকার ও কাছ থেকে দেখা ব্যক্তিদের স্মৃতিকথা হিসেবে লেখাগুলো বহু সময় ধরে বহু চেষ্টায় সংগ্রহ করা হয়েছে। পঁচাত্তরের অস্থির সময়ের পুরো চিত্র তুলে ধরেছে এ বই।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় ইতিহাসের শোকাবহ রক্তরঞ্জিত দিন। দেশের পরবর্তী ইতিহাসের ওপর এর প্রভাব গভীর ও সুদূরপ্রসারী। সে সম্পর্কে বিশদ তথ্যাদি আজও পুরোপুরি উদ্ঘাটিত হয়নি। ১৫ আগস্টের ঘটনার পূর্বাভাস দেশি-বিদেশি কোনো সূত্রে পাওয়া গিয়েছিল কি না, বঙ্গবন্ধু নিজে সে সম্পর্কে কতটা অবহিত ছিলেন কিংবা তিনি বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছিলেন—সাংবাদিক, কূটনীতিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের রচনা ও সাক্ষাৎকার থেকে তা আজ ক্রমপ্রকাশমান। বইটিতে সংকলিত স্মৃতিকথা, দলিল ও গবেষণাধর্মী রচনার মাধ্যমে ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ও পূর্বাপর ঘটনাসম্পর্কিত তথ্য এবং সত্যের সঙ্গে পাঠকের পরিচয় ঘটবে। আগস্ট ট্র্যাজেডি সম্পর্কে মতামত ও বিশ্লেষণধর্মী রচনা এ বইকে অমূল্য করেছে।