আনোয়ারা সৈয়দ হকের গল্পগুলোতে উঠে এসেছে মানবজীবনের বিচিত্র দিক। মানুষের জীবনে প্রেম আসে। আসে দুঃখ, নানা সমস্যা-সংকট। আর এসব বয়ে ও সয়েই বেঁচে থাকতে হয় মানুষকে। গ্রন্থভুক্ত কোনো কোনো গল্পের আত্মজৈবনিক অনুষঙ্গ পাঠককে নিয়ে যাবে গল্পকারের নিজের অভিজ্ঞতার গভীরে। পাশাপাশি সমাজে নারীর ভঙ্গুর অবস্থান ও সংগ্রামের অন্তর্জগৎও উঠে এসেছে কোনো কোনো গল্পে। করোনা অতিমারির কালে মানুষের জীবন হয়ে পড়েছিল বিপর্যস্ত। এ সময় আমরা হারিয়েছি আমাদের নিকট ও ঘনিষ্ঠ অনেককে। এক ভীতিকর পরিবেশের মুখোমুখি হয় সবাই। প্রিয়জনকেও তখন ছঁুয়ে দেখতে পারে না। অংশ নিতে পারে না তার অন্তিম যাত্রায়। সাংসারিক টানাপোড়েন, মৃত্যুশোক, না পাওয়ার বেদনা—এগুলো কি মানুষ কখনো কাটিয়ে উঠতে পারে? সব সংকট উতরে কি শেষ পর্যন্ত গাওয়া যায় জীবনের জয়গান? এককথায় বলা যায়, জীবনসংশ্লিষ্ট এসব বিষয় নিয়েই এই বইয়ের গল্পগুলো।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সম্পূর্ণরূপে অনালোচিত অধ্যায় ১৯৭১ সালের ৫ ও ৬ জুলাই অনুষ্ঠিত শিলিগুড়ি সম্মেলন। এই সম্মেলন অনেক বিভ্রান্তি দূর করে যুদ্ধের সময় অনুসরিীত নীতি প্রণয়নে সহায়তা করে। এই সম্মেলন নিয়ে আসে সংহতি, ত্বরান্বিত করে পরিকল্পিত যুদ্ধ এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যায় দ্রুত বিজয়ের দিকে। কিন্তু অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনের বিস্তারিত বিবরণ ও দাপ্তরিক কার্যপ্রণালি কোথাও সংরক্ষণ করা হয়নি। প্রথমা প্রকাশিত 1971: The Siliguri Conference বইটিতে প্রথমবারের মতো সম্মেলনের সময় অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কার্যপ্রণালি এবং অনানুষ্ঠানিক আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকাশিত হয়। সঙ্গে ছিল বিশদ ভূমিকা। এই বই সেই ঐতিহাসিক দলিলের নির্ভরযোগ্য সুসম্পাদিত বাংলা অনুবাদ।
বরিশালের নদী, জোনাকি ছেড়ে তাঁকে পা রাখতে হয়েছে আদিম সাপের মতো ছড়িয়ে। থাকা কলকাতার ট্রামলাইনের ওপর । পৃথিবীর দিকে তিনি তাকিয়েছেন বিপন্ন বিস্ময়ে । বলেছেন সন্ধ্যায় সব নদী ঘরে ফিরলে থাকে অন্ধকার এবং মুখোমুখি। বসবার নাটোরের এক নারী। জানিয়ে দিয়েছেন জ্যোৎস্নায় ঘাই হরিণীর ডাকে ছুটে আসা, শিকারির গুলিতে নিহত হরিণের মতো আমরা সবাই। সস্তা বোর্ডিংয়ে।উপার্জনহীনভাবে দিনের পর দিন কুঁচো চিংড়ি খেয়ে থেকেছেন। তবু পশ্চিমের মেঘে দেখেছেন সোনার সিংহ। পিপড়ার মতো গুটি গুটি অক্ষরে হাজার হাজার পৃষ্ঠা। ভরেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ডায়েরি লিখে। সেগুলোর সামান্য শুধু জনসমক্ষে এনেছেন জাদুকরের রুমালের মতো, বাকিটা গোপনে তালাবন্দী করে রেখেছেন কালো ট্রাঙ্কে। বাংলা সাহিত্যের প্রহেলিকাময় এই মানুষ জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে এক নিবিড় বোঝাপড়ায় লিপ্ত হয়েছেন এ সময়ের। শক্তিমান কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামান তার। একজন কমলালেবু উপন্যাসে।
