বিজ্ঞানকে সামগ্রিকভাবে যতই দেখেছি ততই একে একটি ব্যতিক্রমী মহাকাব্যের মত মনে হয়েছে। বিজ্ঞানের সঙ্গে কাব্যের মিলটি খুঁজে পাই উভয়টিতেই কল্পনার ও সৃষ্টিশীলতার গুরুত্ব থাকার মধ্যে- যদিও উদ্দেশ্য আলাদা। বিজ্ঞানের নানা তত্ত্বের উদাহরণে আমরা দেখবো বিজ্ঞান কেন মহাকাব্যিক। মহাকাব্যের পরিধি বড়,তার সবকিছুই বড় বড় মানুষ,বড় নীতি,বড় সাধনা বড় যুদ্ধ,বড় হতাশা,বড় ট্র্যাজেডি। নানা খণ্ডে এলেও বিজ্ঞানও আসলে একটানা একটিই কাহিনী,যার শেষ নেই। এক প্রান্তে ক্ষুদ্রতম মৌলিক কণিকা ও অন্য প্রান্তে সর্ব-সমষ্টি প্রসারমান বৃহৎ মহাবিশ্বকে নিয়ে পরম বাস্তবতার এই কাহিনী,যার সবকিছুর সঙ্গে সবকিছু সাযুজ্যপূর্ণ হতে হয়। বিজ্ঞানীর ভাবনায় তৈরি তত্ত্ব আর বাস্তবের কষ্টিপাথরে পরীক্ষা- এই দুইয়ের যুগলবন্দীতে ক্রমান্বয়ে চলে বিজ্ঞানের সঙ্গীত,যা প্রকৃতির চরম জটিলতার মধ্য থেকে সরল ও সুন্দর নিয়ম নিংড়ে আনতে পারে । বৈজ্ঞানিক কল্পনায় সৃষ্ট কণিকা,তরঙ্গ,চার্জ ইত্যাদির মত একই অদৃশ্য জিনিস যখন এক চাবিতে শত দরজা খোলার মত প্রকৃতির সব দিকের দৃশ্যমান বাস্তবের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে তখন সেই কল্পিত চাবিকেও বাস্তব বই অন্যকিছু ভাবার সুযোগ রাখেনা। সেই সঙ্গে এই মহাকাব্য জীবনকে সচ্ছন্দ করার জন্য নিত্য নতুন প্রযুক্তিরও সৃষ্টি করছে। এই মহাকাব্যের লেখক-পাঠকদের নিয়ে বিশ্ব-বিজ্ঞান-সমাজই পারে সেই প্রযুক্তিকে কল্যাণকর রাখতে।