যে সীমাহীন ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছিল,তা মানুষের মনে কী স্বপ্ন জন্ম দিয়েছিল, বাস্তবে তাঁরা কী পেলেন, এবং কোন আদর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নির্মিত হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত কোন পথে গেল সেই বাংলাদেশ- সে সম্পর্কে নিরপেক্ষ ইতিহাস দুর্লভ। এ বইতে লেখক মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপরের বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি সঠিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
এ বই তাজউদ্দীন আহমদের কাছে লেখা ও তাঁর লেখা চিঠির সংগ্রহ। প্রথম চিঠিটি ১৯৫৩ সালের। এরপরের চিঠিগুলো ১৯৫৫, ১৯৬৬-৬৭ ও ১৯৭১ এবং তার পরবর্তী সময়ের। চিঠিগুলোর মধ্যে রয়েছে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের পরিক্রমা আর একটি জাতির রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্বের ইতিহাস। একাত্তরে যুদ্ধের দিনগুলোতে বিশাল দায়িত্ব নিয়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। কর্মযোগী মানুষটির কাছে প্রতিদিন অজস্র চিঠি আসত। যুদ্ধ সংগঠনের কত বিচিত্র প্রয়োজনের কথা সেই সব চিঠিতে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা প্রতিটি চিঠি পড়ে জরুরি চিঠিগুলোর উত্তর দিতেন। সংরক্ষণ করতেন সব চিঠি। আর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠিয়ে দিতেন সংশ্লিষ্ট বিভাগে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে বিদেশে নানাজনের কাছে লিখতেন। আবার সমান গুরুত্ব দিয়ে উত্তর দিতেন ছোট্ট শিশুর চিঠিরও। চিঠিগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য দলিল।
তিমি ও ডলফিন প্রাণিজগতের এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। বৈজ্ঞানিক তথ্যের মিশেলে রহস্যভরা তিমি ও ডলফিনের গল্প-কাহিনি নিয়ে এমন বই বাংলাদেশে এটিই প্রথম। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মনে নির্মল আনন্দ জোগানোর পাশাপাশি তাদের জানার পরিধিকেও বাড়িয়ে তুলবে এই বই। প্রাণিজগতে তিমি ও ডলফিন অনন্য বৈচিত্র্যের অধিকারী। এরা আমাদের মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী কিন্তু বাস করে পানির গহিন অন্ধকারে। ফলে অধিকাংশ সময় এরা থাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এদের সম্পর্কে মানুষের জানাশোনা যেমন অল্প তেমনি বিজ্ঞানীরাও এদের সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি জানতে পারেননি। এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার নদ-নদীতে বাস করে আকর্ষণীয় কয়েক প্রজাতির ডলফিন। আচার-আচরণ ও জেলেদের সঙ্গে এদের বিশেষ সম্পর্ক রূপকথা, পুরাকাহিনি ও লৌকিক গল্পগাথায় স্থান করে নিয়েছে। অন্যদিকে মেরুদেশের গভীর হিমশীতল জলরাশিতে বাস করে দৈত্যাকার রহস্যময় নানা জাতের তিমি ও ডলফিন। মেরুবাসী এস্কিমো ও ইনুয়িত উপজাতির সঙ্গে এদের রয়েছে জীবন-জীবিকার সম্পর্ক। অতীতে মুনাফালোভী শিকারিরা এদের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। রহস্যময় এই সামুদ্রিক প্রাণী দুটি সম্পর্কে নানা বৈজ্ঞানিক তথ্যসহ অনেক জটিল কিন্তু কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় গল্পাকারে লেখক এ বইয়ে তুলে ধরেছেন। কিশোর-তারুণসহ সব বয়সী পাঠকের মধ্যে তিমি-ডলফিন সম্পর্কে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করবে বইটি।